দুই মাসের মধ্যে করতে হবে দক্ষিণ জেলা বিএনপি সম্মেলন

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ

নির্ধারিত সময়ের দুই বছর এক মাস বেশি হলেও আওতাভুক্ত ইউনিটগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি। এতে ক্ষোভ বাড়ছে তৃণমূলে। তারা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় সাংগঠনিক স্থবিরতা চলছে। এ অবস্থায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দক্ষিণ জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে দুই মাস সময় বেধে দিয়েছেন। এছাড়া দ্রুত সময়ে ইউনিট কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন তিনি। দলটির একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানান, ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। নেতৃবৃন্দকে প্রতিটি উপজেলা, থানা ও পৌরসভা এবং দক্ষিণ জেলার কাউন্সিল করার জন্য পরবর্তী তিন মাস সময় বেধে দেয়া হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ২১ অক্টোবর আওতাভুক্ত সকল উপজেলা ও পৌরসভায় বিদ্যমান সাংগঠনিক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান। তবে নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২০২০ সালের ২ জানুয়ারির মধ্যে কাউন্সিল করতে
পারেননি। এমনকি আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা হয়নি।
পরবর্তীতে ওই বছরের (২০২০) শেষ দিন ৯টি এবং গত বছরের মে ও আগস্ট মাসে দুইটি ইউনিটে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত বাকি ইউনিটগুলোতে আহ্বায়ক কমিটি এবং ঘোষিত ১১ ইউনিটে কাউন্সিল বা পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
এ অবস্থায় গত ২৭ জানুয়ারি দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এতে অংশ নেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহ্বুবের রহমান শামীম, দুই সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালালুদ্দিন মজুমদার ও হারুনুর রশিদ, আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বৈঠকে দক্ষিণ জেলার দুই নেতার কাছে নির্ধারিত সময়ে জেলা সম্মেলন কেন করতে পারেনি তার ব্যাখ্যা চান তারেক রহমান। এছাড়া চারটি ইউনিটে কমিটি না করার কারণও জানতে চান। এসময় তারেক রহমান এক মাসের মধ্যে সবগুলো ইউনিটে সম্মেলন এবং জেলা সম্মেলন করার নির্দেশনা দেন। তখন আবু সুফিয়ান ও মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, এক মাসের মধ্যে সম্ভব হবে না। তারা দেড় মাসের মধ্যে ইউনিট কমিটি গঠন সম্ভব হবে বলে আশ্বস্ত করেন। পরবর্তীতে দুই মাসের মধ্যে জেলা সম্মেলন করার সময় বেধে দেয়া হয়।
বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে মাহ্বুবের রহমান শামীম দৈনিক আজাদীকে বলেন, জেলা সম্মেলন করতে হবে। তার আগে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পৌরসভা, উপজেলা ও থানায় সম্মেলন করা হবে। এসব বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এ প্রসঙ্গে আবু সুফিয়ান বলেন, বিগত সময়ে আমরা কী করেছি তা তুলে ধরেছি। যেসব ইউনিট বাকি আছে সেগুলো এক-দেড় মাসের মধ্যে করতে পারব বলে জানিয়েছি। এরপর জেলা সম্মেলন করব। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে তারেক রহমান কোনো অসন্তোষ প্রকাশ করেননি বলেও জানান তিনি। ইউনিয়ন সম্মেলন শুরু হয়েছে। সামনে থানার ডেট দিব।
তারেক রহমান কী নির্দেশনা দিয়েছেন জানতে চাইলে মোস্তাক আহমেদ খান বলেন, আওতাভুক্ত সবগুলো ইউনিট পূর্ণাঙ্গ করতে বলেছেন। এজন্য আমাদের কোনো সময় বেধে দেননি। তবে দুই মাসের মধ্যে করতে বলেছেন। কাউন্সিল করতে বিলম্বের কারণ হিসেবে বলেছি, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর বোয়লাখালী-চান্দগাঁও আসনে উপ-নির্বাচন হয়েছিল। এরপর করোনার জন্য দীর্ঘদিন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল। তাছাড়া দক্ষিণে সাংগঠনিক জটিলতা ছিল। বোয়ালখালী ছাড়া বাকি থানা ও পৌরসভায় দুটি করে কমিটি ছিল। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে সময় লেগেছে। তবে এখন আর সমস্যা হবে না। ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ডগুলোর কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে।
জানা গেছে, দক্ষিণ জেলার আওতায় ১৫টি ইউনিট আছে। এগুলো হচ্ছে- বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসভা, চন্দনাইশ উপজেলা ও পৌরসভা, লোহাগড়া উপজেলা, বোয়ালখালী উপজেলা ও পৌরসভা, পটিয়া উপজেলা ও পৌরসভা, সাতকানিয়া উপজেলা ও পৌরসভা, উত্তর সাতকানিয়া, আনোয়ারা উপজেলা, দোহাজারী পৌরসভা এবং কর্ণফুলী থানা। এর মধ্যে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ৯ ইউনিটে তথা বোয়ালখালী উপজেলা ও পৌরসভা, পটিয়া উপজেলা ও পৌরসভা, চন্দনাইশ উপজেলা ও পৌরসভা, লোহাগড়া উপজেলা এবং বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসভায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এসব ইউনিটে সংগঠনের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খানের যৌথ স্বাক্ষর ছিল। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি সাতটি ইউনিটে (বাঁশখালী উপজেলা ও পৌরসভা, বোয়ালখালী উপজেলা ও পৌরসভা, চন্দনাইশ উপজেলা ও পৌরসভা এবং লোহাগাড়া উপজেলা) পাল্টা কমিটি ঘোষণা করে যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস। অবশ্য পাল্টা কমিটি ঘোষণার জের ধরে একই বছরের ১০ জানুয়ারি আলী আব্বাস এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও লিয়াকত আলীকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২৪ মে দোহাজারী এবং ১৫ আগস্ট গঠন করা হয় কর্ণফুলী উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে সন্ত্রাসী আস্তানায় র‍্যাবের অভিযান, চলছে গুলি বিনিময়
পরবর্তী নিবন্ধহালিশহরে প্রতিপক্ষের হামলায় কিশোর আহত, আটক ৪