নতুন ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা সতর্কতার বিকল্প নেই

| সোমবার , ২৩ মে, ২০২২ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

মাঙ্কিপক্স নামে নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় আবারও দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, এই মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

কানাডা ভ্রমণকারী এক ব্যক্তির মধ্যে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণের লক্ষণ ধরা পড়ে। ম্যাসাচুসেটস ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক হেলথ এই খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছে, কানাডায় ভ্রমণ করা ওই ব্যক্তির মধ্যে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পক্ষে জানানো হয়েছে ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সেই সঙ্গে এক বিবৃতিতে সিডিসি জানিয়েছে, এই ধরনের সংক্রমণ নিয়ে অযথা উদ্বেগের কোনো কারণ নেই, আক্রান্ত ব্যক্তি আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থাও স্থিতিশীল। কানাডার পাবলিক হেলথ এজেন্সি জারি করা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এই ধরনের সংক্রমণ সম্পর্কে তারা সচেতন। পরিস্থিতির ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

মাঙ্কিপক্স, বেশিরভাগ পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকায় দেখা যায়, এটি মানুষের শরীরে গুটিবসন্তের মতো একটি বিরল ভাইরাল সংক্রমণ সৃষ্টি করা। ১৯৭০ এর দশকে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে রেকর্ড করা হয়েছিল। পশ্চিম আফ্রিকায় গত এক দশকে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে লাফিয়ে। উপসর্গ সম্পর্কে সিডিএসের তরফে বলা হয়েছে মাঙ্কিপক্স আক্রান্তদের মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা এবং ফুসকুড়ি, র‌্যাশের মত উপসর্গ দেখতে পাওয়া গিয়েছে। মুখ থেকে শুরু হয়ে শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ছে এই র‌্যাশ। ম্যাসাচুসেটস স্বাস্থ্য দফতর এক বিবৃতিতে বলেছে সহজে মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই বিরল। এই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে কোনও মাঙ্কিপক্সের ঘটনা ঘটেনি বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে। সিডিসি আরও বলেছে যে এটি গত দুই সপ্তাহের মধ্যে পর্তুগাল, স্পেন এবং যুক্তরাজ্য সহ বেশ কয়েকটি দেশে রিপোর্ট করা মাঙ্কিপক্সের একাধিক ঘটনার ওপর কড়া নজর রাখছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্তত ১১টি দেশে মাঙ্কিপক্স নামের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন পুরো বিশ্ব। দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধে সব বন্দরে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শনিবার রাতে বিষয়টি জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দর, স্থলবন্দরসহ সমস্ত বন্দরগুলোকে আমরা সতর্ক থাকতে বলেছি। সন্দেহভাজন কেউ এলে যেন তাকে চিহ্নিত করা যায় এবং অতিদ্রুত যেন তাকে সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘মাঙ্কিপক্স নিয়ে আমাদের এতো আতঙ্কিত হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ভাইরাসটির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা সারাবিশ্ব থেকেই তথ্য-উপাত্ত নেব এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা নেওয়ার সেটি আমরা নেব।’ মাঙ্কিপক্সের বিষয়ে সব জেলার সিভিল সার্জনদের সতর্ক করা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে ডা. নাজমুল বলেন, ‘আমরা যখন কোনো নির্দেশনা দিই, তখন সেটি জেলা সিভিল সার্জন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগের সব পর্যায়েই চলে যায়। সব জেলায় তো স্থলবন্দর নেই। যেসব জেলায় আছে সেগুলোতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।’ এদিকে, গত শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, এরই মধ্যে ইউরোপের ১১টি দেশে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ১০০। অবশ্য, বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাস মহামারির মতো সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন না। সার্স-কভ-২ ভাইরাসের মতো সহজে মাঙ্কিপক্স ছড়ায় না বলে তারা মনে করছেন। মাঙ্কিপক্স সাধারণ একটি ভাইরাসজনিত মৃদু রোগ। এটি প্রাণীবাহিত। এর উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর ও ফুসকুড়ি।

বানরে শনাক্ত হওয়া রোগটি ঘনিষ্ঠ স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। তবে আফ্রিকার বাইরে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এতদিন পর্যন্ত বিরল ছিল। ফলে ইউরোপসহ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় রোগটি ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

খুব একটা উৎকণ্ঠায় থাকার বিষয় না হলেও আমাদের বুঝতে হবে, করোনা আমাদের এখনো ছেড়ে যায় নি। কয়েক মাস ধরে আমাদের দেশে সংক্রমণ ১ শতাংশেরও নিচে থাকা এবং মৃত্যুহার শূন্য থাকায় মানুষ আশ্বস্ত হয়ে উঠছিলো।কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এতে সন্তুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। কেননা, এটা পরিষ্কার যে করোনা এখনো সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি। মাঙ্কিপক্স নামে নতুন ভাইরাস বড় ধরনের মহামারী আকারে বিপর্যয় ঘটাতে না পারলেও এর সংক্রমণ যেন বৃদ্ধি না পায়, তার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রয়োজনে আগের মতোই সব শক্তি নিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে