দুর্ঘটনা কমলেও সড়কে ফেরেনি শৃঙ্খলা

নিরাপদ সড়ক দিবস আজ, চট্টগ্রামে নানা কর্মসূচি

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২০ at ৮:৫২ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস আজ (২২ অক্টোবর)। মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘মুজিব বর্ষের শপথ, সড়ক করব নিরাপদ’। ২০১৭ সালের ৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই দিনটিকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ঘোষণা করা হয়। চতুর্থবারের মতো দিবসটি পালনের প্রাক্কালে একটি প্রশ্ন জনমনে উঠে এসেছে, সড়ক কতোটা নিরাপদ হয়েছে? বেসরকারি সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা’ এর মতে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুর হার- দুটোই তুলনামূলকভাবে কমেছে। এর কারণ হিসেবে নিসচা, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শফিক আহমেদ সজিব আজাদীকে বলেন, আগে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যেত না। সব দুর্ঘটনা ও হতাহতের হিসাব থানায় লিপিবদ্ধ হত না বা সংবাদপত্রে আসত না। এ কারণে এ বিষয়ক পরিসংখ্যানে সংগঠন ভেদে পার্থক্য দেখা যেত। নিসচা ২০১২ সাল থেকে সড়ক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। নিসচা ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রতি বছর প্রকাশ করা হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা হলে মামলা বা জিডিও করা হচ্ছে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই দুর্ঘটনা তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। সড়ক আইন পাস হয়েছে এক বছর হতে চললো। কিন্তু আইনটি কার্যকরও হচ্ছে না, বাতিলও হচ্ছে না। সজিব বলেন, আমাদের দাবি আইনের কিছু ধারা শিথিল করে হলেও আইনটি কার্যকর করা হোক।
নিসচার জরিপে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসার কথা বলা হলেও এখনো সড়কে ঝরছে প্রাণ। অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং আইনের যথারীতি প্রয়োগ না করাই দুর্ঘটনার কারণ। নিসচাই নয়, অন্যান্য সংগঠনের পর্যবেক্ষণ, সমীক্ষা ও বিভিন্ন গবেষণায় এ কারণগুলোই উল্লেখিত হয়েছে। কারণ জানা থাকার পরও সড়কে প্রাণ ঝরছেই। সড়ক দুর্ঘটনার মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক, যা নির্ণয় করাও কঠিন।
এক হিসাবে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় যারা মৃত্যুবরণ করে, তাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। এই পরিবারগুলো রীতিমত পথে বসে যায়। আহতদেরও অনেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে তাদের পরিবারও বিপন্ন হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আর কাজে আসে না। এতে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, তা অপূরণীয়।
নিসচার প্রতিবেদনে বেশ কিছু দিক উঠে এসেছে, যা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়েছে, পথচারীরা গাড়ি চাপায়, পেছন থেকে ধাক্কাসহ বিভিন্নভাবে দুর্ঘটনায় পড়েছে। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা, চলাচল ও রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, জেব্রা ক্রসিং ও পথচারী পারাপার, আন্ডারপাস ও ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা পথচারী নিহত হওয়ার কারণ।
নিসচার পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমাতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, ট্রাফিক সংকেত মেনে চলা, যততত্র পার্ক না করা, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং বন্ধ করা, সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় স্কুলের পাঠ্য তালিকাভুক্ত করা, গণমাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো, দক্ষ চালক তৈরিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রধান সড়ক-মহাসড়ক চার লেইনে উন্নীত করা এবং সড়কের ত্রুটি দূর করা। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার প্রধানতম কারণ চালকের অদক্ষতা এবং প্রতিযোগিতা প্রবণ মনোভাব, সুতরাং সর্বাগ্রে চালকের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে মানবিক মূল্যবোধ ও ধৈর্যের শিক্ষাও দিতে হবে। সতর্কতা ও সচেতনতার অভাব দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির অন্যতম প্রধান কারণ হওয়ায় পথচারী, যাত্রী, চালক, সবাইকে সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে। গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সবাই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে পথচারী ও যাত্রীদের অধিক সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। তারা সচেতন হলে প্রায় অর্ধেক দুর্ঘটনা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আইনের কার্যকর প্রয়োগ সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গত আগস্ট মাসের ২০ তারিখ থেকে চলতি অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে নগরীতে ৯ জন এবং জেলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ছয় জন।
এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে একাত্ম হয়ে নিসচা চট্টগ্রাম মহানগর কমিটিও সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে জনসচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করছে। আজ বেলা ২টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে নিরাপদ সড়ক চাই চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির উদ্যোগে গাড়ি চালকদের সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে গাড়ি চালক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। নিসচা চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি এস.এম আবু তৈয়বের সভাপতিত্ব এতে প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মাদ খোরশেদ আলম সুজন। বিশেষ অতিথি থাকবেন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মনজুরুল আলম মঞ্জু, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন (বেলাল), বাংলাদেশ জাতীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের (সিলেট-চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলীয় কমিটি) সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে টানা ৬ষ্ঠ মৃত্যুহীন দিন পার
পরবর্তী নিবন্ধ৩৮ লক্ষ টাকা জরিমানা গুণেও ৯ ভবনে জ্বলছিল ২১৫ অবৈধ চুলা