নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আশাবাদী হতে কোনো বাধা নেই

| বুধবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে সবচাইতে আলোচিত ও দুশ্চিন্তার বিষয় হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। দেশে কয়েক মাস ধরেই এ সংকট চলছে। এই সংকট আরো ঘনীভূত হলো প্রবাসী আয় ও পণ্য রপ্তানির পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে। কেননা, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান এ দুটি উৎস থেকে টানা দুই মাস (সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) আয় কমেছে। তবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গত বৃহস্পতিবার পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। এতে একটি সুখবর মেলে, তা হলো, সদ্য বিদায়ী নভেম্বর মাসে প্রবাসী আয় কিছুটা বেড়েছে। অন্যদিকে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২৬ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে গত নভেম্বরে ৫০৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা চলতি বছরের ১১ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। গত বছরের নভেম্বরে রপ্তানি হয়েছিল ৪০৪ কোটি ডলারের পণ্য। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নভেম্বরে ভালো রপ্তানি হওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরের সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। অক্টোবর শেষে সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। নভেম্বর শেষে সেটি বেড়ে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ২ হাজার ১৯৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় যা ২ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো আয়ও নভেম্বরে কিছুটা বেড়েছে। নভেম্বরে প্রবাসীরা বৈধ পথে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। গত বছরের নভেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। সেই হিসাবে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত মাসে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে গড়ে ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় বৈধ পথে দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। আর আগস্টে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। এরপর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে প্রবাসী আয় কমে যায়।

রপ্তানি আয়ে সুসংবাদ এমন সময়ে এলো যখন বাংলাদেশ বিদেশি মুদ্রার সংকটে ভুগছে। রিজার্ভ সামাল দিতে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ধর্না দিচ্ছে। আমদানিতে এলসি খুলতে না পারা, ডলার সংকট এবং অর্থনীতির বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে রপ্তানি আয়ে এই সুখবর আশা জাগানিয়া।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত নিবন্ধে বিশেষজ্ঞরা বলেন, নভেম্বর মাসের রেকর্ড রপ্তানি আয়ের সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। একইভাবে একদা সোনালি আঁশখ্যাত পাট আমাদের রপ্তানি আয়ে ভরসা জাগাতে পারে। কিন্তু সেজন্য পাটশিল্পের পুনর্জাগরণ ঘটানো এবং উন্নতমানের পাট ও পাটজাত পণ্যের বহুমুখীকরণে সরকারের বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার। এটা ভুলে থাকা ঠিক হবে না যে, দুনিয়াব্যাপী সিনথেটিকের পরিবর্তে অর্গানিক পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পাট আমাদের জন্য এক অমিত সম্ভাবনার জায়গা। চামড়া ও পাটের পরই বিশেষভাবে নজর দিতে হবে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের রপ্তানিতে।

২০২০-২১ অর্থবছরে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে ৭৬ হাজার ৫৯২ টন মাছ রপ্তানি করেছি, যার মূল্য ৪ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অথচ আমরা এখনো সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণ ও বিপণন-রপ্তানির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করছি না। উল্লেখ করা যায় যে, পৃথিবীর সব মানুষের মোট আমিষ চাহিদার শতকরা ১৫ ভাগ আসে সামুদ্রিক সম্পদ থেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, এ কথা স্পষ্ট যে আমাদের আত্মবিশ্বাসী হওয়ার বাস্তব ক্ষেত্র রয়েছে। তাই নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আশাবাদী হতে কোনো বাধা নেই। একই সঙ্গে চলমান সংকটের কারণে যে চ্যালেঞ্জগুলো সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোর দিকেও নীতি-মনোযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। বিদ্যমান এই চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতি সংবেদনশীল থেকেই আমাদের আত্মবিশ্বাসী অগ্রযাত্রাকে চলমান রাখতে হবে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে ভরসার সামাজিক পুঁজি তৈরির দিকেই মন দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে