দূরের দুরবিনে

অজয় দাশগুপ্ত | শুক্রবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

দলান্ধ নয়, শক্তি সাধারণ মানুষ

বাংলাদেশে কথা বলার মানুষের অভাব নাই। আসলে কোন বিষয়েই কথা বলার লোকের অভাব হয় না। আমি খেয়াল করে দেখেছি আমাদের দেশের বিনোদন বলতে গেলে শূন্যের কোটায়। সে শূন্যস্থান দখল করে রেখেছে কথাবাজ তথা টক শোর মানুষগুলো। এমন না যে আমি বলি না। আমরা সবাই বলি। কিন্তু বলার ভেতর একটা বড় তফাৎ হলো যারা এখন বলে সেলিব্রেটি তাদের মুখে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে কথার ফুলঝুরি। আর সে ধরনের কথায় যে যতোটাএগিয়ে তার ততো পপুলারিটি। এই প্রিয়তার প্যেনে বুদ্ধিবৃত্তি কিংবা দেশপ্রেম নাই। আছে সস্তা বিরোধিতা।
এদের কেউ কেউ এমন সব কথা বলেন যা কোন সভ্য সমাজে বললে তার শাস্তি কেউ ঠেকাতে পারতো না। এই সেদিন আফগানিস্তান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে একজন বললেন, সরকার চলে গেলে নাকি ঢাকা এয়ারপোট ফের হাল ও কাবুল বিমানবন্দরের মতো হবে। কথাগুলো কী সাংঘাতিক ইঙ্গিতবাহী। সরকারের কি উচিৎ ছিলো না এই মানুষটির কাছ থেকে জেনে নেয়া কোন সোর্স বা কোন উৎস থেকে তিনি এমন খবর পেলেন? কিভাবে নিশ্চিত হলেন এমন নৈরাজ্যকর পরিবেশ হতে পারে? কথার কথা বলে উড়িয়ে দেয়ার সমাজে এমন সব অপব্যাখ্যার গুরুত্ব বুঝতে বুঝতে ঘটে যায় যাবতীয় অঘটন। অথচ এই হলো এখন বিনোদনের খোরাক।
আমরা এখন সিডনিতে কঠিন কঠোর লকডাউনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। এ লেখা যখন লিখছি দিনে হাজারের ওপর রোগী। বাড়ছে সংক্রমণ, আর এই সংক্রমণ ঠেকাতে পারছে না কিছুই। বর্তমানে যে পদ্ধতি নেয়া হয়েছে তা হলো টিকা নেয়ার ব্যাপারে উদ্ধুদ্ধ করা। আশার খবর ব্যাপক হারে টিকা নিচ্ছে মানুষ। বর্তমানে ৬০ শতাংশ মানুষ টিকা নিয়ে ফেলেছেন। এই সেদিন ও বিশ্বে টিকা গ্রহণের ব্যাপারে পিছিয়ে থাকা এই দেশ এখন চলে গেছে শীর্ষ তালিকায়। মানুষ লেখাপড়া জানে আর নিয়ম মানতে বাধ্য । অন্যদিকে সচ্ছলতার কারণে টিকার কমতি নাই। দুয়ে মিলে টার্গেট হিট করার পথে। টার্গেট হচ্ছে আশি শতাংশ। এটা হলেই তারা সবকিছু খুলে দিতে পারবে এমন ধারণা এখন বদ্ধমূল। সরকার মূলত আমেরিকা ইউরোপ এর পথে চলছে।
যে সব বুদ্ধিজীবী নামধারী বাংলাদেশ ও সরকারকে রোজ হেদায়েত করেন তারা এসব বাস্তবতা জানেন না। আর জানলেও মানেন না। এদের একজনও কোন মানুষকে টিকা নিতে নিয়ে গেছেন বা সাহায্য করেছেন এমন শুনেছেন? এরা আছে খালি সমালোচনায়। এই সমালোচক আর অতি আওয়ামী লীগাররাই আজ দেশের সর্বনাশ করছে। আমরা যারা অনেক বছর ধরে সিডনিতে বসবাস করছি এতো আওয়ামী লীগার জীবনে দেখি নাই। এর ওপর যোগ হয়েছে খায়েশ। এরা মনে করে তাঁর পরামর্শ ছাড়া সরকার চলছে কিভাবে? তাদের অনেকেই পেশা বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ওপর সস্তা লেখা সস্তা বই প্রকাশের নেশায় পাগল। আবার এও দেখছি মেধাবী সংগঠক তার নিজের দায় দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা করছেন। জনকের ভাষণ সংকলিত করে দুনিয়াকে জানাতে চাইছেন। এরা তাদের কাজ করবে কিভাবে? নাম যশ আর খ্যাতির পাগলরা ঘিরে আছে বিদেশের বাঙালি সমাজ। মজার ব্যাপার এই সো কল্ড নিরপেক্ষ মিডিয়ার লোকজন প্রমোট করছে এদের। এদের সামপ্রতিক আচরণে আমি এটা বুঝেছি এরা সে প্রাণীর অনুগামী যারা দাঁত গজালে প্রথম কামড় বসায় তাদের মা বাবার পেছনে। এরা ভয়ংকর। এদের মিডিয়ায় আওয়ামী বিরোধীতো বটেই বাম আদর্শের নামে পাগলামি করতে করতে ক্লান্ত দাঁত মুখ খিঁচিয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচককে বিখ্যাত করার প্রচারণার নেপথ্যে আছে আওয়ামী শক্তির বিরোধিতা।
