দৈনিক আজাদী মাটি ও মানুষের কথা বলে

পিংকু দাশ | মঙ্গলবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

সংবাদপত্রের সাথে পরিচয় আমার দৈনিক আজাদীর মাধ্যমে। ছোটকালে মনে করতাম সংবাদপত্র মানেই দৈনিক আজাদী। যখন আমি স্কুলে পড়ি, তখন গ্রামে প্রতিদিন পত্রিকা পড়া সম্ভব হত না। বাবা শহর থেকে বাড়িতে আসার সময় প্রতি ১৫ দিনের পুরানো পত্রিকা একসাথে নিয়ে আসতেন। তখন আমরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে আজাদী পড়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তাম। দেশের খবর, বিশ্বের খবর, জ্ঞানী গুণী লেখকদের লেখা আরও কত কী, প্রবল আগ্রহ এবং ভালোবাসা নিয়ে পড়তাম। মনে হত আজাদীতে যারা লেখেন, প্রজ্ঞা এবং নিষ্ঠার সাহায্যে সহজ সরল ভাষার মাধ্যমে বিশ্বের সব খবরাখবর আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন তাদেরকে একবার যদি দেখতে পেতাম!
নির্ভরতার আরেক নাম ‘দৈনিক আজাদী’। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশে আমাদের সন্তানরা মোবাইলের মাধ্যমে ঘরে বসে নিমিষেই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সংক্রান্ত সব তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। আমাদের সময় পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল সংগ্রহ অতটা সহজ ছিল না। ফলাফল প্রকাশের আগেরদিন রেডিও টেলিভিশনের সংবাদে আমরা জানতে পারতাম, আগামীকাল ফলাফল প্রকাশ করা হবে। শহরের ছাত্র-ছাত্রীরা সন্ধ্যায় আজাদী অফিসের সামনে ভিড় করতো একটু আগেভাগে ফলাফল জানার প্রত্যাশায়। আর যারা গ্রামে থাকত তারা সকাল থেকে গ্রামের বাজারে পত্রিকার দোকানে এসে বসে থাকত। কখন আসবে সেই কাঙ্ক্ষিত পত্রিকা ‘দৈনিক আজাদী’, যেখানে ছোট ছোট অক্ষরে প্রিন্ট করা থাকবে তাদের স্বপ্নপূরণের রোলনম্বর! দুপুরের দিকে যখন আজাদী পত্রিকা হাতে আসত তখন একটা পত্রিকায় অনেকজন উৎসুক দৃষ্টিতে নিজের রোল নং খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। অনেকসময় টানাটানিতে পত্রিকা ছিড়েও যেত। আরও দুয়েকটা পত্রিকা চট্টগ্রামে থাকলেও আমরা নির্ভর করতাম আজাদীর উপর। আবার কেউকেউ অন্য পত্রিকায় নিজের রোল নং না দেখলে বলত, পাস করেছি না ফেল করেছি আজাদী আসলে বুঝা যাবে। ‘দৈনিক আজাদী’ নামটা দেখলেই এখনও এধরনের মধুর স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে আসে।
চট্টগ্রামের উন্নয়ন এবং জনস্বার্থ ইস্যুতে দৈনিক আজাদী সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চট্টগ্রামে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ যেকোন বিষয়ে অসংগতি দেখলে দৈনিক আজাদী তা ফলাও করে প্রকাশ করে। কোন কোন ক্ষেত্রে এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মতামত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে সমাধানের পথ উন্মুক্ত করে। সম্প্রতি সিআরবি নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ায় আমরা এ সম্পর্কে কত অজানা তথ্য জানতে পেরেছি।
আঞ্চলিক ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে মাঝে মাঝে খবরের হেডলাইন করে মানুষের ভালোবাসা কেড়ে নেয়। কিছুদিন আগে প্রবল বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম শহরের অনেক অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। দৈনিক আজাদীর হেডলাইন ছিল, ‘চট্টগ্রাম শহর ডুবি গেইয়ে’।
দৈনিক আজাদী নুতন লেখকদের বাতিঘর। দৈনিক আজাদীর হাত ধরে বহু লেখক এবং সাংবাদিকের জন্ম হয়েছে। প্রবীণ লেখকদের পাশাপাশি নতুন লেখকদের চিন্তা, চেতনা এবং সৃষ্টিশীলতাকে সম্মান জানিয়ে দৈনিক আজাদী প্রকাশ করে বিভিন্ন ফিচার পাতা এ প্রসঙ্গে একটা কথা কৃতজ্ঞচিত্তে বলতে চাই, আমার আনন্দের দিনগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দিন, যেদিন প্রথম আমার একটি লেখা ছবিসহ ‘দৈনিক আজাদী’ পত্রিকায় ছাপা হয়। সেদিন সকালে খুশিতে বাসার সবাইকে জড়ো করে ফেলি। সে এক অন্যরকম অনুভূতি! অশেষ ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা প্রিয় পত্রিকা ‘দৈনিক আজাদী’।
দৈনিক আজাদী ৬১ বছর পূর্ণ করে ৬২ বছরে পদার্পণ করেছে। এটি সংবাদপত্রের ইতিহাসে মাইলফলক। আজাদীর সাথে সাথে চট্টগ্রামবাসীরও গৌরবের বিষয়। চট্টগ্রামের মানুষের অধিকারের কথা দুঃখ-দুর্দশার কথা বলতে বলতে এটি পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের মানুষের ভালোবাসার মুখপাত্র। প্রতিদিন সকালে চায়ের চুমুকের সাথে আজাদী পড়তে না পারলে দিনটি মনে হয় অপূর্ণ থেকে যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এগিয়ে চলা প্রগতিশীল এই পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক বরেণ্য সাংবাদিক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান এবং সাংবাদিকতার বিকাশে অনন্য ভূমিকার জন্য ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কারে’ ভূষিত করেন। এবং আজাদী লাভ করেন ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক’। সমাজ, সংস্কৃতি এবং শিল্প সাহিত্যের প্রসারে, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চায় আজাদী বেঁচে থাকবে আজীবন মাথা উঁচু করে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজাদী কর্তৃপক্ষ, সম্পাদক, পাঠক এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনার জন্মদিনে প্রজন্মের ভাবনা
পরবর্তী নিবন্ধদেশরত্ন জননেত্রীর জন্মদিন শুভ হোক