ধীরগতির নির্মাণ কাজে জনদুর্ভোগ

এক পাশ বন্ধ থাকায় তীব্র যানজট জাকির হোসেন রোডে রেলক্রসিং ব্রিজ নির্মাণ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৪ জুন, ২০২২ at ৭:২১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) একটি প্রকল্পের আওতায় নগরের খুলশী জাকির হোসেন রোডের রেলক্রসিং সংলগ্ন ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত ১৪ মে। বর্তমানে নির্মাণাধীন ব্রিজটির একটি অংশ তথা বাম পাশে (জিইসি মোড় থেকে এ কে খান যাওয়ার পথে) কাজ চলছে। ডানপাশ উন্মুক্ত রাখা হয় যান চলাচলের জন্য। কাজ শুরুর পর দীর্ঘ এক মাস পার হলেও নির্মাণাধীন অংশটির কাজ শেষ হয়নি। অথচ সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কাজ শুরুর আগে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে পুরো ব্রিজের নির্মাণ কাজ আড়াই মাসের মধ্যে শেষ করতে বলা হয়েছে চসিককে। এছাড়া ওই সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল বিষয়ে নির্দেশনাও আছে সিএমপির।

সাধারণ লোকজন দাবি করেছেন, ধীরগতিতে চলছে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে তাদের। পথচারীরা বলছেন, ব্রিজের নির্মাণ কাজের জন্য ব্যস্ততম সড়কটির একপাশ এক মাস ধরে বন্ধ। অন্য পাশ দিয়ে চলাচল করছে দুই দিকের (জিইসি থেকে এ কে খানমুখী এবং এ কে খান থেকে জিইসিমুখী) গাড়ি। এতে সেখানে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই যানজটে ৩৬ মিনিট আটকে ছিলেন বলে দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন কবির হোসাইন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। গতকাল সোমবার বিকেলেও সরেজমিন উপস্থিত হয়ে তীব্র যানজট দেখা গেছে।

শহীদুল আলম এক ব্যবসায়ী বলেন, সিটি কর্পোরেশনের উচিত ব্রিজের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করা। প্রয়োজনে জনবল বৃদ্ধি করা উচিত। কয়েক শিফটে রাতদিন কাজ করে নির্মাণ কাজ শেষ না করলে জনভোগান্তি কমবে না। সাধারণ লোকজন দ্রুত কাজ শেষ করার কথা বললেও নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সহসা এ যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না। কারণ প্রকৌশলগত কারণে একপাশের কাজ শেষ হতেও কমপক্ষে আরো ৪০ দিন লাগবে। তারা বলছেন, বেইস, দেয়ালসসহ কয়েক ধাপে ঢালাই কাজ করতে হয়। প্রতিটি ঢালাইয়ের পর তা শক্ত হওয়ার জন্য দুয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয়। সর্বশেষ ব্রিজের উপরের অংশ বা চূড়ান্ত ঢালাইয়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ২০২২ দিন রাখতে হয়। চূড়ান্ত ঢালাই দিতে আরো ১০ থেকে ১৫দিন লাগবে। সবমিলিয়ে এক পাশের কাজ শেষ হতেই লাগবে আরো ৪০ দিন। চসিক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদের শেষ সময়ে ব্রিজটির নির্মাণ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের মেয়াদকালে ঠিকাদার চূড়ান্ত করা হয়। সর্বশেষ দুই কোটি ৮০ লাখ টাকায় ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। পরে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ায় যানজটের বিষয়টি মাথায় রেখে অনুমতি দিতে সময়ক্ষেপণ করে সিএমপি। সর্বশেষ ভারী যান চলাচলে বিকল্প সড়ক ঠিক করে অনুমতি দেয়। এরপর রমজানের ১০ থেকে ১৫ দিন কাজ শুরু করতে চাইলেও রোযার সময় জনদুর্ভোগ বেশি হওয়ার শঙ্কায় কাজ শুরু করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ ১৪ মে কাজ শুরু করে। বিদ্যমান সড়ক থেকে তিন ফুট উঁচু করা হবে ব্রিজটি। এছাড়া ব্রিজের দৈর্ঘ্য হবে ৬৭ ফুট এবং প্রস্থ হবে সাড়ে ১৯ ফুট। তবে দেয়াল বাদ দিয়ে পানি চলাচলের জন্য ১৫ ফুট উন্মুক্ত থাকবে।

চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসীম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। যানজট এড়াতে বড় গাড়ি চলাচলে বিকল্প সড়ক ঠিক করা হয়েছে। যানজট তেমন হচ্ছে না। স্ট্রংলি সেগুলো কন্ট্রোল করা হচ্ছে।

ঠিকাদারি প্রতষ্ঠানের ইনচার্জ প্রকৌশলী মো. সাইফুদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ঈদের বন্ধের পর কাজ শুরু করি। এরপর বৃষ্টির জন্য কাজ বন্ধ ছিল। তখন ইউটিলিটি সার্ভিস লাইন (পানি ও গ্যাস লাইন) শিফট করতে সময় গেছে। ফলে এক মাস আগে শুরু করলেও কাজ করতে পেরেছি মাত্র ১৫ দিনের মতো। তবু দ্রুত কাজটি শেষ করতে চাই আমরা। তিনি বলেন, দুয়েকদিনের মধ্যে ওয়ালের ঢালাই শেষ হবে। বেইস হয়ে গেছে। এখানে ধাপে ধাপে ঢালাই করতে হয়। ওসব ঢালাইয়ের পর দুইদিন রাখতে হয়। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একপাশের চূড়ান্ত ঢালাই দিয়ে দিবো। ঢালাইয়ের পর ২০২২ দিন রাখতে হয়। সবমিলিয়ে একপাশের কাজ শেষ হতে এক মাস ১০ দিন মতো লাগবে। ঢালাইয়ের পর তা খোলা পর্যন্ত যে সময়টায় অপেক্ষা করতে তখন মানুষ মনে করে আমরা কাজ না করে ফেলে রেখেছি।

ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মনে হচ্ছে সিএমপির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত কথা হচ্ছে। তারা জানেন আমাদের কাজের অগ্রগতির বিষয়টি। পর্যাপ্ত পাথরসহ অন্যান্য উপকরণ মজুদ রেখেছি। রেডিমিঙেরও জন্য বলা আছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে পাঁচ মাস সময় দেয়া হলেও দুইতিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা আছে আমাদের।

সিএমপির নির্দেশনা : চসিকের ব্রিজ নির্মাণ কাজের জন্য যানজট নিয়ন্ত্রণে ভারী যান চলাচল নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। এক বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, এ কে খান থেকে জিইসিমুখী সকল প্রকার যানবাহনসমূহ আকবরশাহ মোড়/ পাঞ্জাবি লেইন/ ওয়ারলেস মোড় (মুরগির ফার্ম) হয়ে আমবাগান, টাইগারপাস রোড ব্যবহার করবে। জিইসি থেকে এ কে খানমুখী ভারী যানবাহন সমূহ (বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ইত্যাদি) টাইগারপাস, আমবাগান রোড ব্যবহার করে চলাচল করবে। জিইসি থেকে এ কে খানমুখী পথে কেবলমাত্র হালকাযানসমূহ জরুরি প্রয়োজনে একমুখী চলাচল করতে পারবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে করোনায় দৈনিক শনাক্ত বেড়ে ১২৮
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীর ১৩ ইউনিয়ন প্রচারণা শেষ, অপেক্ষা ভোটের