নাতিকের শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু

হাসনাত চৌধুরী | শুক্রবার , ৮ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

১.
কবি নাতিক লক্ষ্মৌভি। পুরো নাম আবুল আলা হাকিম সৈয়দ সাঈদ আহমদ। জন্ম ভারতের উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে ১৮৭৮ সালে। আর মৃত্যু? না, মৃত্যু এখনই নয়, ধরে নিন এই লেখার শেষ পর্যন্ত নাতিক বেঁচে থাকবেন এবং লেখা শেষে তাঁর মৃত্যুটা আমরা উদযাপন (!) করবো। কারণ লেখার শেষে এই বঙ্গদেশের সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য তাঁর মৃত্যু চমক হিসেবে থাকবে। চলুন সামনে যাওয়া যাক। নাতিকের পিতা আব্দুল বাসির জাঈদি ওয়াস্তি বুলগ্রামী। বাবা-মা ছেলের নাম রাখেন সাঈদ আহমদ। তিনি নিজের নাম লিখতেন আবুল আলা আর কলমী নাম নাতিক লক্ষ্ণৌভি। এই নামেই জীবদ্দশায় কবি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন অবিভক্ত ভারত জুড়ে। তাঁর কবিতায় সুরারোপ করে গান/গজল রূপে গেয়েছেন গোলাম আলী, মেহেদী হাসান, বেগম আখতার, অনুপ জালোটা, জগজিৎ সিং, নুসরাত ফতেহ আলী সহ উপমহাদেশের বহু জনপ্রিয় শিল্পী। ঠিক কতোটা জনপ্রিয়তা এবং খ্যাতি তিনি পেয়েছিলেন তা মনে হয় উল্লিখিত শিল্পীদের নামের তালিকাই বলে দেয়। আর এখন তাঁর জনপ্রিয়তা কেমন? উপমহাদেশের উর্দু/হিন্দিভাষী কবিতাপ্রেমীরা ঠিক কতোটা মনে রেখেছে তাঁকে? বা আদৌ কি মনে রেখেছে? প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চান? ইংরেজি, উর্দু অথবা হিন্দিতে ‘নাতিক লক্ষ্ণৌভি’ লিখে গুগোল অথবা ইউটিউবে সার্চ দিন। অনুসন্ধিৎসু পাঠক উত্তর পেয়ে যাবেন। ভারত ও পাকিস্তানের জনপ্রিয় কবিতার প্রায় সব ওয়েবসাইটই নিজেদের খরচে নাতিকের কবিতা রেখেছে।
নাতিকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা যেহেতু লক্ষ্ণৌতে তাই নামের শেষে লক্ষ্ণৌভি শব্দটি ব্যবহার করতেন। তাঁর পিতা আব্দুল বাসির জীবিকার তাগিদে হারদোই বলগ্রাম জেলা ছেড়ে লক্ষ্ণৌতে আবাস গড়ে তুলেছিলেন। আব্দুল বাসিত নিজেও কবি হিসেবে খ্যাত ছিলেন। ছিলেন আরবী, উর্দু ও ফার্সি ভাষার কবিতায় সমান সাবলীল। নাতিকের পিতা বাসির ছিলেন কবি আতিশ, সাবাহ ও কাইফের ছাত্র। কবিতায় তাঁর কলমী নাম ছিলো ‘হযরত’।
নাতিক লক্ষ্ণৌভি শিল্পসাহিত্যের ঠিক কোন শাখার চর্চা করেননি সেটা ভাবতে গেলেও ধন্দে পড়তে হয়! ব্যক্তিগতভাবে তিনি আরবি, ফার্সি এবং উর্দুতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। এছাড়া আরবি সাহিত্য, আইনশাস্ত্র, ব্যাকরণ, চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, অলঙ্কারশাস্ত্র, ক্যালিওগ্রাফি, সঙ্গীত, দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা এবং হিন্দি সাহিত্যে নাতিকের আশ্চর্য দক্ষতা ছিল। পিতা সুপরিচিত কবি তাই বলা যায় কবিতার কোলেই চোখ মেলেছিলেন নাতিক। বাড়ির বাইরেও ছিল পন্ডিত আর সাহিত্য পরিবেষ্টিত পরিবেশ।
পরিবেশের প্রভাবে ছোটবেলা থেকেই কবিতার জগতে পা রেখেছিলেন নাতিক। পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী আরবী কবিতা দিয়েই তাঁর হাতেখড়ি। জানা যায় প্রিয় সহকারী আমির আহমেদ মিনাইয়ের পরামর্শে তিনি উর্দু কবিতা লিখতে শুরু করেন এবং খুব দ্রুতই পাক ভারতের সাহিত্যিক মহলে পদছাপ রাখেন। ব্যক্তিগত জীবনে সুফি দর্শনে প্রভাবিত এই কবি ছিলেন বড় বিনয়ী ও সদালাপী। কবিতায় ছিলেন পরিণত ও যত্নশীল। প্রায় সব ধারার কবিতাতেই ছিলো তাঁর সমান দক্ষতা।
