খাগড়াছড়িতে চেঙ্গী, মাইনী ও ফেনী নদীতে নদীতে চলছে নাব্যতা সংকট। বর্র্ষায় পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে এসব মরা নদীতে পরিণত হয়। ফলে এসব নদীর কিছু কিছু অংশে এখন নৌযানের পরিবর্তে চলছে ট্রাক্টর!
খাগড়াছড়ির প্রধান নদী চেঙ্গী। পাহাড়ি এই জেলায় শস্য বা ফসলের আবাদ নির্ভর করে এর অববাহিকার উপর। দুপাশের জনবসতি এই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। চেঙ্গীর উৎপত্তি স্থান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। আঠারমুড়া থেকে উৎপত্তি হয়ে দীর্ঘ ৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তা কাপ্তাই লেকে মিলিত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন পাহাড় থেকে নেমে প্রায় ২৫০টি ছড়া মিলিত হয়েছে এই নদীর স্রোতে। খাগড়াছড়ি জেলা সদর, পানছড়ি ও মহালছড়ি উপজেলা এই নদীর তীরে অবস্থিত। অতীতে এই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল বাণিজ্য। কিন্তু এক সময়ের খরস্রোতা এই নদী এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। অথচ ভরা বর্ষায় অগভীর নদীতে পাহাড়ি ঢল দুই কূল ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ফসলের মাঠ ও বসতিতে। তাই প্রতি বছরই নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের বন্যার কবলে পড়তে হয়। বছরের পর বছর নদী থেকে বালু ইজারা দিয়ে সরকার রাজস্ব আদায় করলেও নদীটি খননের কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘ পথে লোগাং, পানছড়ি, ভাইবোন ছড়া, খাগড়াছড়ি সদর, মাইসছড়ি ও মহালছড়ির বিস্তীর্ণ জনপদ গড়ে উঠেছে এই নদী কেন্দ্রিক। নদীর দু’পাড়ে গড়ে উঠেছে ফসলের মাঠ। মূলত নদীর জলেই চলে সেচ কার্যক্রম। সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে কৃষকরা অভিযোগ করেন, একসময় এই নদী থেকে মেশিনের মাধ্যমে সেচ দেয়া যেত। কিন্তু এখন নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি এত কমে গেছে যে মেশিনে পানি তোলা সম্ভব হয় না। তাই সনাতন পদ্ধতি সেচ কার্যক্রম চালানো হয়।’
একই অবস্থা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে আসা দীঘিনালার মাইনী নদীর। প্রায় ১০৯ কিমি দীর্ঘ নদীও কাপ্তাই লেকে মিশেছে। নদীর দীঘিনালা ও মেরু এলাকায় নাব্যতা সংকট বেশি। ফলে নদীর এই অংশে শুষ্ক মৌসুমে বালুবাহী ট্রাক্টর চলে। মেরুং বাজার থেকে লংগদু’র মাইনী পর্যন্ত নৌকা চলাচল করলেও অংশে নাব্যতা সংকটের কারণে অন্য অংশে তা সম্ভব হয় না। রামগড় ও মাটিরাঙা সংলগ্ন ফেনী নদীতেও একই অবস্থা দৃশ্যমান।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীগুলোর বিভিন্ন অংশে বালু ও মাটির চর এবং ময়লার স্তূপ জমে আছে। এসব নদীতে নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার বা জলযানের পরিবর্তে এখন চলছে বালু তোলার ট্রাক্টর। নদীর তলদেশে গজে উঠেছে ঘাস, চড়ে বেড়াচ্ছে গরু ও ছাগল। পুরো বছরের দুই মাসও থাকে না পানি। চেঙ্গীর অধিকাংশ জায়গায় বালু উত্তোলন চলছে। ফলে বর্ষা আসলে নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করে। ইতোমধ্যে খাগড়াছড়ির গঞ্জপাড়া, পানছড়ির কর্মপাড়া, উত্তর শান্তিপুর ও উগলছড়িসহ বিভিন্ন পাড়া ভাঙনের মুখে পড়েছে। নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, শুষ্ক মৌসুমে নদীটি মরা থাকলেও বর্ষায় তীব্র স্রোত থাকে। কিন্তুনদী খনন ও ভাঙন রোধে কোনো উদ্যোগ না থাকায় বর্ষা আসলেই আতংক শুরু হয়।
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি মৎস আহরণ উপকেন্দ্রের কর্মকর্তা নাসরুল্লাহ আহমেদ জানান, এই মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম এবং নদীর নাব্যতা না থাকায় ছোট দেশি বোট চলছে না। নদীটি কাপ্তাই লেকে মিশলেও আমরা নৌকায় করে লেক পর্যন্ত যেতে পারছি না। নৌকার পাটাতন নদীতের আটকে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল আফসার বলেন, চেঙ্গী ও মাইনী নদীর উপর জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এই দুই নদীকে পূর্বের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে খাগড়াছড়ির দিঘীনালার পাশাপাশি রাঙামাটির নানিয়ার চর হয়ে, মহালছড়ি, দাঁতকুপিয়া, কমলছড়ি হয়ে নদী খনন, চর কাটিং, একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করার জন্য প্রায় ৬৪০ কোটি টাকার কাজ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। মহামারীর প্রকোপ কমলে কাজ শুরু হবে।