দুই মাসেও উদ্যোগ নেই যমুনার

তেল চুরি রোধে বিপিসির চিঠি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৩১ মে, ২০২১ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) পক্ষ থেকে তেল চুরিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়ার দুই মাসেও কোন উদ্যোগ নেয়নি যমুনা অয়েল কোম্পানি। তবে যমুনা অয়েল কোম্পানি বলছে, বিষয়টি একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। গত বছরের ২৩ এপ্রিল যমুনা অয়েলের রাজশাহী ডিপোতে এ তেল চুরির ঘটনা ঘটে। ওইদিন ডিপো ইনচার্জসহ আরও দুইজন হাতেনাতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন।
জানা যায়, রাজশাহী ডিপোতে গত বছরের ২৩ এপ্রিল রেলহেড থেকে তেল চুরি করে ট্যাংকার ট্রাকে ঢোকানো হচ্ছিল। খবর পেয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনী যমুনা অয়েল কোম্পানির রাজশাহী ডিপো ইনচার্জ আমজাদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এসময় পাঁচ হাজার লিটার তেলভর্তি একটি ট্যাংক লরিও জব্দ করা হয়। ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় পরবর্তীতে জামিনে আসেন আমজাদ। বর্তমানে তিনি সাময়িক বরখাস্ত হয়ে চট্টগ্রাম প্রধান কার্যালয়ে যুক্ত রয়েছেন । এর দুই বছর আগে চিলমারী ডিপোতে তেল চুরির অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে চিলমারী বার্জ ডিপোতে ৪ লাখ লিটার তেল গায়েবের অভিযোগ উঠার পর দিনে দিনে তেলের মূল্য আদায় করে অভিযোগটি ধামাচাপা দেয়া হয়। পরবর্তীতে বিপিসির তদন্তে প্রায় ২০ হাজার লিটার তেল কম পাওয়া গেলে আমজাদ হোসেনের কাছ থেকে ওই তেলের ক্ষতিপূরণ আদায়সহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৩ এপ্রিল রাজশাহী ডিপোতে আবারো তেল চুরির সময় আটক হওয়ার পর ডিপো ইনচার্জ আমজাদ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে যমুনা অয়েল কোম্পানি। পরবর্তীতে ঘটনা তদন্তে বিপিসির সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) আবু হানিফ ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) জাহিদ হোসনকে দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি ৭টি সুপারিশসহ বিপিসি সচিবের কাছে ৬০ পাতার প্রতিবেদন দাখিল করে।
তদন্ত কমিটির সুপারিশে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল চিলমারী বার্জ ডিপোতে সংঘটিত তেল চুরির অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন মোতাবেক এক বছরের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা হয় এবং ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়। এতদসত্ত্বেও তিনি পুনরায় রাজশাহী রেলহেড ডিপোতে একই ধরণের অপরাধ করায় এবং প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা হিসেবে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা যেতে পারে। আমজাদ হোসেনের সহযোগী হিসেবে রাজশাহী রেলহেড ডিপোর অস্থায়ী কর্মচারী আশফাকুল আলম, মো. মুকুল আলী, আবদুল লতিফ, মো. জিয়া ও রানা মহন্তের বিরুদ্ধে কোম্পানির বিধি মোতাবেক শাস্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। রাজশাহী রেলহেড ডিপোতে ২০২০ সালের এপ্রিলে সংগঠিত অপরাধের ৪ মাস পরে আগস্টে বিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ করা সমীচীন হয়নি। এ ধরণের বিভাগীয় তদন্তে বিলম্বের বিষয়ে জেওসিএলকে সতর্ক করা যেতে পারে। রাজশাহী রেলহেড ডিপোতে স্থায়ী স্টোরেজ ট্যাংক না থাকায় জ্বালানি তেল চুরির ঝুঁকি থেকে যায়। এ ধরনের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য রাজশাহী ডিপোতে স্থায়ী স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। জেওসিএল-এ অভ্যন্তরীণ বদলি, পদায়ন, বিভাগীয় শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে নথি ব্যবস্থাপনা আরো উন্নত করার নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে। ডিপো অপারেশনের সাথে দক্ষতা ও নৈতিকতার বিষয়টি গভীরভাবে সম্পৃক্ত বিধায় কোন কর্মকর্তা কোন ডিপোতে কর্মরত অবস্থায় অনৈতিক কাজে জড়িত প্রমাণিত হলে পরবর্তীতে তাঁকে অন্য ডিপোতে বদলি ও পদায়ন থেকে বিরত রাখা যেতে পারে। রাজশাহী রেলহেড ডিপোতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কর্মকর্তা পদায়ন করতে হবে। পাশাপাশি জনবল সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিকে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর গত ২৪ মার্চ ডিপোতে তেল চুরির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিপিসি চেয়ারম্যানের নির্দেশে যমুনা অয়েল কোম্পানিকে চিঠি দেয় বিপিসির সচিব লাল হোসেন। এ চিঠির দুই মাস পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি যমুনা অয়েল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমজাদ হোসেন অফিস সহকারী মর্যাদার একজন কর্মচারী। তিনি স্বাক্ষর দেয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নন। কিন্তু যোগসাজশের মাধ্যমে তাকে ডিপো ম্যানেজারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তার স্বাক্ষরে তেল সরবরাহ হয়। গত তিন বছরে দুই ডিপোতে দুই বার তেল চুরিতে ধরা পড়েন তিনি।’
বিপিসির চিঠির বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে যমুনা অয়েল কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (এইচআর, ফাইনান্স এন্ড একাউন্টস) মো. মাসুদ করিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাসানচর ও উখিয়ায় যাচ্ছেন আজ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আরও ৫ মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৮২