নতুন মাইলফলকে অর্থনীতি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ভয়াল করোনায় বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মাঝেও বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গতকালকের হিসেবে দেশের রিজার্ভ নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করছে। অর্থনীতিবিদরা বৈদেশিক মুদ্রার এই অবস্থান বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন শক্তি যোগাবে বলে মন্তব্য করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, গতকাল (বুধবার) দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। যা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক শীঘ্রই ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা প্রচুর রেমিটেন্স পাঠান। যা রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৪.৮৫ বিলিয়ন বা চার হাজার ৪৮৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। যেকোনো দেশের তিন মাসের আমদানী ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকলে ওই রিজার্ভকে যথাযথ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে প্রতিমাসে ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো রপ্তানি ব্যয় হয়। এতে ১৫ বিলিয়নের বেশি ডলার থাকলেই রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। সেক্ষেত্রে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ যেখানে ঠেকেছে তা দিয়ে নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। প্রয়োজনের তিনগুণ বেশি রিজার্ভ দেশের অর্থনীতিকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, এটি প্রবাসীদের অবদান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা অন্তত এক কোটি প্রবাসী হুন্ডির পরিবর্তে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানোর ফলেই রিজার্ভ এভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবাসীদের রেমিটেন্স না থাকলে দেশের রিজার্ভ সংকটে পড়তো উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, করোনকালে রপ্তানি কমে গেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তো রিজার্ভে। কিন্তু রেমিটেন্সই তা পড়তে দেয়নি।
করোনা মহামারির মধ্যেও চলতি অর্থবছরের ১০ মাস পার না হতেই প্রায় দুই হাজার কোটি (২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি বলে সূত্র জানিয়েছে। আগের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল পুরো বছরে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৬৪২ কোটি বা ১৬.৪২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে এর সঙ্গে আরও দুই টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী। এছাড়া ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি এক শতাংশ দেওয়ার অফার দিচ্ছে। এতে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে, যা রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে।
রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়া প্রসঙ্গে খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, এটি অনেক বড় একটি ব্যাপার। দেশের অর্থনীতি অনেক শক্ত একটি ভিত পেলো। তবে এই রিজার্ভের ভিত্তি হচ্ছে প্রবাসীদের রেমিটেন্স। এটা দেশের অর্থনীতির শক্তির নতুন উৎস হিসেবে চিহ্নিত হলো। কিন্তু রপ্তানি বাড়াতে হবে। গতবছর আমাদের রপ্তানি কমে গিয়েছিল। এবার যদি সেটি পুনরুদ্ধার হয় তাহলে আমাদের অর্থনীতির সামনে আর বড় কোনো বিপদ আসবে না। আমাদের অর্থনীতির এই শক্তি ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে বলেও অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত
পরবর্তী নিবন্ধহেফাজত নেতা কাশেমী গ্রেপ্তার