নতুন অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনার বাস্তবায়ন প্রয়োজন

| শনিবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে কতটা উন্নতি করছে তার প্রধান নিয়ামক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। সহজ ভাষায় অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি বলতে মোট দেশজ উৎপাদনের বর্ধিত অংশের শতকরা মানকে বোঝায়। বাৎসরিক প্রবৃদ্ধি হিসাবের সময় বৎসরান্তে পণ্য ও সেবার মূল্যমান চলতি মূল্যে নিরূপিত হতে পারে। মাথাপিছু জিডিপি হলো দেশগুলোর সমৃদ্ধি নির্ধারণের একটি বিশ্বব্যাপি পরিমাপ। একটি দেশের সমৃদ্ধি বিশ্লেষণে অর্থনীতিবিদরা জিডিপির পাশাপাশি মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি ব্যবহার করেন। একটি দেশের জিডিপি দেশটির মোট জনসংখ্যার হিসাব দিয়ে ভাগ করে এটি গণনা করা হয়।
গত ১৫ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে ‘মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকে ছাড়িয়েছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মাথাপিছু জিডিপির ক্ষেত্রে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রতিবেশি দেশ ভারতকে পেছনে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক (ডব্লিউইও) রিপোর্টে বলা হয়, ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ১০.৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার দাঁড়াতে পারে, যা চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। করোনাভাইরাস মহামারির রোধে দেশব্যাপি কড়া লকডাউনের কারণে তীব্র অর্থনৈতিক সংকোচনে এই প্রবৃদ্ধি হ্রাস ঘটেছে। অপরদিকে বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপি ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার।
বাংলাদেশের উন্নয়নে দাতা সংস্থা ও দেশগুলোর সহযোগিতা অব্যাহত আছে। কিছু সময় আগেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে পরিকল্পনা ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অগ্রগতিসমূহ গ্রহণ করেছিল দাতারা। সরকার ও দাতা-উভয় পক্ষ সে সময় মনে করেছিল, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে কয়েকটি বিষয় সামনে রয়েছে। সেগুলো হলো শোভন কাজ সৃষ্টি করা এবং প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগের বাধা দূর করা; সুশাসন, আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ব্যবস্থা শক্তিশালী করা; হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী করা; দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি; নারীর ক্ষমতায়ন; জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা প্রভৃতি।
সুশাসন ব্যবস্থা জোরদার করতে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এছাড়া বিচার খাতের (জাস্টিজ সেক্টর) সংস্কার, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ও তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়ন, প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে বলেও তারা মনে করেন।
আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, এটি লক্ষ্যণীয় যে বাংলাদেশ এবং ভারত উভয়ের চলতি মূল্যে জিডিপির হিসাব করা হয়েছে। আইএমএফ আগামী বছরে ভারতের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের আভাস দিয়েছে, এতে ২০২১ সালে মাথাপিছু জিডিপিতে ভারত সামান্য ব্যবধানে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যাবে। ডলারের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ২০২১ সালে ৮.২ শতাংশ বাড়বে, বিপরীতে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ৫.৪ শতাংশ। এতে ভারতে মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ২ হাজার ৩০ ডলার, বাংলাদেশের হবে ১ হাজার ৯৯৯ ডলার।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের রিপোর্ট অনুসারে বলা যায়, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশ হবে বাংলাদেশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু মৃত্যুরোধ ও গড় আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করা হয়েছে এই রিপোর্টে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিবারে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ভূমিকার প্রশংসা করেছেন অর্থনীতিবিদগণ। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে ও বেকার সমস্যা নিরসনে আত্মকর্মসংস্থানের কোনো বিকল্প নেই। সরকার বেকার যুব সমপ্রদায়ের আত্মকর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, কর্মমুখী শিক্ষা ও তরুণদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে। বলা হয়ে থাকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা হলো অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তারা দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস করতে বাংলাদেশের কৃষি, চিকিৎসা এবং আধুনিক যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ উদ্ভাবন, তৈরি এবং মেরামতের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। বর্তমান সরকার ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার যে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে, তার জন্য নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সরকারের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে নতুন অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনার বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে