সমলয় জাগাচ্ছে সম্ভাবনা

গুমাইবিলে বোরো চাষ

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

বোরো চাষে সেচ বেশি লাগায় এবং শ্রমিক সংকটসহ নানা কারণে ধানের ভাল ফলনেও লাভের মুখ দেখেন না কৃষক। তবে এতসব শঙ্কার মধ্যেও আশার আলো দেখাচ্ছে সমলয় পদ্ধতিতে বোরো চাষ। চট্টগ্রামের তিনটি উপজেলার মধ্যে শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলে প্রথমবারের মতো এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। প্রচলিত পদ্ধতির চাষাবাদের চেয়ে আধুনিক সমলয় পদ্ধতিতে পরিকল্পিত উপায়ে প্রযুক্তিগত চাষাবাদে খরচ কমবে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ। ফলন বাড়বে অন্তত ২০ ভাগ। এতে লাভের মুখ দেখবে কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশে নতুন উদ্ভাবিত সমলয় পদ্ধতির আওতায় বীজতলা থেকে ফসল কাটা পর্যন্ত সবই এক সময়ে একযোগে করা হয়। স্বল্প মানুষের সাহায্যে কাজটা করছে যন্ত্র। জমির অপচয় রোধে এ পদ্ধতিতে প্রচলিত রীতিতে বীজতলা তৈরি না করে প্লাস্টিকের ফ্রেম বা ট্রেতে লাগানো হয়েছে ধানের বীজ। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে তা চারা হয়েছে। তারপর রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে জমিতে রোপণ করা হচ্ছে তা। একটা ট্রান্সপ্ল্যান্টার এক ঘণ্টায় এক একর জমিতে চারা লাগাতে পারে। চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। একই সময় রোপণ করায় নির্দিষ্ট এলাকায় সব ধান পাকবে একই সময়। পরবর্তীতে মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে সব ধান কাটা ও মাড়াই করা হবে। যার ফলে বেঁচে যাচ্ছে শ্রমিকের খরচ। লাভবান হবেন কৃষক।
গুমাইবিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, এবার গুমাইবিলের ৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। প্রথমে ৪৫০০টি ট্রেতে হাইব্রিড বোরো ধানের বীজতলা করা হয়। কৃষি অফিস থেকে বীজ, চারা তৈরির ট্রে সরবরাহ করা হয়। পরে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণও করে দেওয়া হয়। এসময় প্রয়োজনীয় সারও অফিস থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। ধান পাকার পর কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই ও বস্তাবন্দীর খরচও অফিস বহন করবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টারের মাধ্যমে সমলয় বোরোধান প্রদর্শনীর রোপণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এই উপলক্ষে গুমাইবিলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার ইউনুস। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার। মূখ্য আলোচক ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রুহুল আমিন। উত্তম কুমারের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তরজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আকতার হোসেন খান, মরিয়মনগর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক হিরু, সাংবাদিক আব্বাস হোসাইন আফতাব, জগলুল হুদা প্রমুখ।
গুমাই বিলের চাষি নুরুল ইসলাম আজাদ বলেন, এবার সমলয় পদ্ধতির বোরো চাষ আমাদের সফলতায় আশা জাগাচ্ছে। পদ্ধতিগত বীজতলায় সুস্থ-সবল চারা পাচ্ছি। ধান রোপণ, কাটা ও মাড়াই করা হবে মেশিনে। ফলে চাষে খরচ অনেক কমে যাবে। আমরা লাভবান হব বলে আশা করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, প্রতি একর জমিতে ধান লাগাতে ১২-১৫ হাজার টাকা শ্রমিকের মজুরি দিতে হয়। সেখানে মেশিনে ধান লাগালে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা খরচ হবে। সময়ও কম লাগবে। কাটতে সময় এবং খরচ কম লাগবে। এবার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি অফিসের খরচে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে দেয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকমছে না স্পিড বোটের বর্ধিত ভাড়া
পরবর্তী নিবন্ধদেশেই উৎপাদন হচ্ছে চিংড়ি পোনার খাবার মাইক্রোএলজি