দুর্গম পাহাড়ে সৌর বিদ্যুতের আলো

রাঙামাটি প্রতিনিধি | শনিবার , ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সোলারের আওতায় আনতে কাজ করছে বর্তমান সরকার। পাহাড়ের দুর্গম অঞ্চলের পরিবারকে সোলার হোম সিস্টেম এবং বিভিন্ন পাড়াকেন্দ্র স্টুডেন্টস হোস্টেল, অনাথ আশ্রমগুলোতে সোলার কমিউনিটি সিস্টেম সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ ও স্থাপনের কাজ করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড।

বিগত সময়ে তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম পাহাড়ের মানুষ রাতে ব্যবহার করত কেরোসিনের কুপি আর হারিকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতায় বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলের ঘরে ঘরে জ্বলছে সৌরবাতি। এতে বদলেছে পাহাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা। এ সৌর বিদ্যুতে চলছে কম্পিউটার ইন্টারনেট সার্ভিস, তথ্য সেবা কেন্দ্র, মোবাইল ও টেলিভিশন। যেন সৌরবাতির আলোয় কাটলো দুর্গম পাহাড়ের অন্ধকার। এতে খুশিতে আত্মহারা উপকারভোগীরা।

রাঙামাটির লংগদু, বিলাইছড়ি এবং রাজস্থলী এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যেসব এলাকায় ২০২৫ বছরেও জাতীয় গ্রিড লাইনে বিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব নয়, সেসব এলাকায় বিনামূল্যে সৌর বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পটি ২১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের জুলাই থেকে বাস্তবায়নের কাজ করছে উন্নয়ন বোর্ড। এ বছরের ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পে ৪০ হাজার পরিবার মাঝে ১০০ মেগাওয়াট সোলার হোম সিস্টেম এবং ২৫০০ পাড়া কেন্দ্র, দুর্গম এলাকার স্টুডেন্ট হোস্টেল, অনাথ আশ্রম কেন্দ্র এবং এতিমখানাগুলোতে বিতরণ ও স্থাপন করা হচ্ছে ৩২০ মেগাওয়াট কমিউনিটি সিস্টেম। এছাড়া গত অর্থবছরে তিন পার্বত্য জেলায় ১৫৬০০টি সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ এবং স্থাপন করা হয়েছে। রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের বাসিন্দা হাসান আলী ও রফিক জানান, আগে কেরোসিন দিয়ে কুপি জ্বালিয়ে ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করত। বেশিক্ষণ পড়ালেখা করতে পারত না। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে সোলার প্যানেল সিস্টেম দিয়ে সৌর বিদ্যুতের আলোয় রাত জেগে পড়ালেখা করতে পারছে তারা। এ জন্য তারা বেশ খুশি ও আনন্দিত। আরেক বাসিন্দা জেসমিন আক্তার জানান, সৌর বিদ্যুৎ বা সোলার প্যানেল সিস্টেম পাওয়ায় এলাকার মানুষ খুবই উপকৃত হয়েছে। সৌরবিদ্যুতের আলোতে তারা এখন রাত জেগে সেলাই মেশিনে কাজ করছে।

রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের মিতিঙ্গাছড়ি এলাকার জেবুমনি ত্রিপুরা ও অজয় ত্রিপুরা বলেন, সোলার প্যানেল সিস্টেম বা সৌরবিদ্যুৎ পাওয়ায় তাদের গ্রাম আলোকিত হয়েছে। সবার বাসায় বাতি জ্বলছে, টেলিভিশন দেখতে পারছে এবং ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার সুবিধা হচ্ছে। রাজস্থলী উপজেলার ১ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউপির চেয়ারম্যান রবার্ট ত্রিপুরা বলেন, তাদের গ্রামটি বেশ দুর্গম। সেখানে আগে অন্ধকার ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে সোলার প্যানেল সিস্টেম পাওয়ায় তাদের গ্রাম এখন সোলারে শতকরা ৫০ ভাগ আলোকিত হয়েছে।

বিলাইছড়ি উপজেলার ১২০ তিনকোনীয় মৌজার হেডম্যান লাল এংলিয়ানা পাংখোয়া জানান, পাংখোয়া পাড়ায় ১২০ পরিবারের বসবাস। ১২০ পরিবারের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ১১৫ পরিবারকে বিনামূল্যে সোলার বিতরণ করেছে। সোলারের ফলে দূর হয়েছে তাদের পাড়ার অন্ধকার জীবন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সোলার প্যানেল সিস্টেম প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ হারুনঅররশীদ জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ ২য় পর্যায়ে সোলার প্যানেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। এই প্রকল্পের আওতায় ৪০ হাজার হোম সোলার প্যানেল সিস্টেম এবং ২৫০০ কমিউনিটি সিস্টেম বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এ হোম সিস্টেমটি হলো ১০০ মেগাওয়াট।

এ প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক দুর্গম এলাকা রয়েছে, যেখানে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের যে ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরই আলোকে যেসব এলাকায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ যাবে না, সেসব এলাকায় বিদ্যুতায়ন করতে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসোনাদিয়া থেকে অবৈধ কটেজ সরাতে বেজার নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধচলাচলের রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মাণের চেষ্টা