নগরের কোন এলাকায় কেমন শব্দ দূষণ

| বুধবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

গাড়ির হর্ন, নির্মাণ কাজ, মাইক কিংবা সাউন্ড বক্সের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারে সহনীয় মাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মাত্রার শব্দের তীব্রতায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিবেশ। পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের জরিপে দেখা গেছে, পরিবেশ আইনে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হাসপাতালের আশপাশেও নির্ধারিতের চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দে দূষণ ঘটছে। খবর বিডিনিউজের। গত ২২ আগস্ট নগরীর ৩০টি স্পটে শব্দের মাত্রা পরীক্ষা করে ‘নীরব এলাকা’ শ্রেণিভুক্ত ১৪টি স্পটে শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে ৬৭ দশমিক ৬ থেকে ৮০ দশমিক ৫ ডেসিবল পর্যন্ত। পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণাগারের এ জরিপে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ গেট এবং একে খান রোডের আল-আমিন হাসপাতালের সামনে শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে ৭৯ দশমিক ৫ ডেসিবল। আন্দরকিল্লা জেমিসন রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল এলাকায় ৭৫ দশমিক ৫, পাঁচলাইশ সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, লালখান বাজার মমতা ক্লিনিকের কাছে ৭৬ দশমিক ৫ এবং আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে পাওয়া গেছে ৬৭ দশমিক ৬ ডেসিবল। অথচ শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী এসব এলাকায় শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৪৫ ডেসিবল। চিকিৎসকরা বলেছেন, এ ধরনের শব্দ দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোস্তফা মাহফুজুল আনোয়ার বলেন, শব্দ দূষণের ফলে মানবদেহে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি সেটার প্রভাব পড়তে পারে মায়ের গর্ভে থাকা শিশুদেরও। অতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারণে মানুষ অনেক সময় স্থায়ীভাবে শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলে। যেটা চিকিৎসা করেও আর ফিরিয়ে আনা যায় না। এছাড়া রক্তচাপ, অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা ও মানসিক দুশ্চিন্তার মতো রোগও শব্দ দূষণের কারণে হয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর আবাসিক এলাকাগুলোতেও নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি শব্দের তীব্রতা পাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপে। আবাসিক এলাকার সাতটি স্পটে করা জরিপে দক্ষিণ খুলশী এলাকায় শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ৭৮ দশমিক ৫ ও চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার সামনে সর্বনিম্ন ৬৭ ডেসিবল।
জরিপে বাণিজ্যিক এলাকার ছয়টি স্পটের মধ্যে জিইসি মোড়ে শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৯৭ দশমিক ৫ ডেসিবল আর সর্বনিম্ন ছিল অঙিজেন মোড়ে ৭৭ দশমিক ৫০ ডেসিবল। এছাড়া সিইপিজেড মোড়ে ৮৯ দশমিক ৫, আগ্রাবাদ মোড়ে ৮৮, একে খান মোড়ে ৮৬ দশমিক ৫, বহদ্দারহাট মোড়ে ৮৪ দশমিক ৫ ও অঙিজেন মোড়ে পেয়েছে ৭৭ দশমিক ৫ ডেসিবল মাত্রার শব্দদূষণ।
পরিবেশ আইনে যেসব এলাকায় আবাসিক ভবনের পাশাপাশি বাণিজ্যিক এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলোকে ‘মিশ্র এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ধরনের দুটি এলাকার মধ্যে নগরীর মুরাদপুর ও মেহেদীবাগ এলাকায় শব্দের মাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে যথাক্রমে ৬৬ দশমিক ৫ ও ৭৯ দশমিক ৫ ডেসিবল করে।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইনে সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আবাসিক এলাকায় ৫০ ডেসিবল, মিশ্র এলাকায় ৬০ আর বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবল শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা আছে।
চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণাগারের পরিচালক ইশরাত রেজা বলেন, শব্দ দূষণ বাড়ছে। তবে এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার, নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা যন্ত্রের কারণে শব্দ দূষণটা বেড়ে যাচ্ছে। এগুলোর শব্দ নিয়ন্ত্রণ করলে দূষণ অনেকটা কমে যাবে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, সচেতনতার জন্য আমাদের বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন স্তরের গাড়ি চালকদের সম্পৃক্ত করছি। এতে আমরা ইতিবাচক একটা ফলাফল আশা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের সংক্রমণের হার ৭.১৬
পরবর্তী নিবন্ধসিআরবি রক্ষায় গাইলেন কফিল আহমেদ