নিউটনের কোয়ারেন্টাইনে যেসব আবিষ্কার পেয়েছিল বিজ্ঞান

শেখ বিবি কাউছার | বৃহস্পতিবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ

যিনি না থাকলে বিজ্ঞান আজকের অবস্থানে আসতো না। যিনি না থাকলে আইনস্টাইন তার যুগান্তকারী আবিষ্কার করতে পারতেন না। যার অবদানের জন্যই আজ আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পদার্থবিজ্ঞানের উপস্থিতি খুঁজে পাই। আর তিনি হলেন কালের শ্রেষ্ঠ পদার্থবিদ, গণিতবিদ, প্রাকৃতিক দার্শনিক ও আলকেমিস্ট স্যার আইজ্যাক নিউটন। ১৭২৭ সালের ৩১ মার্চ ৮৫ বছর বয়সে লন্ডনের কেনসিংটনে মারা যান তিনি। আজকের এ দিনে চলুন জেনে আসি তিনি কিভাবে কোয়ারেন্টাইনের সময়টা কাজে লাগিয়ে বিশ্ববাসীকে নতুন নতুন আবিষ্কার উপহার দিয়েছেন। মহামারি করোনা ভাইরাস পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষকে করে ফেলেছিল ঘরবন্দি। বিশ্বের বহু দেশের মানুষ এখন বাড়িতে বসে কাজ করতে অভ্যস্ত। কর্মস্থলে যতোটা মনোযোগ দেয়া যায়, বাড়িতে সবসময় সেটা সম্ভব হয়ে ওঠেনা হয়তো। তবে চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। এমনকি বাড়িতে বসেই করে ফেলা সম্ভব পৃথিবীকে চমকে দেয়ার মতো কোনো কাজ, যেমনটা করেছিলেন আইজ্যাক নিউটন। ১৬৬৫-৬৬ সালে উত্তর ইংল্যান্ডে প্লেগ ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই মহামারির সময় সচেতন মানুষরা নিজেদের ঘরে আবদ্ধ করেছিলেন। আইজ্যাক নিউটনও নিজেকে রেখেছিলেন সেলফ-কোয়ারেন্টাইনে। নিউটনের বয়স তখন ২৩। ক্যামব্রিজের ছাত্র ছিলেন। মহামারি আকারে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়ায় দীর্ঘ ১৮ মাস পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। নিউটন ওলসথর্প ম্যানরে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। সেখানে মোটামুটি গৃহবন্দি অবস্থায় দিন কাটতে থাকে তার। মহামারির এই সময়টা ছিল নিউটনের জন্য আবিষ্কারের বছর। ক্যালকুলাস, অপটিকস এবং গ্র্যাভিটি আবিষ্কারের বছর ছিল সেটা। এই একটা বছর পুরোপুরি কলেজের পড়াশোনা থেকে দূরে সরে থাকতে হয়েছিল নিউটনকে। আর এই সময়েই মহাকর্ষ, গতিসূত্র সহ বিজ্ঞানের একের পর এক যুগান্তকারী অবিষ্কারে ডুবে গিয়েছিল তাঁর মস্তিষ্ক। বাড়িতে বসে বসে প্রথম যে নিবন্ধটি প্রকাশ করেছিলেন নিউটন, তা গণিতে ক্যালকুলাস-এর প্রাথমিক ধারণা তৈরি করে দিয়েছিল। আলোকবিদ্যা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব প্রকাশ করেছিলেন। তবে ওই সময়ে তাঁর আবিষ্কারের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত অবশ্যই মাধ্যাকর্ষণের তত্ত্ব এবং গতিসূত্রের তত্ত্ব। বাড়ির বাগানে বসে চিন্তা করতে করতেই তাঁর মাথায় প্রথম মহাকর্ষের ধারণা আসে। একবছর বাড়িতে থেকে এইসব বিবিধ বিষয়ে যুগান্তকারী সব তত্ত্ব আবিষ্কার করে ১৬৬৭ সালের এপ্রিল মাসে কেমব্রিজে ফিরে এসেছিলেন নিউটন। আর অক্টোবর মাসেই ট্রিনিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কাজেই, যদি করোনাভাইরাস কিংবা ওমিক্রনের কারণে স্কুল, কলেজ, অফিস বন্ধ করে বাড়ি থেকে কাজ করতে হয়, তাহলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কে বলতে পারে পরের নিউটন হয়তো আপনিও হতে পারেন! শুধুমাত্র প্রয়োজন ইচ্ছা, পরিশ্রম ও সময়ের সঠিক ব্যবহার। আর শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য শুধু পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখা নয়, বরং সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে শেখাই হলো শিক্ষা। লেখক : প্রভাষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধঝরা ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ
পরবর্তী নিবন্ধকাল আজকাল