দেশেই উৎপাদন হচ্ছে চিংড়ি পোনার খাবার মাইক্রোএলজি

হ্যাচারি মালিকদের বিনামূল্যে প্রদান করবে বিএফআরআই

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

চিংড়ি পোনার অপরিহার্য খাবার মাইক্রোএলজি এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। হ্যাচারিতে চিংড়ি উৎপাদনের জন্য এতোদিন বিদেশ থেকেই খাদ্যটি আমদানি করা হতো। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূল থেকে সংগৃহিত দেশীয় জাতের একটি মাইক্রোএলজি বিএফআরআই বিজ্ঞানীদের গবেষণায় অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন বলে প্রমাণিত হয়েছে। চিংড়ির লার্ভি চাষে বহুল ব্যবহৃত মাইক্রোএলজি নিয়ে বিএফআরআই বিজ্ঞানীরা ২০১৭ সালে গবেষণা শুরুর পর ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো স্কেলেটোনেমা কস্টাটুম নামের এক প্রকার মাইক্রোএলজি পৃথকীকরণে সাফল্য পান। কয়েক বছর ধরে নিবিড় গবেষণার পর সম্প্রতি বিএফআরআই’র বিজ্ঞানীরা ওই মাইক্রোএলজি’র এক বিশাল মজুদ গড়ে তুলেছেন কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রে। এখান থেকে চিংড়ি পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারিগুলো বিনামূল্যে এই জীবন্ত খাবারটি নিয়ে যেতে পারবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে চিংড়ি পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারি সমূহের প্রযুক্তিবিদদের সাথে বিএফআরআই আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরেন কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান ড. শফিকুর রহমান। তিনি জানান, মাইক্রোএলজি একটি ক্ষুদ্র উদ্ভিজ্জ অনুজীব। দেশের চিংড়ি পোনা উৎপাদন শিল্পের জন্য এতোদিন আমেরিকা, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকেই উচ্চ মূল্যে খাদ্যটি আমদানি করা হতো। প্রজাতিভেদে মাত্র ৫-১০ মিলিলিটার মাইক্রোএলজির দাম পড়তো ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এরপরও আমাদের দেশীয় পরিবেশে ওই বিদেশি জাতের মাইক্রোএলজি দিয়ে পোনা উৎপাদনে নানা জটিলতায় পড়তে হতো। কিন্তু দেশীয় জাতের মাইক্রোএলজির ব্যাক্টেরিয়াল দূষণ না থাকায় এখন চিংড়ি পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারি শিল্প তথা মৎস্য শিল্পে এক বিশাল সম্ভবনা তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানান, আমাদের পরিবেশে অভিযোজনের ক্ষেত্রে দেশীয় প্রজাতির মাইক্রোএলজি খুবই উপযোগী। চাষের জন্য সরাসরি উৎস (কঙবাজার উপকূল) থেকে সংগ্রহীত পানি ব্যবহার করা হয় বলে দেশীয় জাতের মাইক্রোএলজির বৃদ্ধির হারও বেশি। বিদেশি প্রজাতির মাইক্রোএলজির চেয়ে দেশীয় প্রজাতির মাইক্রোএলজিতে পুষ্টি গুণ বেশি পাওয়া যায় বলে পোনাও থাকে স্বাস্থ্যবান।
বিজ্ঞানী ড. শফিকুর রহমান জানান, চিংড়ি পোনার খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত স্কেলেটোনেমা কস্টাটুম প্রজাতির মাইক্রোএলজি ছাড়াও আরো ৪টি দেশীয় প্রজাতির মাইক্রোএলজি ও একটি জুপ্লাংকটন এর পৃথকীকরণে সাফল্য পান। যার মধ্যে ন্যানোক্লোরোপসিস ওকুল্যাট নামের দেশীয় জাতের মাইক্রো এলজি ও ব্রেসিওনোয়াস রোটান্ডিফর্মিস নামের জু-প্লাংকন বা ক্ষুদ্র প্রাণিজ অনুজীব ব্যবহৃত হচ্ছে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনের জন্য। এছাড়া সামুদ্রিক ঝিনুকের পোনা উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে আইসোক্রাইসিস গ্যালভানা, ন্যানোক্লোরোপসিস ওকুল্যাট ও টেট্রাসেলমিস নামের দেশীয় জাতের মাইক্রো এলজি। যেগুলো বঙ্গোপসাগরের কঙবাজার উপকূল থেকে একক পৃথকীকরণের পর বর্তমানে কঙবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের লাইভফিড গবেষণাগারে মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে।
বিএফআরআই’র বিজ্ঞানীদের মতে, সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া ও ঝিনুক তাদের জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে একমাত্র অথবা পরিপূরক খাদ্য হিসেবে মাইক্রোএলজি নামের জীবন্ত খাবার গ্রহণ করে থাকে। আর এসব মাইক্রোএলজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি গুণাগুণ, যা সামুদ্রিক প্রাণির দৈহিক বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রে অনেক ধরনের অনুজীব খাবার রয়েছে, যাদের মধ্যে কিছু কিছু প্রজাতি সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া ও ঝিনুকের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। আর এসব প্রয়োজনীয় প্রজতিগুলোকে জীবন্ত খাবার হিসাবে চাষ করে একদিকে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব, অন্যদিকে সুনীল অর্থনীতিকেও ত্বরান্নিত করা সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমলয় জাগাচ্ছে সম্ভাবনা
পরবর্তী নিবন্ধপেকুয়ায় গহীন জঙ্গলে অস্ত্রের কারখানার সন্ধান