নারী বিষয়ের ওপর বিনিয়োগ করুন : দ্রুত উন্নতি আনুন

ঝর্ণা বড়ুয়া | রবিবার , ১০ মার্চ, ২০২৪ at ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ

৮ই মার্চ ছিল বিশ্ব নারী দিবস। নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৮৫৭ সালে নারী দিবসের সূচনা হয়। তারপর বহু আন্দোলন সংগ্রামের পর জাতিসংঘ কর্তৃক ১৯৭৫ সালের ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে আহবান জানান। এরপর থেকে সারাবিশ্বে যথাযোগ্য মর্যাদায় এই দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়।

বর্তমান শিক্ষা দীক্ষায়, জীবনবোধে, রুচিতে নারীদের অনেক পরিবর্তন এসেছে। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী, সেনাবাহিনী, পুলিশ, পাইলট, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী নানা চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীরা এগিয়ে এসেছেন এমন কি সংসদেও নারী প্রতিনিধিত্ব দিনদিন বাড়ছে। আপাতত দৃষ্টিতে নারীর অগ্রগতি দৃশ্যমান হলেও অগণিত নারী এখনো সমাজে পরিবারে অমানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের বাগযন্ত্র রুদ্ধ, এক ধরনের প্রতিবন্ধী করে পায়ে শিকল বেঁধে আটকে রাখার মতো বন্দী জীবন যাপন করতে হচ্ছে। অনেকটা গৃহস্থালি কাজকর্ম ও সন্তান সন্ততি লালনপালনের নারীকে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব করার অধিকারও নেই। নারী স্বাধীনতা, স্বীকৃতি, গ্রহণযোগ্যতা ও সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা কল্পনাও করা যায় না। একবিংশ শতাব্দীতে এখনো নারীকে শারীরিক ও মানসিক পাশবিক নির্যাতনের শিকার করে হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের দেশে সবসময় ঘরেবাইরে নারীকে অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। এমন কি রান্তাঘাটে হাঁটাচলাতে ইভটিজিং এর বলী হতে হয় স্কুল ছাত্রী থেকে সকল বয়সের নারীদের। নারীর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হলে অনেক সমস্যা কমে আসবে।

নারী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে উদার মনোভাব, ভালোবাসা ও আন্তরিকতার সাথে নারী বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। নারীদের অকপটে কথা বলতে হবে কোনরকম সংকোচ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ত্যাগ করে স্পষ্টভাষী হতে হবে। নারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে জনসচেতনতা মাধ্যমে নারীদের আপন শক্তিতে উজ্জীবিত হতে হবে। প্রথমত শিক্ষার হার বাড়ানো, উচ্চশিক্ষা গ্রহণে অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা, নারী জীবনমান উন্নয়নে সর্বদা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা, নারী সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক সেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা, নারীর আত্মবিশ্বাস ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা, যুক্তিসঙ্গত কথা বলার সাহস অর্জন করা, সঞ্চয়ী ও পরিমিত জীবনবোধে অভ্যস্ত হওয়া, অর্থনৈতিক সফলতা অর্জনে নেতৃত্ব বা ক্ষমতায়ন সহজতর হবে।

কেউ কাউকে ক্ষমতা দিতে চায় না নিজের যোগ্যতা, সাহসিকতা, দৃঢ়তা, ইচ্ছাশক্তি ও অদম্য আত্মমনোবলে নিজেকে এগিয়ে যেতে হবে। নারীর শ্রম বৈষম্যের জন্য দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পরও এখনো বৈষম্যনীতি থেকে মুক্তি আসেনি। নারী পুরুষের সমতা মুখে বললেও সমাজ সমপ্রদায়ের কোথাও তা দৃশ্যপট নেই। কমিটি, সমিতি, সংগঠন কোথাও নারী পুরুষের সমান অংশগ্রহণ দেখা যায় না, খুব হাস্যকর হলেও সত্যি মহিলা সম্পাদিকাপদে শুধু মাত্র একজন নারীকে সম্মানিত করা হয়। যদিও আমি মহিলা শব্দটার ব্যবহার কমিয়ে নারী শব্দটির বহুল ব্যবহার পছন্দ করি। নারী বলতে নিজস্ব সক্রিয়তা ও স্বতন্ত্রতা বুঝায় তা আমাদের নারী নেত্রীদের আগে বুঝতে হবে তারপর প্রয়োগ করা সহজ হবে। নারী সমস্ত প্রতিকূলতাকে মাড়িয়ে দৃঢ় মনোবলে আত্মপরিচয়ে সম্মান ও যোগ্যতা নিয়ে আলো থেকে আলোয় পথে শ্রেষ্ঠত্বের দিকে এগিয়ে যাবেএই অনুপম প্রত্যাশা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজয়তু নারী
পরবর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে