দুই সপ্তাহে আট দুর্ঘটনা ৪ প্রাণহানি, আহত ১৭

মহাসড়কের লোহাগাড়া অংশ

লোহাগাড়া প্রতিনিধি | রবিবার , ১৯ জুন, ২০২২ at ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া সীমানায় ব্যাপকহারে বেড়েছে গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে হতাহতের ঘটনা। কেবল চলতি মাসের শেষ পনের দিনে ঘটেছে এমন ৮টি দুর্ঘটনা। এতে ৪ জনের প্রাণহানির পাশাপাশি গুরুতর আহত হয়েছেন ১৭ ব্যক্তি। বিগত কয়েক দিনের সংবাদ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে গত ৩ জুন উপজেলার চুনতিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে পাজেরো গাড়ির ধাক্কায় রাসুলী আসলাম (২৮) নামে এক যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৪ জন।

গত ১২ জুন আমিরাবাদ ইউনিয়নের সিমেন্ট মিক্সার মেশিন বহনকারী গাড়ির সঙ্গে মিনিট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন গুরুতর আহত হন। গত ১৩ জুন সদর ইউনিয়নের পুরাতন থানা গেইটের দক্ষিণ পাশে দুই যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। গত ১৫ জুন পুটিবিলায় অভ্যন্তরীণ সড়কে বেপরোয়া ডাম্পট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিক্সা আরোহী শিশুসহ ২ জন ঘটনাস্থলে নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৪ জন। গত ১৬ জুন মহাসড়কের চুনতিতে দুই যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ১৭ জুন সদর ইউনিয়নের পুরাতন থানা গেট এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে দুই ব্যাটারি চালিত রিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৪ জন আহত হয়েছেন। একইদিন চুনতিতে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী মারুফুল ইসলাম (২২) নামে এক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে নিহত হন। সর্বশেষ গত ১৮ জুন ভোররাতে বটতলী স্টেশনে ট্রাক ও নোয়াহ গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে এক পরিচ্ছন্ন কর্মী গুরতর আহত হয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। এরমধ্যে একইমুখী-বিপরীতমুখী গাড়ির সংঘর্ষ, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক থেকে ছিটকে পড়া, পথচারীকে চাপা দেয়াসহ নানাভাবে ঘটছে এসব দুর্ঘটনা। এতে প্রাণহানির পাশাপাশি বহু মানুষ আহত হচ্ছেন। দুর্ঘটনা বৃদ্ধির পেছনে যেসব কারণ পরিলক্ষিত হয় তাহল- চালকদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, হেল্পারকে দিয়ে গাড়ি চালানো, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, সড়কে চলাচলে পথচারীদের অসতর্কতা, ওভারটেকিং, দীর্ঘক্ষণ বিরতিহীন গাড়ি চালানো, জনবহুল এলাকাসহ দূরপাল্লার সড়কে ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, সড়কের উপর গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করা, অপ্রশস্ত সড়ক, বিপজ্জনক বাঁক, মহাসড়কে ধীর গতির ছোট যানবাহন চলাচল, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে গাড়ি চলাচল, সড়কের দু’পাশে অনেকগুলো হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া প্রতিবছর সংস্কারের ফলে মহাসড়কের দু’পাশে অসমান অংশের দূরত্ব বৃদ্ধিও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়।

নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মোজাহিদ হোসাইন সাগর জানান, গাড়ির মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ রোধে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক প্রশস্ত পূর্বক একমুখী যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া নতুন সমস্যা প্রতিবছর মহাসড়কের মূল অংশের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মহাসড়কের দু’পাশে অসমান অংশের দূরত্বও বাড়ছে। এতে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত সেমিনার, র‌্যালি, লিফলেট বিতরণ করে আসছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া সড়কের বিপজ্জনক স্থানগুলোতে জনসচেতনমূলক বিলবোর্ড লাগানোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাকসুদ আহমদ জানান, বৃষ্টিপাত, অপ্রশস্ত মহাসড়ক, বিপজ্জনক বাঁক, ওভারটেকিং, অপ্রশিক্ষিত চালক, বেপরোয়া গতি ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা চালকদের এই সড়ক সম্পর্কে ধারণা না থাকা ইত্যাদি কারণে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকে। হাইওয়ে থানার উদ্যোগে প্রতি মাসে চালক ও সহকারীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন চলমান আছে। এছাড়া দুর্ঘটনারোধে বিভিন্ন সময় চালকদের মাঝে সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। মহাসড়কে ধীরগতির নিষিদ্ধ গাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানান, পর্যায়ক্রমে মহাসড়কের মূল অংশের সাথে অসমান অংশ মাটি দ্বারা ভরাট করা হবে। এছাড়া মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা, আটক হয়নি কেউ
পরবর্তী নিবন্ধবান্দরবানের সাত উপজেলায় পাহাড় ধসের শঙ্কা