নগরীর বুকে বিনোদনের অন্য এক জগৎ

ফয়’স লেক কমপ্লেক্স

| রবিবার , ৩ জুলাই, ২০২২ at ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ

দিগন্তজুড়ে আকাশের নিচে স্বচ্ছ জলরাশি। এর দুপাশে সবুজ পাহাড়। পাহাড়ে হরেকরকমের গাছগাছালি আর রঙবেরঙের বুনো ফুলের আসর। পাখির কিচিরমিচির শব্দ। মাছরাঙার ছুটে চলা। পানকৌড়ির ডুব সাতার। সংরক্ষিত বন আর পাহাড়ে খেলা করে বুনো হরিণ ও খরগোশ। কখনো কখনো দেখা মেলে বানরের দল। পাহাড়ের বুক চিরে চলে যাওয়া জলধারার মধ্যেও বৈচিত্রময় জলজ উদ্ভিদ। ঘাস ফড়িং, প্রজাপতি, মৌমাছিসহ নানারকম পোকামাকড়ের উপস্থিতি। সবমিলিয়ে এ যেন নগরীর বুকে অন্য এক জগৎ। বলছিলাম চট্টগ্রাম নগরীর মাঝেই প্রকৃতির এক অপরুপ কীর্তি ফয়’স লেক এর কথা।
নগরীর জিরোপয়েন্ট খ্যাত জিইসি হতে প্রায় দুই কিলোমিটার পরেই এর অবস্থান। প্রধান সড়ক হতে একটু এগোলেই দেখতে পাওয়া বিশাল এক তোরণ। তা পেরিয়ে প্রবেশ করে সিঁড়ি ভেঙে উপড়ে উঠলেই দেখা মিলবে ফয়’স লেকের।
প্রকৃতির মাঝে আধুনিকতার সম্বনয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই বিনোদন পার্ক। শুরুতেই রয়েছে এ্যামিউজমেন্ট পার্ক যা বেশ কিছু রাইড নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। পার্কের উল্লেখযোগ্য রাইডস্‌গুলোর মধ্যে রয়েছে ফেরিস হুইল, বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, পাইরেট শীপ, বেবি কেরাওসাল, কফি কাপ, ড্রাই স্লাইড। প্রায় একশ ফুট উচু ফেরিস হুইলে উঠলে এক চক্করে দেখা যাবে প্রায় পুরো পার্ক। বাম্পার কারে চড়ে আরেকজনের কারকে ধাক্কা দেয়ার প্রতিযোগিতা, দেখে মনে হবে যেন এক মজার যুদ্ধে নেমেছে সবাই। ফ্যামিলি রোলার কোস্টার এক সঙ্গে অনেকে উঠে ঢেউ খেলানো গতিতে দ্রুত এগিয়ে চলে। এর পরেই দেখা মিলবে পাইরেট শীপ, এই প্রকান্ড আকারের রাইডটি দোলনার মতো দুলতে থাকে ফলে অনেকেরই মাথা ঘোরে যা অত্যন্ত মজার।
বাচ্চাদের জন্য ফয়’স লেক এ্যামেউজমেন্ট ওর্য়াল্ড যেন এক স্বপ্নরাজ্য। কেন না সাজানো গোছানো এই জায়গাতে বাচ্চারা ইচ্ছেমতো ছুটাছুটি করতে পারে। বাচ্চাদের আনন্দ বিনোদনের জন্য সবরকম উপকরণ আছে এখানে। বাচ্চাদের রাইডস্‌গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বেবী-কেরাওসাল, ট্রেন, হ্যাপী-জাম্প, দোলনা ইত্যাদি। কপিকাপ রাইডের পাশ দিয়ে সিড়ি বেয়ে পাহাড়ে উঠলে দেখা পাওয়া যাবে অননন্য সুন্দর এক পিকনিক স্পট, যা ফটো কর্ণার নামে পরিচিত। সেখান থেকে যাওয়া যাবে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে। আগত দর্শণার্থী এখানে পরিচিত হতে পারবে প্রাণীজগতের সঙ্গে। পাহাড় চূড়ায় রয়েছে টিয়া, ঈগল পাখি, অজগর, চিতা বাঘ, ভালুকসহ নানা বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য। লেকের শেষ প্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে রোমাঞ্চকর জলরাজ্য সী-ওর্য়াল্ড ওয়াটার পার্ক। সারাদিন জলকেলি উসবে মেতে উঠার জন্য রয়েছে আধুনিক সব মজার রাইডস।