নাতিক লক্ষ্ণৌভি ভাষার বিকাশের পথ প্রশস্ত করতে এবং কবিতার মান বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। আপাদমস্তক সাহিত্যে নিমজ্জিত এবং নিবেদিত নাতিক আরবি, ফার্সি এবং উর্দু ভাষায় কবিতা আবৃত্তিও করতেন। মির্জা জাফর আলী খানের মতে আধুনিক উর্দু কবিতার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন নাতিক।
লক্ষ্ণৌতে প্রচুর সংখ্যক ছাত্র ছিলো তাঁর। যাদের দ্বারা লক্ষ্ণৌ, কানপুর ও কলকাতার সাহিত্য সংশ্লিষ্ট লোকেরা উপকৃত হয়েছিল।
তিনি ১৮ বছর বয়সে লক্ষ্ণৌ ছেড়ে কানপুরে চলে আসেন এবং পত্রিকাসহ বিবিধ সম্পাদনার কাজে নিয়োজিত হন। এই কাজে জড়িয়ে বহু বছর কানপুরেই থেকে গিয়েছিলেন আপাদমস্তক কবি নাতিক। বেশকিছু উপন্যাস ও ঐতিহাসিক গ্রন্থ লিখে খ্যাতির শীর্ষে চলে যান। বহুদিন কানপুরে কাটিয়ে চলে যান হায়দারাবাদে। সেখানে সরকারি পত্রিকা ‘মালিক ও মিল্লাত’ সম্পাদনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
যাঁরা লেখাটির এ-পর্যন্ত পড়লেন তাদের কিছুটা বিরক্তির উদ্রেক হচ্ছে হয়তো। কেন এতো বলতে হচ্ছে কখনো নাম না শোনা এক কবিকে নিয়ে! এমন খ্যাতি বা জনপ্রিয়তা তো কতশত জনই পেয়েছেন উপমহাদেশে! এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক। তাই অনুরোধ- যাঁরা এটুকু এলেন কষ্ট করে আরও কিছুদূর সাথে চলুন, আপনি যদি সাহিত্যপ্রেমী হয়ে থাকেন অথবা নাও হয়ে থাকেন তাতেও কিছু সমস্যা নেই, কিন্তু যদি বাংলাদেশি হয়ে থাকেন তবে লেখার শেষে আপনার জন্য হয়তো কিছুটা চমক থাকতেও পারে! আসুন ফিরি নাতিকের গল্পে। বর্নাঢ্য জীবনে নাতিক ছিলেন হেকিম বা চিকিৎসকও! ঝুঁকেছিলেন গ্রীক চিকিৎসা ও ওষুধের দিকে। এ-কাজে তিনি সহায়তা নিয়েছিলেন হায়দরাবাদের হেকিম মিসবাহ উদ্দিন খানের। পরে দিল্লি ও সিমলায় গিয়ে হেকিম আবদুল মজিদ খানের কাছে চিকিৎসা শাস্ত্রে শিক্ষা অর্জন করেন ও ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। কানপুরে কয়েক বছর চিকিৎসাসেবা দান করে ১৯২২ সালে কলকাতায় চলে আসেন এবং অব্যাহত রাখেন চিকিৎসাসেবা এবং মজ্জাগত সাহিত্যচর্চা।
২.
এবার একটু অন্য গল্পে আসি। ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক আবহের কারণে খানিকটা গজল/ সুফি গজলে আসক্তি এসেছিলো আমার যা স্থায়ী হয়েছে শেষমেস। সেই আসক্তির সূত্র ধরেই চট্টগ্রামের জনপ্রিয় সুফি গজল শিল্পী সৈয়দ আমিনুল ইসলামের সাথে ঘনিষ্ঠতা। রাত বিরাতে বিভিন্ন গজলের আসরে তাঁর শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত হতাম প্রাণের টানে। ইসলাম ভাইকে চিনি সেই শিশু বয়স থেকেই। তিনি অনুষ্ঠানের দিন সকালে ফোনে জানিয়ে দিতেন আসরের স্থান। আর আমি যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে যেতাম। ইসলাম ভাই জানতেন আমি কবি নাতিকের অন্ধ ভক্ত। তাই প্রতি মাহফিলে আমার জন্য অন্তত নাতিকের একটা গজল তিনি গেয়ে শোনাতেন।
সময়টা সম্ভবত ২০০৫ সাল। গিয়েছি চট্টগ্রাম শহরের বান্ডেল রোডের দিকে এক বাড়িতে আয়োজিত ঘরোয়া গজলের আসরে। রাত ১ টার দিকে ইসলাম ভাইকে অনুরোধ করলাম- নাতিকের যে কোনো একটি গজল শোনানোর জন্য। তিনি চশমার উপর দিয়ে তীর্যক চোখে তাকিয়ে হেসে ফেললেন। বললেন- ‘আজ আর আপনাকে নাতিকের গান শোনাবো না, আজ আপনাকে একটু চমকে দেবো। একই দিনে দুটো আনন্দ ভালো নয়! বলেই চা বিরতি নিয়ে বাড়ির বাইরে এসে সিগারেট ধরিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন, ডাক দিলেন- চলেন আপনাকে একটা অনুদঘাটিত সত্য দেখিয়ে আনি। গভীর রাতের নির্জন রাস্তায় হাঁটছি দুজন। বদর শাহের মাজারের গেটে এসে থামলেন। মোবাইলে ফোনের লাইট জ্বালিয়ে ভেতরে ঢুকেই বাঁ দিকের কয়েকটা পুরনো কবরের দিকে আলো ফেললেন। কবরের এপিটাফে উর্দুতে কিছু লেখা। বললেন – মিঞা সাহেব, দেখেন তো কি লেখা আছে। শব্দ করে পড়েন যেন আমিও শুনতে পাই!
