নামমাত্র উৎপাদনেই টিকে আছে ৭৫ বছরের পুরনো কারখানাটি

রেলের পাহাড়তলী কারখানা।। ২২টি ওয়ার্কশপের মধ্যে বর্তমানে অর্ধেকের বেশি বন্ধ, নেই অভিজ্ঞ শ্রমিক।। ৬ হাজার লোকবলের মধ্যে এখন কর্মরত মাত্র ১০০৭ জন

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৩ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ রেলওয়ের পাহাড়তলী কারখানায় নতুন বগি তৈরী করার মতো সব যন্ত্রপাতি ছিল, এখনো আছে। কিন্তু যন্ত্রপাতি থাকলে কি হবে-এখন নেই অভিজ্ঞ জনবল। কারখানার ২২টি ওয়ার্কশপের মধ্যে প্রায়ই বেশিরভাগ বন্ধ থাকে। ৭৫ বছরের পুরনো এই কারখানাটি এখন শুধু নামমাত্র উৎপাদনেই টিকে আছে। এক সময় সম্পূর্ণ একটি বগি, ওয়াগন, চাকা, বয়লার, পিরিওডিক্যাল ওভারহলিং (পিওএইচ) জেনারেল ওভারহলিং (জিওএইচ)সহ যাবতীয় মেরামত কাজ হতো। বর্তমানে চার ভাগের এক ভাগ কাজও হয় না। পাহাড়তলী ক্যারেজ এবং ওয়াগন মেরামত কারখানায় সরেজমিনে দেখা গেছে, এখন শুধুমাত্র পুরনো বগি মেরামত, বগি রং করা, চাকা, বগির গ্লাস-বাথরুম, ফ্যান মেরামত করা ছাড়া আর কিছুই হয় না।
বিশাল কারখানা জুড়ে থাকা শপগুলোর মধ্যে অনেক গুলোই খালি পড়ে আছে। কারখানায় নেই কোনো কোলাহল। সারি সারি ওয়ার্কশপের ভেতর-বাহির, চারপাশে মূল্যবান রেলওয়ে ক্যারেজ, ওয়াগন, যন্ত্রাংশ পড়ে আছে। কিছু কিছু শপ একেবারেই বন্ধ। আর কিছু কিছু শপে কয়েকজন করে শ্রমিক কাজ করছেন। ৫০০ বিশাল মেশিনের চার ভাগের তিন ভাগের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। এখানকার সব কটি ওয়ার্কশপই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ৬-৭টি আগুনের চুল্লিসহ অসংখ্য মেশিন রয়েছে। এক সময় শত শত শ্রমিক ঢালাইয়ের কাজ করতেন। এতে অর্থ যেমন বেঁচে যেত, নষ্ট হওয়া ট্রেনগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করা যেত।
ওয়াগন মেরামত ও সচল করতে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয়। অভিজ্ঞ মিস্ত্রির প্রয়োজন হয়। এখানে অভিজ্ঞ মিস্ত্রির স্বল্পতা রয়েছে। ট্রেন লাইটিং শপ, ওয়ালিং শপেও একই অবস্থা। কারখানার উন্নয়ন ও লোকবল নিয়োগের ব্যাপারে কারও নজর নেই। এক সময়ের জৌলুসপূর্ণ পাহাড়তলী কারখানাটি এখন একেবারেই জরাজীর্ণ।
কারখানার কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতার পরে পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানটিতে প্রায় ৬ হাজার অভিজ্ঞ শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। এখন কারখানাটিতে লোকবল আছে মাত্র ১০০৭ জন। এর মধ্যে সরাসরি কাজে (৪র্থ শ্রেণি) সম্পৃক্ত ২৮১ জন শ্রমিক। কারখানার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজাদীকে জানান, প্রতিবছর কারখানার জন্য যে বরাদ্দ চাওয়া হয়, তার চার ভাগের এক ভাগও বরাদ্দ মেলে না এই কারখানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মিস্ত্রি জানান, প্রতি মাসেই এই কারখানার অভিজ্ঞ শ্রমিকরা অবসরে চলে যাচ্ছেন। যারা যাচ্ছেন-তাদের স্থলে নতুন অভিজ্ঞ শ্রমিক আসছেন না। এর ফলে পুরো কারখানা জনবলশূন্য হয়ে পড়ছে।
সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও ঈদুল ফিতর এবং ঈদ উল আজহাকে সামনে রেখে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য কারখানা জুড়ে পুরনো বগি মেরামতে শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।
এই ব্যাপারে পাহাড়তলী কারখানার কর্ম ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী রাশেদ লতিফ আজাদীকে জানান, প্রতি বছরের মতো এবারের ঈদেও প্রতিটি যাত্রীবাহী ট্রেনে অতিরিক্ত বগি যুক্ত হবে। এজন্য পাহাড়তলী কারখানায় ৯০টি বগি মেরামতের কাজ চলছে। তিনি জানান, কারখানায় লোকবল কম। তাছাড়াও করোনার প্রভাবের মধ্যে কাজ চালিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। সর্বোচ্চ ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে ঈদের আগে যাতে সব গুলো বগি মেরামত করা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিউ ইয়র্কে মামলায় হারল বাংলাদেশ ব্যাংক
পরবর্তী নিবন্ধভাই-ভাবির আঘাতে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু