নগরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী নতুন শনাক্ত ৬৪

মশক নিধনে করণীয় ঠিক করে দিল মন্ত্রণালয় রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে ভেষজ ওষুধে ঝুঁকছে চসিক

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৮ অক্টোবর, ২০২২ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

নগরে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গতকালও ৬৪ জন শনাক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত এক হাজার ৫৮৩ জন শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনে শনাক্ত হয় ৭৬৮ জন। এ অবস্থায় মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশনের জন্য ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠন এবং মশক নিধনে ‘চিরুনি অভিযান’ পরিচালনাসহ একাধিক করণীয় ঠিক করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এদিকে মশক নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশকে পরিবর্তন আনছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এক্ষেত্রে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে ‘ভেষজ’ ওষুধ ব্যবহার করতে চায় সংস্থাটি। এলক্ষ্যে ‘মাসকুবার’ নামে একটি ভেষজ ওষুধও সংগ্রহ করছে সংস্থাটি। বিভিন্ন গাছের তেল দিয়ে তৈরিকৃত ওষুধটি পরীক্ষামূলকভাবে খুলশী এলাকায় স্প্রে করা হবে। সেখানে সাফল্য এলে পর্যায়ক্রমে পুরো নগরে এর ব্যবহার বৃদ্ধি করা হবে।
অবশ্য সরকারিভাবে অনুমোদন নেই মাসকুবারের। তবে গত বছর চসিকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধটি স্প্রে মেশিন দিয়ে ব্যবহার করার পর শতভাগ মশা মরেছে। তবে ফগার মেশিন দিয়ে ব্যবহারে মশা মরেছে মাত্র ১৪ শতাংশ। তাছাড়া ওই গবেষক দল রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প হিসেবে জৈব নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চালুর সুপারিশ করে। মূলত এ কারণে স্প্রে করার জন্য মাসকুবার সংগ্রহ করে চসিক।
এ বিষয়ে চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ১০০ লিটার মাসকুবার সংগ্রহ করছি। এর মধ্যে আজ (গতকাল) ৫০ লিটার সরবরাহ করেছে। তবে এটা অন্য উপকরণসহ মেশালে পাঁচ হাজার লিটার হবে। প্রাথমিকভাবে খুলশীতে মাসকুবার ব্যবহার করব। সেখানে সাফল্য এলে অন্য এলাকায়ও ব্যবহার করা হবে।
এ কর্মকর্তা বলেন, ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপদ্রব কমাতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। স্বচ্ছ পানি জমে থাকে এমন জায়গা বিশেষ করে ছাদবাগানে প্রতিদিন অভিযান হচ্ছে। জরিমানা করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করছি। এরসঙ্গে ওষুধও ছিটানো হচ্ছে।
করণীয় ঠিক করল মন্ত্রণালয় :
সারা দেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য গত মাসে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা। গত বৃহস্পতিবার ওই সভার সিদ্ধান্তগুলো রেজ্যুলেশন আকারে প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এতে সিটি কর্পোরেশনের জন্য নির্ধারিত করণীয়গুলোর উল্লেখ রয়েছে। চলতি সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে করণীয়গুলো বাস্তবায়নে চসিকের কাছে নির্দেশনা দেয়ার কথা রয়েছে।
করণীয়গুলো হচ্ছে- সিটি কর্পোরেশনে কুইক রেসপন্স টিম প্রস্তুত রাখা এবং অধিকতর ডেঙ্গু আক্রান্ত এলাকা বা ওয়ার্ডে তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ রাখার স্বার্থে কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে চলমান প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সাব-জোনে ভাগ করে সকল শ্রেণি পেশার প্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবক এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত করে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে কমিটি করতে হবে। গঠিত ওই কমিটির তালিকা স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ করতে হবে।
এছাড়া শনাক্তকৃত ডেঙ্গু রোগীর সঠিক ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ করতে হবে স্বাস্থ্য বিভাগকে। এরপর কর্পোরেশন ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালসমূহের তথ্য জনসাধারণের জন্য ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করবে। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পরপরই স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি এড়ানোর স্বার্থে জনসাধারণ যেন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় এ বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হবে কর্পোরেশনকে। এক্ষেত্রে যে সকল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে তথ্য প্রদান করবে না তাদের বিরুদ্ধে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান করবে।
এডিস মশা নিধনের কার্যক্রম হিসেবে নির্মাণাধীন স্থাপনার সামনে মালিক কর্তৃক নিজ উদ্যোগে ডেঙ্গু সতর্কতা সাইনবোর্ড (মশক ও লার্ভামুক্ত) লাগাবে। তবে লার্ভা পাওয়া গেলে অবহেলার দায়ে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনবে কর্পোরেশন।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, রেলওয়ে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তর বা সংস্থাসমূহ এবং অন্যান্য বেসরকারি দপ্তরের আবাসন ও অন্যান্য স্থাপনা নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিয়মিত কার্যকর কীটনাশক স্প্রে করবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এক্ষেত্রে দপ্তর বা সংস্থা প্রয়োজনে সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় করবে। রেলওয়ের পরিত্যক্ত ওয়াগন, টায়ার ও থানার মামলার আলামত হিসাবে জব্দকৃত যানবাহনসহ লার্ভা জন্মায় এ ধরনের স্থাপনা ধ্বংস বা নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া ছাদবাগান পরিচ্ছন্ন রাখাসহ ফুলের টবে এডিস মশা প্রজননে প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে নিয়মিত লার্ভিসাইড বা কেরোসিন দেওয়ার জন্য প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করবে সিটি কর্পোরেশন। পাশাপাশি এডিস প্রজননে ইচ্ছাকৃতভাবে উৎসাহিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংরক্ষিত মহিলা সদস্য হলেন যারা
পরবর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে পালাল আসামি