অনুবাদের কাজ করতে গিয়ে কিছুদিন তখন উর্দু শিখতে হয়েছিল তাই পড়তে কষ্ট হলোনা। তাঁর দেখিয়ে দেয়া একটি এপিটাফে লেখা- নাতিক লক্ষ্ণৌভি!
বোকার মতো প্রশ্ন করলাম- মানে কি ভাইজান? ইসলাম ভাইয়ের মুখে রহস্যের হাসি- এটাই নাতিকের কবর। আমি হেসে ফেললাম- ধুর! নাতিকের মতো বিখ্যাত তারকাকবি আপনাদের চাটগাঁয় মরতে আসবে কেন!
ইসলাম ভাই গম্ভীর হয়ে গেলেন- আমি মশকরা করছি? কবরগাহ নিয়ে কেউ মশকরা করে!
প্রমাণ কি যে এটাই নাতিকের কবর? জানতে চাইলাম।
আমাকে আমার বাপ বলে গেছেন আমি আপনাকে বলে যাচ্ছি, এটাই নাতিকের কবর। প্রমাণটমান জানি না। ইসলাম ভাইয়ের সাফ জবাব। বিস্মিত আমি নিজের কান আর চোখ কোনোটাকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। উপমহাদেশের জনপ্রিয় কবি, আমার প্রিয় কবি নাতিকের সমাধি! এই দেশে, এই চট্টগ্রামে, এবং আমি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছি! আবারও মুঠোফোনের আলো ফেললাম সমাধিফলকটায়। না, ভুল তো দেখছি না। পরিষ্কার পড়া যাচ্ছে- নাতিক লক্ষ্ণৌভি। নিচের লাইনে পুরো নাম- সৈয়দ সাঈদ আহমেদ।
ইসলাম ভাই বের হয়ে হাঁটতে শুরু করেছেন রাস্তার দিকে। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচালে দুলতে থাকা আমি তখনও সমাধিফলকে উৎকীর্ণ লেখাগুলোয় হাত বুলিয়ে যাচ্ছি, নাতিক! এটাই নাতিকের শেষ ঠিকানা। কিন্তু প্রমাণ…?
৩.
মাসকয়েক আগে ইসলাম ভাইয়ের শিষ্য গজল শিল্পী হান্নাহ হোসাইনী সাহেব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটা পোস্ট দিলেন ছবি সহ। তিনি লিখেছেন- কবি নাতিকের কবর দেখতে এসে হতাশ হয়েছি। কারণ অস্থায়ীভাবে নির্মিত মসজিদের আড়ালে ঢাকা পড়েছে কবি নাতিকের কবর। তার আশংকা হয়তো কবরের স্মৃতিফলকটি সংরক্ষণ করা হয়নি। ফোনে কথা কথা বললাম হান্নান সাহেবের সাথে। দেখলাম তিনি নাতিকের কবর যে এখানেই তার সপক্ষে কিছু প্রমাণও যোগাড় করেছেন ইন্টারনেট ঘেঁটে। গুগলে ‘প্রোফাইল অব নাতিক’ লিখে সার্চ করে তিনি দেখেছেন ভারতীয় কয়েকটি ওয়েবসাইটে নাতিকের ছবিসহ কিছু তথ্য দেয়া আছে। প্রাপ্ত তথ্যের স্ক্রিনশটও পাঠালেন ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে। আকুতি জানালেন হান্নান- ভাই, কিছু কি করা যায়? এতো বড় মাপের একজন কবির সমাধিফলকটি যদি স্মৃতিস্বরূপ সংরক্ষণ করা যায়।
হান্নানের পাঠানো স্র্কিনশটগুলো পড়ে দেখলাম। সেখানে ছবি সহ স্পষ্ট লেখা :
Pen name : Natik Lakhnavi
Real name : Syed Abul Ali Sayeed Ahmed.
