নগরকে পলিথিনমুক্ত করার উদ্যোগের সাফল্য চাই

| বুধবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

পলিথিনের অবাধ ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ভিন্ন কৌশল নিয়েছে। ধীরে ধীরে পলিথিনমুক্ত করতে চায় নগরীকে। যাদের মাধ্যমে পলিথিনের ব্যবহার বাড়ছে সেইসব বিক্রেতাকে সম্পৃক্ত করে পলিথিনের ব্যবহার রোধ করতে চায় সংস্থাটি। এর অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে নগরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারকে আজ থেকে পলিথিনমুক্ত করা হচ্ছে। বাজার তিনটি হচ্ছে কাজীর দেউরী, কর্ণফুলী মার্কেট এবং চকবাজার কাঁচাবাজার।
আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, পলিথিনমুক্ত বাজার নিশ্চিতে প্রতিটি বাজারে দুইজন করে সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ‘বেটার ফিউচার বাংলাদেশ’, ‘ভলন্টিয়ার ফর বাংলাদেশ’ এবং ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি-সিপিপি’র স্বেচ্ছাসেবকগণ সহযোগিতা করবেন চসিককে। স্বেচ্ছাসেবকগণ আগামী ১০ দিন বাজারগুলোতে অবস্থান করে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সচেতন করবেন এবং পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবেন। সচেতনতা তৈরিতে বাজারগুলোতে মাসব্যাপী মাইকিং (রেকর্ডকৃত) করা হবে। ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে ক্রেতাদের। এছাড়া নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। বাজারগুলো যে ওয়ার্ডের অধীন ওই ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবেন। খবরে আরো বলা হয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে বাজারগুলোর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন চসিকের দায়িত্বশীলরা। সেখানে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে সবাই একমত হয়েছেন। কাজীর দেউরী বাজারে ১৫০ জন, চকবাজারে ৭৫ জন এবং কর্ণফুলী বাজারে ৭৫ থেকে ৮০ জন ব্যবসায়ী আছেন। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি বাজারে ১০ হাজার পিস করে কাপড়ের ব্যাগ দেয়া হবে ব্যবসায়ীদের।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ (সংশোধিত ২০০২) অনুযায়ী, পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইন অমান্য করলে শাস্তির বিধানও আছে। এরপরও চট্টগ্রামসহ সারাদেশে থেমে নেই পলিথিনের ব্যবহার।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যবহৃত পলিথিনগুলো কোথায় যায় সে বিষয়ে অনেকে অবগত নন। ব্যবহৃত পলিথিন ফ্রিজে ব্যবহারের অনুপযোগী হলে বাসায় ব্যবহৃত পারিবারিক বর্জ্য এ পলিথিনে পুরে ময়লার ঝুড়িতে রাখা হয়। ময়লার বাহকরা পলিথিন থেকে পারিবারিক বর্জ্য আলাদা করে না, তারা ময়লাসহ পলিথিন যেখানে-সেখানে ফেলে দেয়। এভাবে যততত্র ব্যবহৃত পলিথিন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে পলিথিনের মাধ্যমে পরিবেশদূষণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। পলিথিন ছাড়া বিকল্প কোনো পদ্ধতিতে বর্জ্য অপসারণ যায় কি না, এ নিয়ে আমাদের দেশে পরিকল্পিত কোনো প্রকল্প বা পারিবারিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি এখনও। সচেতনতার অভাব ও অজ্ঞতার কারণে পরিবেশদূষণে মানব সৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে পলিথিনের ভূমিকা এখন ভয়াবহ পর্যায়ে চলে এসেছে। প্রতিনিয়তই এ উপকরণটি বিপন্ন করছে আমাদের পরিবেশ ও সভ্যতাকে। পলিথিনের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই জানেন না। এ ব্যাপারে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। ২০১০ সালে পলিথিনের পরিবর্তে পাটজাত দ্রব্য ব্যাগ ব্যবহারে আইন পাস করা হয়। প্রতিটি মোড়কে পাটজাত ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু এ উদ্যোগ বেশিদূর এগোয়নি।
তাঁরা বলেন, একটি পরিবার দিনে গড়ে পাঁচটি পলিথিন ব্যবহার করে। কিন্তু এই পলিথিন সারা বিশ্বে পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ। একা কাজ করে সমাজ থেকে এই পলিথিন দূর করা সম্ভব নয়। নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। তাঁরা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে দেশে চাল, ডাল, আটা-ময়দা ইত্যাদি পণ্য ব্যবহারে পাটের চট ব্যবহৃত হচ্ছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে চটের ব্যাগ ব্যবহার করলে তার প্রভাব পড়বে সমাজে। ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে। পলিথিন ব্যবহার না করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। টানা তিন মাস পলিথিনমুক্ত থাকলে একেকটি বাজারকে মডেল হিসেবে অন্যদের কাছে উপস্থাপন করা যাবে।
আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতে পলিথিনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বাজারে পলিথিন বন্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানায় অভিযান চালাতে হবে। কারখানার মালিকদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মনে করে, হঠাৎ করে পলিথিন সামগ্রী বন্ধ করে দেওয়াও সম্ভব নয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্ব যখন অনেকটা পলিথিননির্ভর সেক্ষেত্রে বিকল্প উদ্ভাবন না করে এটা বন্ধ করাও সম্ভব নয়। আবার পরিবেশবান্ধব নয়, ক্ষতিকর এমন বস্তুর বিস্তার ঠেকানো মানবসভ্যতা টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। তাই এক্ষেত্রে পাট থেকে উৎপাদিত ব্যাগ, শক্ত কাগজের মোড়ক বিকল্প হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে