নগর পরিকল্পনায় ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ ছিলেন দূরদর্শী

নাগরিক স্মরণসভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী II তাঁর ভালো কাজ তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে : আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ জীবদ্দশায় একজন সফল ব্যক্তি। তারচেয়েও আমি বেশি বলবো তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে যেখানেই হাত ছুঁয়েছেন, সেটাকে একটা অপরূপ রূপে পরিণত করেছেন। একটা বিষয় আমি মনে করি, বর্তমানে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরো সমৃদ্ধি হচ্ছে। অনেক মানুষের কাছে অনেক অর্থবিত্ত আসছে। কিন্তু মূল্যবোধের জায়গা থেকে আমরা একটু দূরে আছি। যেটি ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ সেই মূল্যবোধ ধারণ করতেন। প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করার পেছনে তিনি সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে প্রত্যেকটি জায়গায় যে অবদান রেখেছেন এবং যে দূরদর্শিতা তিনি দেখিয়েছেন নগর পরিকল্পনায় সেটি অনবদ্য।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার এম আলী আশরাফের নাগরিক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, তার উত্তরসূরি হিসেবে আমি আশা করবো প্রকৌশলী সমাজ এবং পেশাজীবী মহল তিনি যেভাবে একটা দর্শন ধারণ করেছেন সেটা যাতে ধারণ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যেভাবে মানুষের কল্যাণের রাজনীতির কথা বলেছেন, আলী আশরাফও তেমনি বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শিক কর্মী হিসেবে সেটাই করেছেন। বর্তমান প্রজন্ম আলী আশরাফ সাহেবের মতো একজন গুণী মানুষকে হারিয়েছে এটা একটা বড় ক্ষতি। তবে তার জীবন থেকে আমরা শিক্ষালাভ করবো এটা আমাদের প্রত্যাশা। তিনি যেভাবে একেবারে প্রান্তিক মানুষের জন্য চিন্তা করেছেন এটি অতুলনীয়। সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক স্মরণ সভা কমিটির চেয়ারম্যান ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘অল আর ইক্যুয়াল’। আসলে সকলে সমান। কিন্তু অনেকে আছেন তারা সমান থেকে একটু উঁচুতে। তিনি হলেন, ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ। কারণ তিনি কর্মদক্ষতা ও কাজের মধ্য দিয়ে এবং পেশার মধ্যে দিয়ে সেটি প্রমাণ করে গেছেন। তিনি ভালো কাজ করে গেছেন এজন্য আমরা বারবার তাঁকে স্মরণ করবো। যে পথটা তিনি দেখিয়ে গেছেন, সেটা যদি আমরা অনুসরণ করি তবে তার প্রতি সবচেয়ে বড় সম্মানটা দেখানো হবে। ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ মা ও শিশু হাসপাতালে কোভিডের জন্য অনেক কাজ করেছেন। তিনি নিজেও সেই কোভিডের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এটাই জীবন। একটা কথা মনে রাখবেন, জীবন কখনো থেমে থাকে না। একজন যাবে, আরেকজন আসবে, সুতরাং আমাদের জীবন যতদিন আছে সেটা আমরা উপভোগ করবো। এছাড়া অন্যের জন্য আমাদের জীবনকে উৎসর্গ করার চেষ্টা করবো।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ একজন নিভৃতচারী মানুষ। তিনি কখনো প্রচারে আসতে চাইতেন না। সব সময় পর্দার অন্তরালে থেকে কাজ করতেন। আজকে তাঁর নাগরিক স্মরণসভা, সবাই কিন্তু প্রাণের টানে এখানে এসেছেন। তাঁর জীবন কর্ম যেমন মহিমান্বিত, তেমনি তার মৃত্যুটাও মহিমান্বিত। তিনি করোনা যুদ্ধের একজন সম্মুখযোদ্ধা ছিলেন। জীবনে জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানে কোন ভালো কাজটি করলাম সেটিই বিবেচ্য বিষয়। ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ শুধু শহরে নয়, প্রান্তিক এলাকাতেও মানুষ তার ভালো কাজগুলোর সাক্ষ্য দিচ্ছে।
সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ একজন সামাজিক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সামাজিক অনুষ্ঠানে দেরি হলেও উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব।
স্মরণসভায় প্রয়াত ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফের ছোট ভাই আলী নুর মঞ্জু বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর মনে হয়েছিল, মাথার ওপর ছায়া সরে গেছে। কিন্তু না, আমার বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ ছায়া হয়ে দাঁড়ালেন। মা যখন মারা গেলেন-তখনও মনে হলো, এই বুঝি ছায়া সরে গেলো। কিন্তু এমন একজন বড় ভাই আমাদের ভাইদের মাথায় ছায়া হয়ে মা ও বাবার দায়িত্ব পালন করেছেন। আজকে আমার সেই বড় ভাই নেই। তিনি আসলে সবার জন্যই অকাতরে করে গেছেন। কি গ্রাম, কি শহর।
নাগরিক স্মরণসভা কমিটির অর্থ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মো. মোরশেদ হোসেনর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক বেনু কুমার দে, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এম এ তাহের খান, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আওরঙ্গজেব, সাবেক সংসদ সদস্য মজহারুল হক শাহ চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চবি অধ্যাপক ড. সুলতান আহমদ, চট্টগ্রাম ক্লাবের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. মঈনুল ইসলাম মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার মতিউর রহমান, দ্যা পিপলস ভিউ সম্পাদক ওসমান গণি মনসুর, সাবেক লায়ন গভর্নর রফিক আহমদ, চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের সদস্য শওকত হোসেন এফসিএ, চট্টগ্রাম আইন কলেজের অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর চৌধুরী, জেসমিন সুলতানা পারু, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল মনছুর, বিএমএ কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. শেখ শফিউল আজম, চট্টগ্রাম ড্রাইডকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এনামুল বাকী, নাগরিক স্মরণসভা কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হারুন, যুগ্ম সদস্য সচিব মো. রেজাউল করিম আজাদ ও আলী আশরাফের ছোট ভাই ব্যারিস্টার আলী রেজা ও ডা. আলী নেওয়াজ। ম্মরণসভায় অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফের জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন ফাতেমা জেবুন্নেসা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএ নিয়ে ৩৩ হালদায় আবারও মৃত ডলফিন উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধখালেদার স্বাস্থ্যের অবনতির দায় বিএনপির : তথ্যমন্ত্রী