সী-ওর্য়াল্ডের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান ওয়েভ পুল, যেখানে সাগড়ের ঢেউয়ের মতো কৃত্রিম ঢেউ খেলা করে। ওয়েভ পুলের সামনের স্টেজে পরিবেশিত হয় ডিজে শো। কৃত্রিম ঢেউ আর মিউজিকের তালে তালে নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে আগত দর্শনার্থীরা। পাশেই ড্যান্সিং জোনে কৃত্রিম বৃষ্টি মন মাতানো মিউজিক আর রঙিন বাতির আলোক ঝর্ণায় নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে হারিয়ে যায় অন্য কোনো জগতে। চিলড্রেন পুলে বাচ্চাদের পানিতে খেলার জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় অনেকগুলো রাাইডস্‌। দর্শনার্থীদের জন্য ফ্যামিলি পুল অন্যতম আকর্ষণীয় রাইড, এই রাইডে চড়লে খুব দ্রুত গতিতে নিচের পানিতে লাফিয়ে পড়ে আরও রয়েছে টিউব স্লাইড, মাল্টি স্লাইড, প্লে-জোন। দেশের সর্ববৃহৎ ওয়াটার পার্ক হিসেবে বিবেচিত হয় এ পার্ক ।
অবকাশ যাপন কিংবা লম্বা ছুটি কাটানোর জন্য প্রকৃতি ও আধুনিকতার সম্বয়ে লেকের সামনে অনন্য এক স্থাপত্য শৈলীতে গড়ে তোলা হয়েছে ফয়’স লেক রিসোট ও বাংলো। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি কক্ষের সাথে রয়েছে ঝুলন্ত বারান্দা যেখান থেকে উপভোগ করা যাবে লেক ও সবুজ গাছগাছালির সৌন্দর্য। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের রিসোর্টে থেকে ফয়স লেকের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। রিসোর্টে ছোট সোনামণিদের জন্য রয়েছে খেলাধুলার ব্যবস্থা। খাবারের জন্য আছে চমৎকার একটি রেস্টুরেন্ট যা চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকে যেখানে পাওয়া যায় দেশী, ইন্ডিয়ান, চাইনিজ, থাই সবরকম খাবার। ফয়’স লেক বাংলো এক অনুপম সৌন্দর্যের প্রতীক যা নিরিবিলি পরিবেশে প্রকৃতির কোলে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশে অবস্থিত। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা সবসময় আকর্ষণ করে ফয়’স লেক বাংলো রিসোর্ট। মনেহয় এখানকার প্রকৃতি যেন প্রতিটি ঋতুতে প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। দিনে নানা রঙ্গের পাখি আর রাতে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনতে পাওয়া যায়। এমন নিরিবিলি পরিবেশ যেন প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানের জন্য অনন্য এক স্থান। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেক পর্যটক এসে ফয়’স লেক বাংলো রিসোর্ট এর পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। বাংলোর আশে পাশে বসে থাকলে মনে হবে সবুজের সাথে মিতালী ঘটেছে। তাই ঘুড়ে বেড়ানো কিংবা দল বেধে পিকনিক উল্লাসের জন্য আদর্শ এক স্থান ফয়স লেক কমপ্লেঙ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধর‌্যাবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে আবার ছাড়ানোর নামে অর্থ আদায়, গ্রেপ্তার ৬
পরবর্তী নিবন্ধদেশে এক বছরে মিনিপ্যাক বর্জ্যই ২ লাখ টন