নারী-পুরুষ সবাইকে পরিণত হতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে

| বুধবার , ২ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি চাক্ষুষ করছে সাধারণ জনগণ। এখন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। অর্থনীতিবিদদের মতে, গত দশকে ধীরে ধীরে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সাথে দেশটি ইতিবাচক অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তবে যুবকদের বেকারত্ব যেন আমাদের উন্নতি ও অগ্রগতির পথে কাঁটা না হয়ে দাঁড়ায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নও তরুণদের সম্ভাব্যতা এবং তাদের শ্রমশক্তি ও মেধার বিকাশ এবং কার্যকর ব্যবহারের উপর নির্ভর করবে। কারণ মানবসম্পদ হলো আমাদের উন্নয়নের মূল সম্পদ। তাই এ বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করাই এখন সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩এর এপ্রিলজুন সময়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, বেকারের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। গত এপ্রিলজুন সময়ে সব মিলিয়ে দেশে ২৫ লাখ মানুষ বেকার ছিলেন। এর আগের প্রান্তিকে এই সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। তিন মাসের ব্যবধানে বেকার কমেছে ৯০ হাজার। তাহলে বোঝা যায়, কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে দেশ কিছুটা এগিয়ে গেছে।

বেকার লোকের হিসাবটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী করে বিবিএস। আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ী, গত ৩০ দিন ধরে কাজপ্রত্যাশী একজন মানুষ যদি সর্বশেষ সাত দিনে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টাও কাজ করার সুযোগ না পান, তাহলে তাঁকে বেকার হিসেবে ধরা হবে। এ বিষয়ে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পত্রিকান্তরে বলেন, এপ্রিলজুন সময় গ্রামগঞ্জে কাজের সুযোগ বেড়েছে, প্রতিবেদন তাই নির্দেশ করছে। এ সময়ে মৌসুমি পেশায় অনেকে নিয়োজিত থাকেন। কাজের মধ্যেই নেই কিন্তু বেকার হিসেবে চিহ্নিত হন না, এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েছে। সাধারণ ছাত্র, অসুস্থ, বয়স্ক, কাজ করতে অক্ষম, অবসরপ্রাপ্ত ও গৃহিণীরা এই তালিকায় আছেন। বর্তমানে এমন জনগোষ্ঠী আছেন ৪ কোটি ৭৩ লাখ ২০ হাজার জন। জানুয়ারিমার্চ প্রান্তিকের চেয়ে প্রায় ১০ লাখ এমন জনগোষ্ঠী বেড়েছে। এ তালিকায় পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা তিন গুণ বেশি। এপ্রিলজুন সময়ে জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে ৭ কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার মানুষ আছেন। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত আছেন ৭ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার মানুষ। সার্বিকভাবে কর্মজীবী নারীপুরুষের মধ্যে ৪ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার পুরুষ ও ২ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার নারী। ১ লাখ ২৩ হাজার ২৬৪টি খানা থেকে বছরব্যাপী তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ওই সব তথ্যের ভিত্তিতে শ্রমশক্তি জরিপ করা হয়েছে।

ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বলেছিলেন, দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ সম্পর্কীয় সকল কার্যক্রমের সমন্বয়সাধন, দক্ষতার পারস্পারিক স্বীকৃতি, অভিন্ন প্রশিক্ষণ কারিকুলাম প্রণয়ন ও সনদায়ন এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সরকার সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে কাজ করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকের যুব সমাজই জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধাদারিদ্র্যমুক্ত, উন্নতসমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রধান কারিগর। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমেই আমাদের যুব সমাজের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে তাদের সচেতন করা, আধুনিক প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত করা ও কর্মসংস্থানের পথ নির্দেশনা প্রদান করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা পালন করতে হবে। আসলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত সামাজিক অগ্রগতির প্রয়োজন রয়েছে। সেজন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। আর এ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রতিটি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় বিকশিত করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। জীবনমানের উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বৈষম্য ও দারিদ্র্য দূর করতে হবে। বৈষম্য নিরসনে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করে সুস্থির পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই দেশের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত হবে। নারীপুরুষ সবাইকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে