দুটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের কাজ চলছে পুরোদমে

হালিশহরে ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের প্রথম ক্যাচমেন্ট

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর হালিশহরে ১৬৩ একর জায়গার উপর চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পের দুইটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। ১ লা মার্চ থেকে নগরীতে শুরু হবে পাইপ লাইন বসানোর কাজ। মোট ছয়টি জোন বা ক্যাচমেন্টে চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এসব জোনের মধ্যে বর্তমানে পুরোদমে কাজ চলছে ক্যাচমেন্ট(প্রথম জোনের) হালিশহর এরিয়ায়।

চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি দুই ধাপে কাজ করবে। এর মধ্যে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের আওতায় (এসটিপি) রান্নাঘর, গোসলের পানি সংগ্রহ করা হবে, অন্যটি ফিকেল স্ল্যাজ কালেকশন (এফএসটিপির) আওতায় টয়লেটের বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহকের বাসায় স্যুয়ারেজের পাইপলাইন বসানো হবে। ওই পাইপলাইনের সহায়তায় গৃহস্থালী ও গোসলের ব্যবহার করা পানি সরাসরি ক্যাচমেন্ট এরিয়ার পরিশোধনাগারে চলে যাবে। সেখানে এসব পানি পরিশোধিত হয়ে নদী ও সাগরে গিয়ে পড়বে।

অপরদিকে বাসাবাড়ির বর্জ্য গুলোও পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিশোধনাগার হয়ে নদী ও সাগরে গিয়ে পড়বে। ফলে নগরের কোনো সেপটিক ট্যাংকের প্রয়োজন পড়বে না। একই ভাবে নগরীর ছয়টি ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় পানি পরিশোধনাগার বসানো হবে।

হালিশহরের ১৬৩ একর ভূমিতে ক্যাচমেন্ট১ এর পরিশোধনাগার এরিয়া হিসেবে ধরা হয়েছে। মালয়েশিয়ার কারিগরি প্রতিষ্ঠান জেবিও এরিনকো ক্যাচমেন্ট এরিয়ায় মাঠ পর্যায়ের কার্যাদেশ পায়। এ ক্যাচমেন্ট এরিয়াকে তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে দুটি চীনা ও কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।

গত রবিবার সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের বিশাল এলাকা জুড়ে এখন পুরোদমে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এখন প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫টি পাইলিং হচ্ছে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও স্যুয়ারেজের প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, নগরীতে স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি ছয়টি জোনে ভাগ হয়ে চলবে। এখন ক্যাচমেন্ট(প্রথম জোন) এর কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। মার্চের ১ তারিখ থেকে পাইপ লাইনের কাজ শুরু হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০৩৫ সালের মধ্যে পুরো নগরীকে স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যাচমেন্ট১ এর কাজ শেষ হলে ২০ লাখ মানুষ এর সুবিধা পাবে। এর মধ্যে ১০ লাখ এসটিপি (সরাসরি পাইপলাইন) এবং ১০ লাখ ফিকেল স্ল্যাজ ম্যানেজমেন্টের (বর্জ্য সংগ্রহ) আওতায় আসবে। এর মধ্যে এসটিপি দৈনিক ১০ কোটি লিটার এবং এফএসটিপিতে ৩০০ টন পানি পরিশোধন করা সম্ভব হবে।

প্রকল্প পরিচালক জানান, কারিগরি যাচাইবাছাইয়ের সময় দেখা যায়, নগরের কিছু অলিগলি ছোট ও সরু হওয়ায় ৩০ এলাকায় স্যুয়ারেজের পাইপলাইন স্থাপনের সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে ফিকেল স্ল্যাজ কালেকশনের আওতায় টয়লেটের বর্জ্যসমূহ ভ্যাকুয়াম ট্রাক ও গাড়িতে করে পরিশোধনাগারে নেওয়া হবে। সেখানে পরিশোধনের পর নদী ও সাগরে গিয়ে মিশবে। এছাড়া প্রকল্পের স্বার্থে নগরের বস্তি এলাকার অস্বাস্থ্যকর টয়লেটগুলো পরিচ্ছন্ন রাখা হবে। স্যুয়ারেজ লাইনের সংযোগের ফলে বৃষ্টি ছাড়া ওই এলাকায় ড্রেনে কোনো পানি থাকবে না।

ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের নভেম্বরে ক্যাচমেন্ট১ এর কাজ শুরু হয়। প্রায় ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ৫০ কোটি টাকা দিচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং বাকি টাকা দিবে কোরিয়ান এঙ্মি ব্যাংক। মালেশিয়াভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এরিনকো এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবর্জ্য থেকে হবে জৈব সার ও ডিজেল
পরবর্তী নিবন্ধরকি বড়ুয়াসহ আট জনের বিচার শুরু