Born : Lucknow, Uttarpradesh.
Died : 9 October 1950,Chatgaon,Bangladesh
ব্যস, এবার হয়তো বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলা যায়। হ্যাঁ, উপমহাদেশের বিখ্যাত কবি নাতিক লক্ষ্ণৌভির কবর এই দেশে, চট্টগ্রামেই। কিন্তু এটুকু প্রমাণই কি যথেষ্ট? কিছুদিন পর সরেজমিন বদরপট্টিতে গিয়ে খেয়াল করলাম বদর শাহের মাজারে ঢুকতে বাঁ দিকে অস্থায়ী মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে পুরনো সেই সমাধিগুলো দেখা যাচ্ছে না। মসজিদের গেটে তালা দেয়া। রাত প্রায় ১১ টা। স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানলাম পশ্চিমদিক দিয়ে কবরস্থানের ঢোকার গেট রয়েছে। ঢুকলাম সেই গেট দিয়েই। কোথাও সেই পুরনো এপিটাফগুলো দেখতে পেলাম না। কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছিল, জানি এপিটাফগুলো নেই, তারপরও এদিক সেদিক দেখছি, হয়তো নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছি, যদি কিছু পাওয়া যায়। কতক্ষণ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছি নির্জন কবরস্থানের মাঝখানে জানি না…। মাথার ভেতরটা ফাঁকা। বের হয়ে রাস্তায় নামলাম। ঘড়িতে রাত ১২ টা।
বাড়ি ফিরে গুগোলে উর্দুতে লিখে সার্চ দিলাম। ভারতীয় উর্দু উইকিপিডিয়া জানালো সুস্পষ্ট তথ্য :
‘আবুল আলা হাকিম সৈয়দ সাঈদ আহমেদ ওরফে নাতিক লক্ষ্ণৌভি তাঁর জীবনের শেষ বছরগুলিতে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তিনি জীবন সায়াহ্নে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ১৯৫০ সালের ৯ অক্টোবর সোমবার তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। নাতিককে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বদর শাহের মাজার সংলগ্ন কবরস্থান বদরপট্টিতে দাফন করা হয়।’
১৭ বছর আগে ইসলাম ভাইয়ের মুখে শুনে এবং এপিটাফে উৎকীর্ণ বহু বছরের পুরনো লেখা পড়ে সেদিনই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম কবি নাতিক এখানেই শেষ বিশ্রামে আছেন। দরকার ছিল শুধু প্রকাশ্যে দাবির সপক্ষে যথোপযুক্ত প্রমাণের। এখন তাও পেলাম। কিন্তু যশ-খ্যাতি, জন্মভূমি ছেড়ে তুলনামূলক অনুন্নত আর অপরিচিত বন্দর শহর চাটগাঁয় কেন এসেছিলেন তিনি কেনই বা এখানেই স্থায়ী হয়েছিলেন। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েও এখানেই ছিলেন। সমাধিস্থ হলেন বদরপট্টিতে কিন্তু তিনি থাকতেন কোথায়? সাথে পরিবার পরিজন কেউ কি ছিলো নাকি একাই থাকতেন নাতিক? প্রশ্নগুলো সাহিত্য সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধিৎসু লেখক, গবেষক ও পাঠকদের এ-ব্যপারে কাজ করতে উৎসাহী করবে আশা করি। সময়ে হয়তো একদিন বের হয়ে আসবেন সাহিত্যে নিমজ্জিত কবি নাতিক রহস্যে ঘেরা তাঁর গল্পের আদ্যপান্ত সহকারে শিল্পে উন্মোচিত সাহিত্যের স্বনিষ্ঠ কোনো কৌতূহলী প্রেমিকের হাত ধরে ।
অথবা অস্পষ্ট ধোঁয়াটে মেঘের আড়ালে থেকে যাবেন চিরতরে। তবে সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় কবিতায় নাতিক বেঁচে থাকবেন বহু বহুকাল।
‘কাফনে নিজেকে ঢেকে দিয়েছি যেন পর্দা-পুষিদার কষ্টে তোমায় পড়তে না হয়,
নিজেকে মুখোশে ঢেকে সরাই তোমার হিজাব …’
কবিতার শহর চটগ্রামে অযত্নে অবহেলায় নিশ্চিহ্ন হতে চলা নাতিকের শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু আমরা কি পারি না বাঁচিয়ে রাখতে?

পূর্ববর্তী নিবন্ধগৌরবের উত্তরাধিকার
পরবর্তী নিবন্ধরমজানে সাধ্যমত অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে হবে