নগরীর চকবাজার থানাধীন দেবপাহাড় এলাকার একটি বস্তিতে আগুন লেগে ১৪টি বসতঘর পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট অথবা গ্যাসের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা ১১টা ২০মিনিটে খবর পেয়ে নন্দনকানন ও চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশনের ৫টি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এর মধ্যে আগুনের ভয়াবহতা বিবেচনায় আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন থেকে আরো ৪টি গাড়ি যোগ দেয়। মোট ৯টি গাড়ি প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, দেবপাহাড়ের যে বস্তিতে আগুন লেগেছে সেটি ২০০ ফুট উপরে। বস্তির পরিবেশ সাধারণত খুব ঘিঞ্জি টাইপের হয়। এই বস্তিটিও তেমন। এছাড়া সরু সড়কে পানির অপ্রতুলতার কারণে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের কর্মীদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবে ভাগ্য ভালো যে আগুন লাগার সময় বাতাসের তীব্রতা ছিল না। বাতাস থাকলে পুরো বস্তিটিই হয়তো পুড়ে যেত। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। গতকাল বিকেলে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন আগুনের ধ্বংসস্তূপ থেকে আধাপোড়া বিভিন্ন জিনিস বের করে আনছেন। এদেরই একজন সায়রা বানু। তিনি বলেন, আগুনে আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। কিস্তি দেয়ার জন্য ৪ হাজার টাকা যোগাড় করেছিলাম, সেগুলোও রক্ষা করতে পারেনি। মুহূর্তে চোখের সামনে ঘরটি পুড়ে গেল। গত দুই বছর আগে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ঘরটি করেছিলাম। জমিদারকে কেবল দেড় হাজার টাকা জমির ভাড়া দিই। এখন মাথা গোঁজার জায়গাটিও হারালাম। আমার স্বামী মারা গেছে দুই বছর আগে। একটি গার্মেন্টসে ফিনিশিং বিভাগে চাকরি করি। এখন দুই বাচ্চা নিয়ে কোথায় যাবো, কার কাছে যাবো। আধা পোড়া বই হাতে নিয়ে ডুকরে কাঁদছে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সাথী আকতার। আগুনের লেলিহান শিখার তাণ্ডবে বই খাতা সব পুড়ে গেছে। অন্যদিকে ষাটোর্ধ্ব দবিরুল ইসলাম বলেন, এ বছরের শুরুর দিকে ঋণ নিয়ে নতুন ঘরটি করেছিলাম। এছাড়া নতুন কিছু আসবাবও কিনেছিলাম। অভাবের তাড়নায় এই বয়সেও রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। আগুনে আমার সব শেষ হয়ে গেছে।
দুই কামরার ছোট্ট একটি ঘরে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছিলেন বাবুর্চি জসিম উদ্দিন। সকালে হঠাৎ আগুন আগুন বলে চারদিকে শোরগোল পড়ে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই আগুনের লেলিহান শিখা তার ঘরের দিকেও ছুটে আসে। জান বাঁচাতে কোনো মতে স্ত্রী পুত্রকে নিয়ে ভোঁ দৌড় দেন। বাকি ঘটনা দেখে থাকা ছাড়া তার আর কিছুই করার ছিল না। আগুনে প্রায় পুড়ে যায় জসিম উদ্দিনের কষ্টের তৈরি ঘর। জানতে চাইলে কাঁদতে কাঁদতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার পৈত্রিক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়ির কসবা থানায় হলেও আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা এই চট্টগ্রামেই। বর্তমানে বাবুর্চির কাজ করছি। করোনার কারণে মাঝখানে বাবুর্চির কাজ না থাকায় রিকশা চালিয়েছি। এখনও কাজ বেশি নাই। কোনভাবে চলছে, এমন সময় আগুন আমাকে একেবারে নিঃস্ব করে দিয়েছে। গত বছর ৬০ হাজার টাকা খরচ করে দুই রুমের ঘরটি তৈরি করেছিলাম। সেই সময় ঘর করতে পরিচিত কয়েকজনের কাছ থেকে ধারদেনাও নিয়েছিলাম। যা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। পারিবারিক জীবনে আমরা এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে স্থানীয় একটি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। মাথা গোঁজার স্থান হারিয়ে আমার মতো অনেকে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। রাতটা হয়তো খোলা আকাশের নিচেই কাঁটাতে হবে।