নিন্দার চেয়ে গঠনমূলক সমালোচনাই শ্রেয়

শিউলী নাথ | মঙ্গলবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

‘সবাই মোরে ছাড়তে পারে, বন্ধু যারা আছে,/ নিন্দুক সে ছায়ার মত থাকবে পাছে পাছে’- কবিগুরুর এই লাইনদ্বয় থেকে বোঝা যায়, সাধারণ কিংবা অসাধারণ কেউই নিন্দার ঊর্ধ্বে নয়। কোনো কাজে স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি উভয়ের জন্য হয় সমালোচনা নয়তো নিন্দার বড় ভূমিকা রয়েছে। ‘সমালোচনা’ শব্দটি সম্যক আলোচনা বা সমান আলোচনাকে বোঝায়। অর্থাৎ কাজের গুণ কিংবা দোষ দুই-ই সমানভাবে বাছ-বিচার করা। তাই সমালোচনাতে তেমন সমস্যা নেই। কথিত আছে- যিনি সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, তিনি স্বাভাবিক মানুষ নন। অনেক ব্যক্তি আছেন যারা সমালোচনা খুব পছন্দ করেন। তারা মনে করেন সমালোচনার মাধ্যমে কাজের পরিপূর্ণতা আসে। এ, পি, জে আব্দুল কালাম বলেছেন, ‘কেউ যদি তোমাকে সন্দেহ করে দুঃখ পাবে না। মনে রাখবে সবাই সোনা বা হীরাকে সন্দেহ করে যে এটা আসল নাকি। কিন্তু লোহাকে কেউ সন্দেহ করে না’। সমালোচনা গ্রহণ করার ব্যাপারটি অনেকটা সেরকমই।
ব্যক্তিগত সমালোচনার চেয়ে আত্মসমালোচনা হলো উৎকৃষ্ট। নিজের সমালোচনা নিজে করার ফলে যে অনুতাপের সৃষ্টি হয়, ফলে পরবর্তীকালে ঐ ভুলগুলো এড়িয়ে চলা সম্ভব। কিন্তু ব্যক্তি সমালোচনা অসুস্থ মানসিকতার লক্ষণ। কিছু ব্যক্তি অন্যকে ছোট করে নিজের কৃতিত্ব বৃদ্ধির জন্য এই সমালোচনা করে থাকেন। তবে সত্যি বলতে মানুষকে জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে সমালোচিত হতেই হয়। সেটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক না হয়ে গঠনমূলক কাজের ক্ষেত্রে হলে খুবই ভালো হয়। সমালোচকের ভাষা অনেক সময় রূঢ় হয়। সমালোচকের ভাষাকে প্রাধান্য না দিয়ে কী বিষয়ে বলছেন সেদিকে খেয়াল দিলে ভবিষ্যতে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা যেতে পারে।
অপরদিকে পরনিন্দার কথা যদি বলি-ধর্মে আছে মদ্যপান, চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার ইত্যাদি থেকেও মারাত্মক ও নিকৃষ্ট হলো পরনিন্দা করা। বিশেষ করে কুৎসা রটানো, পেছনে সমালোচনা করা, পরচর্চা করা, দোষারোপ করা, কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ অন্যের সামনে তুলে ধরা-এগুলো হলো পরনিন্দা। অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ানো মানেই হলো নিজের ধ্বংসকে অভিবাদন জানানো। পরিশেষে বলা যায় বাজে সমালোচনা কিংবা নিন্দাকে প্রশ্রয় না দিয়ে বরং নিজেকে এই ভেবে সান্ত্বনা দিতে হবে–‘কেউ মূল্য দিক আর না দিক তুমি সৎ কাজ করে যাও। কারণ এর প্রতিদান মানুষ তোমাকে দেবে না, দেবে স্বয়ং ঈশ্বর’। (এ পি, জে আব্দুল কালাম)

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষক : জীবনের পাঠদান যাঁর হাতে