সব মিলিয়ে দেশে বিদেশে অতি উৎসাহী আর কড়া সমালোচনার নামে উগ্রদের জ্বালায় কেউ ভালো কাজ করতেই পারছেন না। তার ভেতরেও চলছে উন্নয়নের রথ। শেখ হাসিনার সরকার থেমে নাই। প্রধানমন্ত্রীর ঘোর বিরোধীও বলতে পারবে না তিনি থেমে থাকেন। কোন সমালোচনা তাঁকে ঠেকাতে পারবে কিভাবে? তিনি তো একাধিকবার মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসা মানবী। প্রকৃতি ও সময় তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই দেশ ও মানুষের কল্যাণে। আজ বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী দুর্ভাবনা ও দু:সময়ের শিকার ছাত্রছাত্রীরা। কবে তাদের স্কুল কলেজ খুলবে আর কবে তাদের লেখাপড়ার জীবন স্বাভাবিক হবে কেউ জানে না। এসব কোমলমতি শিশু কিশোর তরুণ তরুণীরা আজ অসহায়। বাড়িতে থাকতে থাকতে বা স্কুল কলেজে না যেতে যেতে তাদের আচরণও পাল্টে যাচ্ছে। আমাদের দেশে আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল পদ্ধতি চালু না করলে আজ কি হতো? সে কথা কিন্তু সমালোচকেরা বলে না। তারপরও আমরা আশা করি এরা স্কুল কলেজে যাবার অনুমতি পাবে। অচিরেই শুরু হবে স্বাভাবিক পড়ালেখা জীবন। এটার বিকল্প নাই। আমি মনে করি ডা: দীপু মনি ও নওফেলের মতো মেধাবী মন্ত্রীরা নিশ্চয়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এর একটা বিহিত করবেন। তবে একটা কথা বলা দরকার আমি কথা বলে দেখেছি বিভিন্ন স্তরের টিচারদের ভেতর না যেতে যেতে একধরনের অলসতা ও মানসিক ভীতি জন্মে গেছে। তবে এটা ঠিক বেশীরভাগ টিচারেরা সক্রিয়। তারা নানা পদ্ধতিতে ছাত্র ছাত্রীদের সাথে আছেন। সবমিলিয়ে কথা বলার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার কোন বিকল্প নেই। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ জানেন শেখ হাসিনার সরকার কি করছে। শুরু হয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেল। শুরু হয়েছে কক্সবাজারে সমুদ্রে বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ চালু হয়ে গেছে। হয়ে গেছে পদ্মা সেতু। এসব অবকাঠামো এসব উন্নয়ন দেশকে নিয়ে যাবে আরেক উচ্চতায়। সমালোচকেরা কি একবারও ভাবেন না জোশ আর উন্মাদনার রাজনীতি এগুলো চালু রাখতে পারবে না? কোথায় তাদের সেই নেতা বা নেতৃত্ব? তাই মানুষ জানে শেখ হাসিনার বিকল্প নাই। বিকল্প নাই আমাদের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের। যতো বাধা বিপত্তি কিংবা বিরোধিতা থাক শেখ হাসিনাই ধরে আছেন দেশের হাল। তাঁর হাতকে শক্তিশালী করলে আমরা সবাই ভালো থাকবো। দেশে বিদেশে বাংলাদেশের নতুন ভাবমূর্তি আর সম্ভাবনার প্রতীক তিনি। উটকো বঙ্গবন্ধু প্রেমী আর স্বার্থপর মানুষগুলোর বাইরে ভালো মানুষের সমাজ ই বাংলাদেশের শক্তি। তাদের কারণেই এগিয়ে চলেছে স্বদেশ।
লেখক : সিডনি প্রবাসী কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুম্’আর খুতবা
পরবর্তী নিবন্ধসুবিধাবঞ্চিতদের সহযোগিতায় সবাইকে কাজ করতে হবে