দুর্নীতিবিষয়ক সচেতনতা ও চাহিদা আরো বাড়াতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ at ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের এক ধাপ উন্নতি হয়েছে। এবার বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১৩তম, যা গতবার ছিল ১২তম। তবে বিপরীত দিক দিয়ে, অর্থাৎ সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০ দেশের মধ্য এক ধাপ পিছিয়ে হয়েছে ১৪৭তম। গতবার ছিল ১৪৬তম।

বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। অবশ্য দুর্নীতির এই সূচকের মৌলিক বিষয়, অর্থাৎ স্কোরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো অগ্রগতি নেই। ১০০এর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ২৬, যা গতবারও একই ছিল। এমনকি চার বছর ধরে স্কোরটি একই আছে।

দুর্নীতির এই ধারণা সূচকের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি এসব তথ্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের অবস্থান হতাশাজনক। কারণ ১০ বছর ধরে প্রবণতা হলো স্কোরটি এক জায়গায় স্থবির হয়ে আছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী এবারও ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের বিবেচনায় শীর্ষে অবস্থান করছে। আর এবারও দক্ষিণ সুদান সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা দেখানোর রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলেও সেটি ঠিকমতো কার্যকর হচ্ছে না। কারণ, যাঁদের হাতে এই দায়িত্ব, তাঁদের একাংশই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। প্রায় ১০ বছর ধরে একই অবস্থানে থাকার কারণে বলা যায়, দুর্নীতি দমনে দেশের প্রচলিত আইন, চরিত্র বদলাতে কোনো ধর্মীয় অনুশাসন, নেতাদের ভাষণ, উপদেশ এখন আর কাজে আসছে না। আসবে বলে মনে হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আইন কনস্টিটিউশনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কড়া আইন প্রণয়ন করে সমগ্র সিস্টেমকেই বদলাতে পারলে হয়তো কাজ হতে পারে। বিগত অর্ধশত বছর ধরে রাজনীতিবিদদের কৃপায় এবং শিথিল শাসন ব্যবস্থায় এ দেশে দুর্নীতি আষ্টেপৃষ্ঠে গ্রামের পশ্চাদপদ এলাকা থেকে শুরু করে রাজধানী অবধি জড়িয়ে গেছে। সামগ্রিক চারিত্রিক ভ্রষ্টতায় এমন পর্যায়ে আমরা পৌঁছেছি যে, মানবতাবোধ, ধর্মের ভয়, দেশের প্রচলিত আইন, ধর্মীয় নেতাদের বাণী, শিক্ষা পদ্ধতি কিছুই কাজে আসছে না। রাজনীতিবিদদের কল্যাণে আইনের প্রতি লোকের ভয় একেবারে মুছে গেছে। অভিযোগ আছে, প্রতিটি সরকারি কার্যালয়ে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে প্রতিটি টেবিলে ঘুষের রাজত্ব। ঘুষ না দিলে কোনো কাজ হয় না। কোনো কোনো অফিসার তার আরদালি পাঠিয়ে ঘুষের টাকা আদায় করে থাকেন এমন কথা চালু রয়েছে। এই যেখানে পরিস্থিতি তখন অধীনস্থ কর্মচারী তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারকে মানবে কেন। তাই, তারাও ওই পথের পথিক।

এ কথা সত্যি যে, সারা দেশে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুর্নীতিবিষয়ক সচেতনতা ও চাহিদা অনেক বেড়েছে। দুর্নীতি এখন মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান পেয়েছে; গণমাধ্যমে এক বিরাট জায়গা করে নিয়েছে দুর্নীতিবিষয়ক সংবাদ, আলোচনা, মন্তব্য। সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এখন দুর্নীতি প্রতিরোধ। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের অনেক সদস্য ও জনপ্রতিনিধি এবং সরকারের সর্বস্তরের কর্ণধাররা বক্তৃতাবিবৃতিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন। যদিও বাস্তব প্রয়োগ খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়।

এবার যে বাংলাদেশের অবস্থানের এক ধাপ উন্নতি হয়েছে, তাকে আমরা বড় সফলতা হিসেবে গুণতে না পারলেও আগামীতে তার ওপর ভিত্তি করে এগুনো সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি, সরকার ও সরকারের ভেতরে ও বাইরে গণতন্ত্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করলে দুর্নীতি রোধ হবে। জনগণ প্রত্যাশা করে, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর হোক: জনগণ চায় দুর্নীতি যারা করে তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করুক; জনগণ চায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হোক কারো প্রতি ভয় বা করুণা না করে; জনগণ চায় নেতানেত্রীদের আচরণে গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতিফলন ঘটুক, দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হোক ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে। জনগণের এই চাওয়া, এই দাবি যত বেশি জোরালো হবে, দুর্নীতি প্রতিরোধ ততটাই ত্বরান্বিত হবে। আমাদের দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে জিরো টলারেন্স দেখানোর কথা ঘোষণা করেছেন, তার বাস্তবায়ন করা গেলে আমরা অনেক দূর এগোতে পারবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে