দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার শপথ নিতে হবে

জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ২৬ মার্চ, ২০২১ at ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এখন দারিদ্র্য জয় ও উন্নয়নের মডেল। বিশ্বের বুকে গর্বিত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার অর্ধশত বছর অতিক্রম করা জাতীয় জীবনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক। আমাদের জন্য এই সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব আরও বর্ণময় হয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সরকার পরিচালনা শুরু করে। আজ বাংলাদেশ সম্পর্কে সব নেতিবাচক এবং নিরাশাবাচক ভবিষ্যদ্বাণী অসার প্রমাণিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এক দশক আগেও বাংলাদেশকে যেখানে দারিদ্র্য আর অনুন্নয়নের উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা হতো, আজ উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা সেই বাংলাদেশকেই দারিদ্র্য জয় এবং উন্নয়নের আদর্শ মডেল হিসেবে তুলে ধরছেন।’ সময় তার সরকারের উন্নয়ন ও আগের চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে কয়েকটি সূচকের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরছি- ‘২০০৫-০৬ বছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে যা ২০৬৪ ডলার হয়েছে। ওই সময় দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে। জিডিপি’র আকার ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৭৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ এক বিলিয়ন ডলারের কম, যা বর্তমানে ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে।’ ‘২০০৫-০৬ বছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান অর্থবছরে আমাদের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। মানুষের গড় আয়ু ২০০৫-০৬ বছরের ৫৯ বছর থেকে মৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৬ বছর। শিশু মৃত্যুহার কমে প্রতি হাজারে ৮৪ থেকে ২৮ এবং মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে ৩৭০ থেকে ১৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে।’ ‘২০০৫-০৬ বছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৭৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি। দানাদার শস্যের উৎপাদন ২০০৫-০৬ বছরের ১ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট থেকে ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’ খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, ‘সুবর্ণজয়ন্তীর এই শুভক্ষণে আমাদের শপথ নিতে হবে, কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। দেশের গণতান্ত্রিক এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে। আসুন, সকল ভেদাভেদ ভুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ অসামপ্রদায়িক সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি।’
দীর্ঘ সংগ্রামের পথ ধরে ১৯৭১ সালে উদিত হয়েছিল বাঙালির স্বাধীনতার সূর্য। সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। আর যার হাত ধরে স্বাধীনতা এসেছিল, সেই মহান নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন চলছে গতবছরের মার্চ থেকে। এবারের মার্চে তা মিলছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর উদযাপনের সঙ্গে। বাংলাদেশ এমন এক সময়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে, যখন মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ সরকারে রয়েছে এবং সরকার প্রধান জাতির পিতারই জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সবাইকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ২৬ মার্চ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস। এবার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। আমরা উদযাপন করছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। একইসঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি- তিনি আমাদের এই সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের তৌফিক দান করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতের শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। শ্রদ্ধা জানার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি। স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সালাম জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নামের মহাপুরুষের জন্ম হয়েছিল বলেই আজ আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক, তার জন্ম হয়েছিল বলেই আজ আমরা নিজস্ব দেশ, ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব বোধ করি। শেখ মুজিব একটি দেশ, একটি জাতি-রাষ্ট্রের স্রষ্টা বলে জাতি তার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী একযোগে উদযাপন করছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসেছে, তারা দীর্ঘ একুশ বছর এদেশের মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে তাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে, বাংলাদেশকে ভিক্ষুকের দেশ হিসেবে বহির্বিশ্বে পরিচিত করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকের এই অর্জন এ দেশের সাধারণ মানুষের। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক-পেশাজীবী, আমাদের প্রবাসী ভাইবোনেরা, এ দেশের উদ্যোক্তাগণ – তাদের শ্রম, মেধা এবং উদ্বাবনী শক্তি দিয়ে দারিদ্র্য নিরাময়ের অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুলেছেন। আমার সরকার শুধু নীতি সহায়তা দিয়ে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে। আপনারা প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষ অনুকূল পরিবেশ পেলে যে কোনো অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে।
এবারের স্বাধীনতা দিবস অন্যান্য বারের স্বাধীনতা দিবসের মত নয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এবার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হল। এই দিন আনন্দে অবগাহনের দিন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় তিনি জাতির উদ্দেশে আহ্বান জানান- আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে/কে আছ জাগিয়া পূরবে চাহিয়া/ বলে ‘উঠ উঠ’ সঘনে গভীর নিদ্রামগনে/ হেরো তিমির রজনী যায় ওই, হাসে ঊষা নব জোতির্ময়ী/ নব আনন্দে, নব জীবনে, ফুল্ল কুসুমে, মধুর পবনে, বিহগ কলকূজনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোদী আসছেন আজ, স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি
পরবর্তী নিবন্ধস্কুল-কলেজ খুলবে ২৩ মে