দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না

সব থেকে ভালো লাগে ঘর পাওয়া মানুষের হাসি : প্রধানমন্ত্রী ।। ঈদ উপহার হিসেবে ঘর পেল ৩২ হাজার ৯০৪টি পরিবার

| বুধবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আর একজন লোকও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না বলে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ক্ষমতার মানেই হচ্ছে জনগণের সেবা করা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন, ভূমিহীন এবং ঠিকানাবিহীন থাকবে না। আমরা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় ধাপে সারাদেশে ৪৯২টি উপজেলার ৩২ হাজার ৯০৪টি বাড়ি বিতরণকালে সুবিধাভোগিদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বলেন, তাঁর সরকার একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে জাতির পিতার লালিত স্বপ্ন পূরণে সবার মুখে হাসি ফোটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৩২ হাজার ৪শ ৯টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে জমি ও ঘর দিয়েছি। আমি আসন্ন ঈদুল-ফিতরের উপহার হিসেবে এ সব জমি ও ঘর দিয়েছি। যারা ঘর পেয়েছে তাদের মুখের হাসি আমি খুব পছন্দ করি।

সরকার প্রধান বলেন, বেদে, তৃতীয় লিঙ্গ, চা-শ্রমিক, কুষ্ঠ রোগী, ভিন্নভাবে সক্ষমসহ সুবিধাবঞ্চিত সকল শ্রেণির মানুষকে সুন্দর জীবন উপহার দিতে গৃহায়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। আর এ জন্য সরকার শুধু খাস জমিরই খোঁজ করছে না, নিজেদের অর্থায়নে জমি কিনেও ঘর-বাড়ি করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমি জানি না পৃথিবীর আর কোনো দেশে এ ধরনের উদ্যোগ আর কেউ নিয়েছে কিনা। কিন্তু আমরা জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক। আমি শুধু তাঁর কন্যাই না, তাঁর আদর্শেরও অনুসারী। আর আমার কাছে ক্ষমতাটা হচ্ছে জনগণের সেবা করা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি আজ আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে, যখন তিনি দেখবেন তাঁর জনগণের মুখে হাসি ফুটেছে। তিনি দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেন, বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, সেটাই আমাদের সরকারের লক্ষ্য।

জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের পদাংক অনুসরণে ’৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর পরই এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ’৯১ সালের প্রলয়ংকারি ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়-ক্ষতি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া টের পাননি। কারণ তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে ’৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ের প্রেক্ষাপটে তিনি তাঁর বিদেশ সফর বাতিল করে জরুরি ভিত্তিতে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে মানুষকে সহযোগিতায় নেমে পড়েন এবং নিজে বিভিন্ন জায়গায় যান। তিনি বলেন, সে সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৭০টি আশ্রয়হীন পরিবারের জন্য নৌবাহিনী এবং জমি দানকারি স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার সহযোগিতায় ব্যারাক নির্মাণের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ভূমিহীনদের এই পুনর্বাসন কর্মসূচি শুরু হয়।

দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার এই কর্মসূচিকে আরো বেগবান করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন থেকে আমরা ফান্ড করে জমি কিনেও ঘর তৈরি করছি এবং গৃহহীনদের মাঝে উন্নত মানের সেমি পাকা ঘর করে দেয়ারও পদক্ষেপ নিয়েছি। সরকার প্রধান বলেন, আমার সবচেয়ে ভালো লাগে যখন দেখি একটা মানুষ ঘর পাওয়ার পর তার মুখের হাসি। জাতির পিতা দুঃখী মানুষের মুখেই হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সকল মানুষ যাতে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সে লক্ষ্য নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাই আমরা চালিয়ে যাব। জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালে আমরা উন্নয়নশীল দেশের যে স্বীকৃতি পেয়েছি তাকে ধরে রেখে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। যে জাতি বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে সে জাতি কখনো পিছিয়ে থাকতে পারেনা। শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না, বলেন তিনি।

’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশকে পিছিয়ে দেয়ার এবং স্বাধীনতার চেতনা ভূলুন্ঠিত করার যে ষড়যন্ত্র তা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারাটাই সবথেকে বড় প্রাপ্তি বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। দলের নেতাকর্মীদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বলবো জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে চলবে। দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াবে এটাই হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। একটা মানুষকে যদি একটু আশ্রয় দেওয়া যায়, তার মুখে হাসি ফোটানো যায় এর চেয়ে বড় পাওয়া একজন রাজনীতিবিদের জীবনে আর কি হতে পারে। এটাই সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হওয়া উচিত। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সময়ই আপনারা দেখেছেন, অর্থবিত্ত সম্পদ কাজে লাগে না। সে সময় অনেক হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার মালিকেরও কিছুই কিন্তু করার ছিলনা। যারা বাংলাদেশে কোনদিন চিকিৎসাই নেয়নি তাদেরকেও এই দেশেই ভ্যাকসিন নিতে হয়েছে।

সারাবিশ্বে লকডাউনের কারণে টাকা থাকলেও এ সব ধনীরা দেশের বাইরে যেতে পারেননি। অথচ অতীতে একটু সর্দি কাশিতেও তারা দেশে চিকিৎসা না নিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চারটি জেলার চারটি স্থানের সাথে যুক্ত হয়ে সুবিধাভোগী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময়ও করেন। চারটি স্থান হল ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার পোড়াদিয়া বালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা জেলার বরগুনা সদর উপজেলার খেজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার অধীনে খোকশাবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প।

আনোয়ারায় অনুষ্ঠান : আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, আনোয়ারায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের হাজিগাঁও গ্রামে নির্মিত ১৩০ ভূমিহীন পরিবারের মাঝে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকার উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম, বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান, ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জ মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার রশিদুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান, আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক শাহজাদা মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এম এ মালেক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হাসান চৌধুরী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম, চেয়ারম্যান নোয়াব আলী, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোহেল, আমিন শরীফ, হাসনাইন জলিল চৌধুরী শাকিল, অসীম কুমার দেব, বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল ইসলাম চৌধুরী, কলিম উদ্দিন, মাস্টার মোহাম্মদ ইদ্রিছ প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীকে নকশী কাঁথা উপহার দিলেন আনোয়ারার রহিমা
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ায় মুদি দোকানের ৩ লাখ টাকার তেল লুট