নগরীর অটো ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা অচল

চুরি হয়ে গেছে লাইট, গাড়ি চলে হাতের ইশরায়।। কেন্দ্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগও কার্যত ভণ্ডুল

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৬ জুন, ২০২১ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থায় অটো সিগন্যাল ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। কার্যত ভণ্ডুল হয়ে গেছে নগরীর ট্রাফিক সিস্টেমকে কেন্দ্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগও । মোড়ে মোড়ে দীর্ঘদিন ধরে জ্বলা লাইটগুলোও চুরি হয়ে যাচ্ছে। যে কোন সময় লাইট স্ট্যান্ডের লোহাগুলোও খুলে নিয়ে বিক্রি করে দিতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। কোন কোন স্ট্যান্ডে রাত-দিন জ্বলছে লাইটগুলো। গাড়ি চলছে হাত ইশারায়। চট্টগ্রাম মহানগরে অটো ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম গড়ে তোলা অসম্ভব একটি ব্যাপার বলেও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। তাঁরা জানান, বিশ্বমানের বাসযোগ্য একটি নগরে রাস্তার পরিমাণ থাকতে হয় অন্তত ৩০ শতাংশ। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরীর রাস্তার পরিমাণ ৯ শতাংশ। প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। রাস্তায় যানবাহনের চাপ অত্যধিক। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শাহ আমানত সেতু কিংবা কালুরঘাট পর্যন্ত রাস্তাটিই মূলত প্রধান সড়ক। এর বাইরে অলংকার মোড় থেকে ট্রাংক রোড, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে স্ট্যান্ড রোড, কাপাসগোলা রোড, পোর্ট কানেক্টিং রোড, বায়েজিদ বোস্তামী রোডসহ ৫১৭টি পিচ ঢালা সড়ক রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ইট বিছানো রাস্তা রয়েছে ৬৭৮টি। বেশ কিছু কাঁচা রাস্তাও রয়েছে। নগরীতে সর্বমোট এগারশ’ কিলোমিটারের মতো রাস্তা রয়েছে। নগরীর পিচঢালা পথগুলোতেই মুলত গাড়ি চলাচল বেশি করে। আর এসব রাস্তায় প্রতিদিনই গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। ট্রাফিক বিভাগের থেকে প্রাপ্ত হিসেব মতে, নগরীতে সর্বমোট ১৩৫টি ক্রসিং রয়েছে। এরমধ্যে চৌরাস্তার মোড় রয়েছে ৯৭টি এবং তিন রাস্তার মোড় রয়েছে ৩৮টি। নগরীর মোড়গুলোর অধিকাংশেই রয়েছে ট্রাফিক সিগন্যাল। সিগন্যালে লাইটও রয়েছে। কিন্তু এ সিগন্যাল তেমন কাজে লাগে না। রাত-দিন লাইট জ্বললেও গাড়ি চলে পুলিশের হাতের ইশারায়। আবার অনেক সময় পুলিশ না থাকলে চালকরা নিজেদের মতো করে ফাঁকফোকর বের করে মোড় পার হয়ে চলাচল করে। নগরীতে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে (কোন কোন পয়েন্টে সাতটা) রাত সাড়ে এগারটা পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ ডিউটি করে। কয়েকটি পয়েন্টে রাতেও ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করে।
নগর ট্রাফিকের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের কয়েকটি খেলাকে কেন্দ্র করে নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের ধারাবাহিকতায় প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে নগরীর ১০টি মোড়ে ডিজিটাল ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম এবং ১৫টি মোড়ের হেলোজেন লাইটিং সিস্টেম চালু করা হয়। এতে সংখ্যার
কাউন্ট ডাউনের মাধ্যমে রাস্তা পারাপার ও গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে বিশ্বমানের সিস্টেম সম্বলিত ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট স্থাপন করা হয়। কিন্তু লাইটগুলো রাত-দিন কাউন্ট ডাউন করে সৌন্দর্য বর্ধন করেছে, কিন্তু একদিনের জন্যও কাজে লাগেনি। একদিনও এসব সিগন্যাল ব্যবহার করে গাড়ি চলাচল করেনি। লাইটগুলো স্থাপনের পর দীর্ঘদিন ধরে রাত-দিন জ্বলেছে। কাউন্ট ডাউনও করেছে। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন যাবত লাইটগুলো আর দেখা যাচ্ছে না। লাইট স্ট্যান্ড থেকে লাইটগুলো চুরি হয়ে গেছে। নগরীর অধিকাংশ মোড়ের স্ট্যান্ডে এখন আর লাইট নেই। স্টিলের বেশ সুন্দর পিলারটি মাথা বাঁকা করে দাঁড়িয়ে আছে। পিলারে লাইটের খোপগুলো জানান দিচ্ছে যে, একসময় এখানে কাউন্ট ডাউন হতো, লাইট জ্বলতো।
সিটি কর্পোরেশন নগরীর ট্রাফিক সিগন্যালের লাইটগুলো স্থাপন করে। গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাফিক বিভাগ। দুইটি সংস্থার সমন্বয় না হওয়ায় পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যর্থ হয় বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ১৯৮৯-৯০ সালে নগরীর গুরত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সিগন্যাল লাইট লাগানো শুরু করে। ইতোমধ্যে নগরীর ৪২টি মোড়ে সিগন্যাল লাইট স্থাপিত হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারের অভাবে লাইটগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।
অটো ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেমের উন্নয়নে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়। হাতের ইশারার পরিবর্তে অটো সিগন্যালিং এর মাধ্যমে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য ট্রাফিক বিভাগ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছিল। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় করে ট্রাফিক সিগন্যালিং সিস্টেমকে কেন্দ্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষতক পিলার দাঁড়িয়ে থাকলেও লাইট হাওয়া হতে শুরু করেছে।
নগর ট্রাফিক বিভাগের পদস্থ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং একটি বড় বিষয়। এটি বিবেচনা না করে কোন উদ্যোগ নেয়া হলে তা সফল হবে না। যেজন্য চট্টগ্রামে অটো ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম সফল হয়নি। তিনি বলেন, এখানে একটি রাস্তাও পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেনি। বড় সরু রাস্তা মিলেমিশে একাকার। আবার বিভিন্ন গতির বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। রিক্সা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ির মতো স্বল্প গতির বাহন রাস্তায় রেখে অটো ট্রাফিক সিগন্যাল সিস্টেম কার্যকর করা সম্ভব নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটানা দুইদিন মৃত্যুশূন্য চট্টগ্রাম
পরবর্তী নিবন্ধচার বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