নগরীর পানি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ

| সোমবার , ১৮ জুলাই, ২০২২ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে নগরীর বেশ কিছু নিচু এলাকা। গত কয়েকদিন ধরে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও বৃহস্পতিবার জোয়ারের পানির উচ্চতা ছিল বেশি। সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ৪১ মিটার, যা শুক্রবার ছিল ৫ দশমিক ৪৩ মিটার। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে রাজাখালী রোড, পূর্ব বাকলিয়া, ইসমাইল ফয়েজ রোড, আবু জহুর রোড, মিয়া খান নগর মাদ্রাসা রোড, চাঁন মিয়া লেন, বাইদ্দার টেক, ইছহাকের পুল, তক্তার পুল, পাথরঘাটা আশরাফ আলী রোড, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের পুরনো ভবনের সামনে এবং আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার নিচু এলাকা। ইছাহাকের পুল এলাকার বাসিন্দা জহুরুল আলম বলেন, বৃষ্টি নাই তবু শুধুমাত্র জোয়ারের পানিতে আমার ঘরে হাঁটু সমান পানি।

বৃষ্টি হলে কি হতো জানি না। চাক্তাই খালের কয়েক জায়গায় দেখলাম বাঁধ দিয়েছে সরকার। এ কারণে ঠিকমতো পানি চলাচল করতে পারছে না। মিয়াখান নগর এলাকার বাসিন্দা মোহছেনা আক্তার বলেন, হঠাৎ বাসায় পানি উঠে যাওয়ায় রান্না করতে পারিনি। আগে কখনো আমার বাসায় জোয়ারের পানি ঢোকেনি। অন্যদিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, জোয়ারের পানির সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্থায়ী কোনো সমাধান মিলেনি। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জনপ্রতিনিধিদের তাগাদা দেয়া হচ্ছে, যাতে জোয়ারের পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়। এর মধ্যে আবার সিডিএর স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজও চলছে ধীরগতিতে। এছাড়া চাক্তাই খালের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালের জায়গা পুনরুদ্ধার করা এবং কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং করে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা পত্রিকান্তরে বলেছেন, শুধু বর্ষা মৌসুমের দুয়েকদিন নয়; এ চিত্র সারা বছরের। জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। এর প্রধান কারণ অব্যবস্থাপনা। খালগুলোর সংস্কার নেই, স্লুইসগেট নেই, কোনো ধরনের তদারকি নেই। এর মাসুল গুনতে হচ্ছে মূল্যবান খাদ্য পণ্য পচিয়ে। দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এ দুরবস্থা দেখার যেন কেউ নেই।

আজাদীতে দু’জন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেছেন, চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে তিন বছরের বেশি সময় হলো। কিন্তু এখনো সেই অর্থে কাজের অগ্রগতি হয়নি। এখন জোয়ারের পানির কারণে নগরীর নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে যাচ্ছে। জোয়ারের পানির ঠেকানোর জন্য কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে? শুধুমাত্র গেট স্থাপনই তো সমাধান না। আমাদের যে সকল নদী খাল আছে সেগুলো ড্রেজিং করে পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানো হলে অন্তত জোয়ারের পানি এই পরিমাণ বাড়ত না। তিনি বলেন, নদী ও খাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানির ধারণক্ষমতা বাড়াতে পারি। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে পানি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, স্থপতি আশিক ইমরান বলেছেন, কর্ণফুলী তলদেশে প্রায় ২০ ফুট পর্যন্ত পলিথিনের আস্তর পড়েছে। এখন সেগুলো পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। ড্রেজিং করতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এখনো বিভিন্ন খালের মাধ্যমে কর্ণফুলীতে পলিথিন পড়ছে। আমাদের নগরীতে ওই অর্থে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নাই। কর্ণফুলী ড্রেজিং ছাড়াও কর্ণফুলীর দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর জায়গা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এছাড়া জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা যাবে নগরবাসী জোয়ারের পানির চাপ ও জলাবদ্ধতা থেকে তত দ্রুত মুক্তি পাবে।

আসলে হঠাৎ জোয়ারের পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা রীতিমত উদ্বেগজনক। বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যা চলছে। অথচ সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই, তাই মিলছে না সমাধান। কয়েকটা জায়গায় সড়ক উঁচু করা হলেও নিচু এলাকায় ঠিকই জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। জোয়ারের পানির প্রতিরোধক ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু সড়ক উঁচু করলেও নগরবাসী দুর্ভোগ লাঘব হবে না। বর্ষায় জলাবদ্ধতার সমাধানের পাশাপাশি জোয়ারের পানিতে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, তার সমাধান করাও জরুরি হয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে