নগরের পিছিয়ে পড়া জনগণের জীবনমান নিশ্চিত করতে হবে

| মঙ্গলবার , ২৮ জুন, ২০২২ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

নগরের উন্নয়ন ও নগর পরিকল্পনা কেনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। দেশের অর্থনীতি ও সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় রেখেই নগর পরিকল্পনা করেন নগর বিশারদগণ। আর সেই পরিকল্পনায় জনসংখ্যা, মাটির ধরন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, অর্থনীতিসহ আরো অনেক কিছু বিবেচনায় রাখতে হয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ১৯১৭ সালে স্যার প্যাট্রিক গেডিস ঢাকা শহরের জন্য একটি প্ল্যান করেছিলেন। এরপর ১৯৫৯ সালে ঢাকা, ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম, ১৯৬৬ সালে খুলনা এবং ১৯৮৪ সালে রাজশাহী শহরের জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়।এই মাস্টারপ্ল্যান ছিল ২০ বছর মেয়াদি। এইসব মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, বেশ কিছু অবকাঠামো, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা তৈরি করা হয়। কিন্তু পুরো পরিকল্পনা কখনোই বাস্তবায়ন হয়নি।

অতি সাম্প্রতিক তথ্যে জানা যায়, পরিকল্পিত নগর গড়তে ১৫ বছর পর আবার মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। এ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হলে আধুনিক নগরীর সুফল মিলবে বলে সংস্থাটি যেমন মনে করছেন, তেমনি আমরাও তা মনে করি।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১৯৯৫ সালে মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান করা হয়। কিন্তু ১৯৯৫ সাল ও ২০০৮ সালে তৈরি হওয়া প্ল্যানের শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০৪১-এর সাথে মিল রেখে ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার মাস্টার প্ল্যান (২০২০-২০৪১) প্রণয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যা সত্যিই সুখবর।

আমরা জানি, কোনো মাস্টারপ্ল্যানই পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয় না। তবে একটি প্ল্যান তৈরি থাকলে তা দিয়ে পরিকল্পিত নগরায়ণ করা যায়। মাস্টারপ্ল্যান তৈরির এ প্রকল্প যখন শুরু হয়েছে, তা চলবে আগামী দুই বছর বলে জানা গেছে। সিডিএ আশা করছে, সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্ল্যান পাওয়া যাবে। যতটুকু জানি, মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো চট্টগ্রাম মেট্রোপলটিন মাস্টারপ্ল্যানের উন্নয়নের জন্য একটি কৌশলগত কাঠামো নীতি ও গাইডলাইন তৈরি করা এবং সেগুলো পর্যালোচনা করা। ৪১ সালের জন্য একটি নতুন ও বাস্তবসম্মত মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুত করতে পারা রীতিমত সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমরা এ কাজে স্বচ্ছতা যেমন চাই, তেমনি চাই আন্তরিকতা।

উন্নয়ন মানে আনন্দ, সর্বজনের সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা, সুস্থতা। যা দেশ ও জনপদকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়। যেন কাউকে বিপন্ন না করে। চট্টগ্রামের উন্নয়নে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই উন্নয়নে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নাগরিকদেরও সক্রিয় থাকতে হবে। আবার সবাইকে সজাগ, জাগ্রত ও সক্রিয় করার দায়িত্ব সর্বজনের প্রতিনিধিদের। চট্টগ্রামের উন্নয়নে এবং চট্টগ্রামকে বাঁচাতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

এখানে উল্লেখ্য, আটটি প্রকল্প ও থোক খাতের বিপরীতে অনুদান হিসেবে সর্বোচ্চ আয় ধরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ১৬১ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। আকার কমলেও প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে নগর উন্নয়ন খাতে। প্রকল্প ছাড়াও রাজস্ব তহবিলের বিপরীতে ২২টি খাতে নগর উন্নয়নে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৫০ লাখ বরাদ্দ রাখা হয়, যা প্রস্তাবিত বাজেটের ৫৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। গত রোববার দুপুরে নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে বাজেট ঘোষণা করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, সফলভাবে বাজেট যাতে বাস্তবায়ন করতে পারি সেটা চিন্তা করেই এবার বাজেট প্রণয়ন করেছি। আমি হয়তো আকাশচুম্বি বাজেট ঘোষণা করলাম। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। তখন স্বপ্ন স্বপ্নই থেকেই যায়। স্বপ্নকে যাতে বাস্তবে রূপ দেয়া যায় সেটা বিবেচনা করে এবারের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়।

আসলে বাজেট উত্থাপন বড় বিষয় নয়; বড় বিষয় হলো তার বাস্তবায়ন। আমরা চাই, নগর উন্নয়নে তাঁর গৃহীত প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হোক। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, আমাদের শহর ও জনবসতিগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাত সহনশীল ও টেকসই হতে হবে। তাঁরা বলেন, নগরের পিছিয়ে পড়া জনগণের জীবনমানের মানবিক মান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা ও পরিষেবার পরিমাণগত ও গুণগত মানের ভিত্তিতে পরিকল্পনাগত সূচক-মান নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে