দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে সচেষ্ট হতে হবে

| বুধবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২২ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। নিত্যপণ্য মজুতদারদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, যারা মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কোনো রকমের খেলা খেলতে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এজন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। রোববার সকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪০টি নবনির্মিত ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধনে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারি খুবই প্রয়োজন ছিলো। এটি গুরুত্ব বহন করে। কেননা নিত্যপণ্যের দাম এতোটাই বেশি যে সাধারণ জনগণ পিষ্ট। প্রাণ ওষ্ঠাগত। রমজানের শুরু থেকেই নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কমবেশি সব পণ্যের দাম বেড়েছে। দুই-একটি পণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকলেও ছোলা, চিনি, আটা, ময়দা, মাছ, মাংস বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। দৈনিক আজাদীতে ২৫ এপ্রিল ‘ভোজ্যতেলের বাজারে ফের অশনি সংকেত’ শীর্ষক প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পামতেলের শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া পাম তেলের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার প্রভাবে ভোজ্যতেলের বাজারে উত্তাপ আরো বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাম তেলের দাম মণে বেড়েছে ১ হাজার টাকা এবং সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদের দেশে পাম তেল আসে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া থেকে।

এর মধ্যে কেবল ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে ৭০ শতাংশ এবং মালয়েশিয়া থেকে আসে বাকি ৩০ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়া নিজেদের অভ্যন্তরীণ বাজার ঠিক রাখতে পাম তেল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে আমাদের দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে নতুন করে অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে বলা যায়।

বিশ্লেষকরা বলেন, বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। বাজারে এখন কোনো কিছুই নিম্নবিত্তের নাগালে নেই। আমাদের বাজার ব্যবস্থায় এখনো এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা কাজ করে। অর্থনীতির সাধারণ সূত্রগুলোও এখানে অচল। সুযোগ পেলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আর এই আরোপিত মূল্যের বৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ জনগণ। এদিকে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ধেয়ে আসছে মূল্যস্ফীতি। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হারে ঊর্ধ্বগতি, শ্রমবাজারে কর্মের অভাব, সর্বোপরি করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আগামীতে দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের হালনাগাদ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে চারটি প্রধান ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে।

এগুলো হলো- বৈশ্বিক খাতে প্রত্যাশার চেয়ে পুনরুদ্ধারের গতি কম; বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির হারে ঊর্ধ্বগতি; শ্রমবাজারে কর্মের অভাব এবং পণ্য পরিবহণ খরচ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্যপণ্যসহ খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির হার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। তবে সমপ্রতি খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেশি বাড়ছে, যা উদ্বেগজনক। দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার পুরোপুরি আমদানি নিভর্র। তাই যে কোনো পণ্যের দামের ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক দেশের পরিস্থিতির পাশাপাশি বুকিং রেটের ওপর ভরসা করতে হয় এ দেশের ভোক্তাদের।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেওয়ায় অনেক উন্নত দেশে খাদ্যের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। সেখানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। যে কোনো প্রকার মজুতদারির বিরুদ্ধে তিনি ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, যারা মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে কোনো রকমের খেলা খেলতে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

এবার প্রশাসনকে দেখতে হবে কোথায় খাদ্যদ্রব্য মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। কোনো প্রকারের মজুতদারি যেন কেউ করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যারা এই সংকট তৈরি করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে সচেষ্ট হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে