দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ভালোবাসা

নাসিমা শওকত | শনিবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২১ at ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ

কোনো কাজের সাফল্যে যদি হৃদয় ছুঁয়ে যায়, তখন কী যে এক আবেগ এসে ভর করে দেহে মনে তা বলে বোঝাতে পারব না। আনন্দে দু চোখের পাতা ভিজে উঠেছে। এমন সাফল্যের কথা, শুকরিয়া মহান আল্লাহর কাছে। আমার যে কাজের ধরন তাতে বহু বাধা, বহু বিপত্তি, বহু সমস্যা। যা একদিনে শেষ হবার নয়। তবুও আমার আগে যারা শুরু করেছেন কিংবা এখন শুরু করতে চেষ্টা করছেন বলা যায়, এই কাজের মাঝ পথে রয়েছি আমরা। ধৈর্য ধরলে সফলতা আসবেই। ডেল কার্নেগীর একটি উক্তি আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করে ,‘সাফল্য হল আপনি যা চান তা হাসিল করা। আনন্দ হল আপনি যা চান তা পাওয়া’। এই কথাগুলো লিখছি শুধুমাত্র আমার কাজের সফলতায় আমি আনন্দ উপভোগ করব তা কিন্তু নয়, আনন্দের গল্পে অংশীদার করতে চাই সবাইকে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের রাইটিং ইস্যু নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক ধরনের সমস্যা মুখোমুখি হতে হয়েছে। যা এখনও পুরোপুরি সমাধান হয়নি। ওরা একেক বার একেকটা সমস্যার সামনে পড়ছে তার জন্য লড়ছে ওরা। ওদের লড়াইয়ে আমরাও আন্তরিক সঙ্গী। এবারের যে সমস্যা তা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পরীক্ষার এসাইন্টমেন্ট জমা দেওয়া নিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছিল। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা অন্যের হাতের লিখার সাহায্য নিয়ে তাদের লিখা গুলো জমা দিতে হয়। একেক বার একেক জন এই কাজে ওদের সাহায্য করে। যার কারণে কলেজ এবং স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হয়। অনেকদিন ধরেই এ সমস্যা। সেপ্টেম্বরের তিন তারিখে আমি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্র রাহীর কাছে যখনই এই সমস্যার কথা শুলনাম। তখনই আমি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের শ্রদ্ধেয় সচিব প্রফেসর আবদুল আলিম, যাকে আমরা আলেক্স আলীম নামে চিনি, তাঁর সাথে যোগাযোগ করি। স্যার এতো আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। আমাকে নিজ দায়িত্বে যোগাযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। ঐ সময়ে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী চট্টগ্রামে এসেছেন। স্যার এত কাজের ভিড়েও আমার লিখিত আবেদনটি বৈঠকে তুলে ধরেন এবং দেশ টিভির টক শোতে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে অনুরোধ করেন। খুবই আনন্দের বিষয় হল, অবশেষে কোন বাধা ছাড়াই সরকারের আদেশ জারি হয়ে যায় সারা দেশে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের হাতের লিখার ভিন্নতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না। অন্যান্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বেশি বয়সের বিষয়টি ও সরকারের সুনজরে এসেছে। ওদের প্রাপ্তিতে আমার কাজ করার সাফল্যে অনুভব করছি। আলেক্স আলীম স্যার আমাকে ব্যক্তিগতভাবে মাউশি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিচালক প্রফেসর আরিফ ইলাহি স্যারের সাথে দেখা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তখন স্যারের রুমে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। নানান এলাকার শিক্ষকদের সাথে নিত্যদিনের কাজের ব্যস্ততার মাঝেও আমার সমস্যা টাকে প্রাধান্য দেওয়া, সত্যিই আমি আবেগ আপ্লুত আর সম্মানিত বোধ করছি। যত শিক্ষক ছিলেন স্যারের রুমে আমার উদ্দেশ্যটা বললেন এবং বোঝালেন দেশের প্রতিটা কোণায় হয়তোবা এ রকম সমস্যা আছে, যা আপনারাও পেতে পারেন আর সরকারের নীতিমালার কথা জানিয়ে দিলেন। আরিফ এলাহী স্যার ও আলেক্স আলীম স্যার দুজন মহানুভব মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ দুজন গুণীমানুষ কতটা হৃদতাপূর্ণ তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। ঐ মুহূর্তটা আমার জন্য অনেক বড় অর্জন। কখন যে চোখ জোড়া ছল ছল করে উঠল। অবশেষে স্যার কে ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আর তখনই আরিফ এলাহী স্যার অন্য শিক্ষকদের সামনে যে কথাগুলো বললেন, শুনে বুক ভরে উঠলো আনন্দে। স্যারদের জন্যেই দেশের অন্য প্রান্তের প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীরাও এ সুফল পাবে, এটা মন্ত্রণালয়ে চলে গেছে এবং বিশেষ বিবেচনায় আদেশ দিয়ে দিয়েছে। আমি হয়তো বা কাজ করছি, সমাধানের পথটা সহজকরণে তাঁদের দুজনের সাহায্যে সহযোগিতা না পেলে এটা সম্ভব হতো না। আরেকটা কথা কৃতজ্ঞতা নিয়ে বলছি, বর্তমান সরকার সত্যিই প্রতিবন্ধী বান্ধব সরকার। এই কাজ করতে গিয়ে অনুভব করেছি। ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য কন্যা সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল আপনাকেও। একসাথে সবকিছুর সমাধান কখনইও সম্ভব না। তবে নির্ভয়ে পথ হাঁটার পথ যখন তৈরি হয়ে যায়, তখন দিগন্তের আলোকিত রেখায় ছুটতে অসুবিধা কোথায়? আমি আমাকে যেমন বিশ্বাস করাতে চাই, তেমনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বন্ধুদেরও বিশ্বাস করতে বলি -নেলসেন ম্যান্ডেলার সেই বিখ্যাত উক্তিটি ‘প্রত্যেকেই নিজ নিজ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারে এবং সাফল্য অর্জন করতে পারে, সে যা করছে তার প্রতি যদি নিবেদিত প্রাণ ও সত্যিকারের আন্তরিক হয়’। প্রত্যেক প্রতিবন্ধী বন্ধুরা কোনো না কোনো গুণে গুণান্বিত।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, ‘হেপা’
(হেলথ এডুকেশন এন্ড পোর্ভটি এল্যুভিয়েশন)

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁচার জন্য ভুল কাজ, ভুল স্বপ্ন অশোভন
পরবর্তী নিবন্ধআজ বিশ্ব এ্যানেসথেসিয়া দিবস