নগরের ধুলো দূষণের উৎসসমূহ বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে

| সোমবার , ২০ মার্চ, ২০২৩ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম যেন ধুলোর নগরীতে পরিণত হয়েছে। কোথাও উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে, কোথাও যথাযথ দায়িত্ব পালনের অভাবে নগরে বায়ু দূষণ বেড়েই চলছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে মানুষের ভোগান্তি চরমে থাকে। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, ‘দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন অনুযায়ী কাজের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়াসহ নিয়মিত পানি ছিটানোর বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানছে না নগরীর সেবা সংস্থাগুলো। সরকারি এবং বিদেশি সংস্থার অর্থায়নে বাস্তবায়িত মেগা প্রকল্পগুলোতেও পরিবেশের বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ায় পরিবেশের সর্বনাশ হচ্ছে। অথচ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি প্রকল্প গ্রহণের শুরুতেই বিবেচনায় নেওয়া হয়।’ গত ১৮ মার্চ ‘ধুলোয় ধূসর সড়কে দুর্ভোগ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে। এতে বলা হয়েছে, নগরীর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে উড়ছে ধুলোবালি। বিশেষ করে লালখান বাজার মোড় থেকে টাইগারপাস মোড় এবং অক্সিজেনমুরাদপুর সড়কে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজারো যাত্রীসাধারণ এবং পথচারীদের নাকাল হতে হচ্ছে ধুলোবালিতে। একদিকে ফ্লাইওভারের কাজ, অন্যদিকে ওয়াসার পাইপ লাইনের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির ফলে মুরাদপুরঅক্সিজেন সড়ক ধুলোর স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি জলাবদ্ধতার কাজের জন্য ড্রেন থেকে তোলা কাদামাটি শুকিয়ে পুরো সড়ক ধুলোয় ধূসর হয়ে পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে যাতায়াতের সময় শ্বাস নেয়াই যেন দায় হয়ে পড়েছে যাত্রী ও পথচারীদের।

নগরবাসীর অভিযোগ, ভাঙা রাস্তার ভোগান্তি তো আছেই। এখন ধুলোর কষ্ট মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে। পাশাপাশি যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও শব্দ নগর জীবন বিষিয়ে তুলেছে। এতে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। তবে সবচেয়ে বেশি ভুগছে শিশু ও বয়স্করা।

সত্যিকার অর্থে ধুলো দূষণে নাকাল নগরবাসী। ধুলো এখন নগরবাসীর কাছে আরেক বিড়ম্বনার নাম। শুষ্ক মৌসুমে এই দূষণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে ধুলাজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ। শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে রোগ জীবাণুমিশ্রিত ধুলা ফুসফুসে প্রবেশ করে সর্দি, কাশি, ফুসফুস ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস, শ্বাসজনিত কষ্ট, হাঁপানী, যক্ষা, এলার্জি, চোখ জ্বালা, মাথা ব্যথা, বমি ভাব, চর্মরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। এরমধ্যে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরাই ধুলো দূষণের ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ধুলো দূষণের কারণে নগরের প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে প্রতি মাসে অতিরিক্ত টাকা চিকিৎসায় ব্যয় করতে হচ্ছে। ধুলো দূষণের কারণে বৃক্ষের সালোকসংশ্লেষণ এবং ফুলের পরাগায়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে ফলের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ব্যবসাবাণিজ্যের বহুমুখী প্রসার, জনসংখ্যা, আবাসন, ব্যবসা ও শিল্প স্থাপনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে চট্টগ্রাম নগরীতে। শিল্পায়ন কিংবা নগরায়ণ যেন বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে এই শহরের জন্য। কারণ অনেকাংশেই যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে উন্নয়ন কাজের ফলে অনেক আগে থেকেই মাত্রাতিরিক্ত দূষণের শিকার এই শহর। অব্যাহত দূষণের ফলে ধুলাবালি ও ধোঁয়ার সঙ্গে বন্দর নগরীর বাতাসে বাড়ছে ব্ল্যাক কার্বনসহ নানান বিষাক্ত উপাদান, যা মানবদেহে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ বাড়াচ্ছে।’ তাঁরা বলেন, নগরীতে প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আবাসনের চাহিদা পূরণ করতে নগর এলাকায় পুরনো ভবন ভাঙা, নতুন নির্মাণ ও ভবন নির্মাণ সামগ্রী রাস্তার ওপর যত্রতত্র ফেলে রাখায় বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়কে মালামাল, ময়লার স্তূপ আর যানবাহনের ছোটাছুটিতে বাতাসে ধুলাবালির আধিক্যতা জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে। উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা ও পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি অনুসরণ না করায় বায়ু দূষণ দিন দিন তীব্র হচ্ছে।

পরিবেশ সচেতন নাগরিকরা তাদের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে অচিরেই ধুলো দূষণের উৎসসমূহ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ড্রেনেজ এবং রাস্তাঘাট উন্নয়ন, মেরামত ও সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ রাস্তাজায়গা খোঁড়াখুঁড়ি করে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন হওয়ামাত্র তা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং পর্যায়ক্রমে তা চালিয়ে যাওয়া, খোঁড়াখুঁড়ির সময় যাতে ধুলো দূষণ না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি রাখার বিষয়েও তাঁরা জোর দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, সব সংস্থার সমন্বয় সাধন করা গেলেও বায়ু শোধন যন্ত্রপাতি এটিপি (এয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে আইন করতে পারলে চট্টগ্রামের দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে