নবনির্বাচিত মেয়রের জন্য কিছু ধারণা বিনিময়

অধ্যাপক ইমরান বিন ইউনুস | বুধবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

তিনি চট্টগ্রামের জনগণের ভোটের রায়ে মেয়র নির্বাচিত হয়ে গেছেন। শাব্দিক আর ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিষিক্ত হচ্ছেন। অপেক্ষায় দায়িত্ব নেবার মাহেন্দ্রক্ষণের। অনেক অনেক প্রত্যাশা আর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সমীকরণের ঘূর্ণিতে আবর্তিত। কোত্থেকে শুরু হবে বিশাল কর্মযজ্ঞ? কতটুকু ক্ষমতার পরিধি? কী হবে রোডম্যাপ? এই সময়ে চট্টগ্রামের বাসিন্দা হিসাবে মেয়রের রোডম্যাপ তৈরির জন্য আমাদের সকলের জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা, দূরদৃষ্টি ও দক্ষতা-সর্বময় সদিচ্ছা নিয়ে শেয়ার করা প্রয়োজন। তবে মেয়রকেও তা কুড়িয়ে সন্নিবেশিত করে কাজে লাগাতে হবে। তথ্যভিত্তিক তত্ত্ব বিন্যাস করে প্রয়োগ করতে হবে। মনগড়া নয়। আমার নগরীর নতুন মেয়রকে অভিনন্দন জানানোর সাথে কিছু ধারণা বিনিময়ের লোভ সামলাতে পারলাম না।
প্রথমে মিশন নির্ধারণ করতে হবে। সবার মনের কথা হলো মিশন, যা অর্জন করতে হবে। সেটা হলো চট্টগ্রামকে বসবাসকারীর জন্য শান্তি-স্বস্তিকর, বাসযোগ্য, নিরাপদ, আনন্দপুরীতে রূপান্তর করা। তার জন্য একদিকে প্রয়োজন সুনাগরিকের, অন্যদিকে জীবনযাত্রার জন্য সুযোগ সুবিধাসমূহ সহজলভ্য, সুলভ এবং ঝামেলামুক্ত রাখা।
ইউজার ফ্রেন্ডলি করতে হলে প্রয়োজন তথ্য সংগ্রহ, যা সর্ব শ্রেণির নগরবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা। যারা নগরীর আসল স্টেকহোল্ডার। সংগ্রহ করতে হবে কী কী আছে, কী কী নাই। এসব কাজ সুচারুভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে করতে হবে। পরিস্থিতি পরীবিক্ষণ ও নিরীক্ষণ, যাকে বলা হয় সিচুয়েশন রিভিউ। তারপর সব গ্যাপ ও অসঙ্গতি বের করে তা সমলয়ে যুগপৎভাবে করা। প্রথমে স্ট্র্যাটেজিক ফ্রেমওয়ার্ক, অপারেশনাল প্ল্যান। অতঃপর মাঠে প্রয়োগ।
এসব ধারাবাহিক কাজ করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের জ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, গবেষক, জনমতধারী, ভোক্তা ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের নিয়ে রিসোর্চ গ্রুপ মেয়রের স্কলাস্টিক সহযোগী হয়ে কাজ করবেন পরিকল্পনা বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য।
মনগড়া ইচ্ছাপূরণ আর অপচয় পরিহার করতে হবে। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে প্রবর্তক মোড় থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত ভাঙা-গড়া তার প্রতিফলন। মাত্র কিছুদিন আগে যা করা হলো, কিছুদিন পর পানি জমা প্রতিরোধের মাস্টার প্ল্যানের জন্য তা ভাঙা হচ্ছে। ডিভাইডারের গাছগুলোর অবস্থাও করুণ। অন্যদিকে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের পিলারগুলোতে লাগানো হয়েছে কৃত্তিম ঘাসের আচ্ছাদন। ডিভাইডারে করা হয়েছে লোহার বেষ্টনী দিয়ে বাগান, যা আস্তে আস্তে ভবঘুরেদের আস্তানা হচ্ছে। জনগণের কষ্টার্র্জিত অর্থে তা করা ও মেনটেইন করা হয়। অথচ বাগানের জায়গা পুরোটা পার্কিংয়ের জন্য রাখা হলে যেখানে-সেখানে পার্কিং বন্ধ হয়ে যানজট অনেকাংশে কমত। চারদিকে ছড়ানো ছিটানো নোংরার মাঝে এসব সৌন্দর্যবর্ধনের প্রচেষ্টা গোবরে পদ্ম ফোটানোর মতো মনে হয়।
মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোকে বিন্যস্ত করে তা থেকে করণীয় বের করা যায়। মেসলো’স হায়ারার্কি অব হিউম্যান নিডস্‌-এ আরও সুচারু দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে। পাঁচ স্তরের নিডগুলো হচ্ছে ১. ফিজিওলজিক্যাল। শ্বাস-প্রশ্বাস, খাদ্য, পানি, ঘুম, রেচন, শারীরিক স্থিতাবস্থা; ২. নিরাপত্তা। দেহের, কর্মের, সম্পদের, মানবিকতার, স্বাস্থ্যের, সম্পত্তির; ৩. অধিকার। বন্ধুত্ব, পরিবার, অন্তরঙ্গতা; ৪. মর্যাদা। শ্রদ্ধা, স্বকীয়তা, পদমর্যাদা, স্বীকৃতি, শক্তি, স্বাধীনতা; ৫. ইচ্ছার বাস্তবায়ন।
চট্টগ্রামের ওয়ার্ডসমূহের কাউন্সিলরগণ হবেন মেয়রের টিম, যারা স্বীয় ওয়ার্ডে নির্ধারিত মিশন বাস্তবায়ন আর সমন্বয় করবেন। সাথে তথ্য আদান প্রদানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন। মেয়রের তথা সিটি কর্পোরেশনের কার্যপরিধির সীমাবদ্ধতা, আইনগত বাধাসমূহ সংবিধান অনুযায়ী দূর করতে হবে; যাতে নাগরিকগণের যাপিত জীবনের সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ের ওপর সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃত্ব ও জবাবদিহিতা প্রতিস্থাপিত হয় এবং আমলাতন্ত্রের সুবিধাভোগের জন্য স্বাধীনতা পূর্বে শুরু করা এবং এখন পর্যন্ত চালু সকল প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃত্ব এবং দ্বৈততা লোপ করতে হবে।
প্রথম শতদিন হবে মেয়রের টিম সাজানো ও সংঘবদ্ধ করা, রিসোর্চ গ্রুপ সংগঠন, মিশন ও কার্যক্রম নির্ধারণ, কর্মপদ্ধতি নির্দিষ্টকরণ ও জনমত বিন্যস্ত করা এবং সুনাগরিক হওয়ার পথে পথচলা শুরু করা। অবিচল, অক্লান্ত, স্বীয় লক্ষ্যে ধাবমান মেয়র আর তার টিম চট্টগ্রাম মহানগরীকে অধিবাসীদের জন্য সর্বোপযোগী প্রাণের পুরীতে পরিণত করবেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নবনির্বাচিত মেয়র আর কাউন্সিলরগণকে অভিনন্দন। অপেক্ষায় থাকব আগামীতে রূপান্তরিত চট্টগ্রাম উদযাপনের জন্য।
লেখক : ইন্টারনিস্ট ও নেফ্রোলজিস্ট ও গবেষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানবতার সেবায় নিবেদিত থাকার অঙ্গীকার
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন মেয়রসহ ১১ কাউন্সিলর প্রার্থী