দেশের অর্ধেক অংশে দুর্ভোগ

তদন্ত কমিটি, মোবাইল সেবা বিঘ্নিত, এটিএম বুথে টাকা তোলা যায়নি

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ৫ অক্টোবর, ২০২২ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় গ্রিডের একটি সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দেওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বড় এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। যমুনা সেতুর পূর্ব পাশের ন্যাশনাল গ্রিডে দুপুর ২টা ৫ মিনিটে বিপর্যয় হয়। একটা পর্যায়ে দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনে বিপর্যয় ঘটে। এর ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে বিস্তৃত এলাকার মানুষ। মোবাইল সেবা বিঘ্নিত হয়। বিদ্যুৎ বিপর্যয় কষ্ট বাড়িয়েছে হাসপাতালের রোগীদের। ডিজেলের জন্য পেট্রোল পাম্পে ছিল দীর্ঘ লাইন। অধিকাংশ এটিএম বুথে জেনারেটর বা ইউপিএস সুবিধা না থাকায় টাকা তোলা যায়নি। সমস্যা হয়েছে পিওএস মেশিনেও।
বিপর্যয়ের ৮ ঘণ্টা পর ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার কথা জানিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। গতকাল রাত সোয়া ১০টায় মন্ত্রণালয়ের ফেইসবুক পেইজে বলা হয়, ঢাকায় ২৩০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ১৭৫০ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হচ্ছিল। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ উদঘাটনের জন্য পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক (পিঅ্যান্ডডি) ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে মন্ত্রণালয় বলছে, বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকেও আরও দুটি কমিটি গঠন করা হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
পিজিসিবির জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা এবিএম বদরুদ্দোজা সুমন বলেন, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম জোনের প্রায় পুরোটা ও সিলেট জোনের পুরোটায় বিদ্যুৎ চলে এসেছে। কুমিল্লা জোন ও ঢাকা জোনের কিছু অংশ বাকি আছে।
রাত ১১টার দিকে আরেক পোস্টে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে রাত ৯টার মধ্যে গ্রিড রিস্টোর করা সম্ভব হয়েছে। এখনও অল্প কিছু জায়গাতে বিদ্যুৎ আসেনি বা স্বল্প সময়ের জন্য এসেছিল, সেসব এলাকার গ্রাহকবৃন্দ আরেকটু ধৈর্য ধরুন। ধীরে ধীরে লোড বৃদ্ধি করা হচ্ছে। মূল সংকট কেটে গেছে। দ্রুতই আপনারা বিদ্যুৎ পাবেন।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, আমরা একেবারে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, ঘোড়াশালে গ্রিড বা বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো একটি লাইন ট্রিপ করেছে। সেই লাইনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অন্য লাইন ওভারলোড হয়ে সেটা ট্রিপ করেছে। এর ফলে পূর্বাঞ্চলের গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বল্পতা দেখা দেয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমেই সারা দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয়।
কষ্ট বাড়িয়েছে হাসপাতালের রোগীদের : নানা সমস্যা নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, দেশজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে তাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। গতকাল দুপুরের পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে জেনারেটর দিয়ে অতি জরুরি সেবাগুলো চালিয়ে নেওয়া হলেও ওয়ার্ডগুলোতে বাতি জ্বলেনি, চলেনি না পাখা। ফলে গরম রোগীদের কষ্ট বাড়িয়ে তুলছিল। ওয়ার্ডে মোবাইলের বাতি কিংবা মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করেছিলেন রোগীদের স্বজনরা। হাতপাখা, কাগজ দিয়ে বাতাস দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন রোগীদের।
ডিজেলের জন্য পেট্রোল পাম্পে দীর্ঘ লাইন : ঢাকাসহ দেশের বড় এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ায় কয়েক ঘণ্টা ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন চললেও তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে ডিজেলের জন্য দেখা দেয় লম্বা লাইন।
মোবাইল সেবা বিঘ্নিত : জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বিঘ্নিত হয়েছে মোবাইল ফোন সেবাও। গতকাল বিভিন্ন এলাকার মোবাইল ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, তারা মোবাইলে কল, এসএমএস ও ইন্টারনেট সংযোগ পেতে সমস্যায় পড়েছেন।
মোমবাতির আলোয় চলল হাই কোর্টের বিচারকাজ : বাংলানিউজ জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়লেও থেমে থাকেনি উচ্চ আদালতের বিচারকাজ। গতকাল দুপুর ২টা ৫ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রথমে মোবাইলের আলোতে, পরে মোমবাতি দিয়ে বিচারকাজ চালিয়েছেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার মেঘালয়ের ৮ টন চা পাতা যাচ্ছে কলকাতায়
পরবর্তী নিবন্ধহাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তি