দুই ডোজ টিকায় ৬ মাস পরও অ্যান্টিবডি

সিভাসুর গবেষণা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

কোভিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পরেও ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরে উপস্থিত থাকার প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) গবেষকরা।
সম্প্রতি সিভাসুর ওয়ান হেলথ ইন্সটিটিউট সার্স-কোভ-২ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বিস্তার নির্ণয়ের জন্য গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, রোগীর স্বজন, আউটডোর ও ইনডোর রোগী (কোভিড আক্রান্ত নয় এমন), পরিচ্ছন্নতা কর্মী এবং পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মধ্যে কোভিড উপসর্গযুক্ত, অথবা উপসর্গহীন প্রথম ডোজ টিকা ও উভয় ডোজ টিকাপ্রাপ্ত মোট ৭৪৬ জনের ওপর গবেষণাটি চালানো হয়েছে। গবেষণার সময়কাল ছিল চলতি বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
সিভাসুর উপাচার্য অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষণায় প্রধান ছিলেন ওয়ান হেলথ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী। এছাড়া সহকারী প্রধান গবেষক ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ হাসান চৌধুরী। সহকারী গবেষক হিসেবে আরো ছিলেন ডা. জাহান আরা, ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. তারেক উল কাদের, ডা. আনান দাশ, ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ডা. ইয়াসির হাসিব, ডা. তাজরিনা রহমান এবং ইন্টার্ন ডা. সীমান্ত দাশ।
গবেষণায় গবেষক দল সেরোপজিটিভিটি (রক্তে সার্স-কোভ-২ এর এন্টিবডির উপস্থিতি) সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করেন। এটি মূলত এন্টিবডির উপস্থিতি ও পরিমাণ এনজাইম লিঙ্কড ইমিউনিটিসরবেন্ট অ্যাসেই (এলিসা) টেস্টের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণকারী মোট ৭৪৬ জনের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ জনগোষ্ঠী (২২৩ জন) কোভিড-১৯ টিকার শুধু মাত্র প্রথম ডোজ নিয়েছেন। উভয় ডোজ নিয়েছেন প্রায় ৩১ শতাংশ (২৩১ জন)। এছাড়া টিকা গ্রহণ করেননি জনগোষ্ঠীর ৩৯ দশমিক ১৪ শতাংশ (২৯২জন)। গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য হলো-গবেষণায় অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কত শতাংশে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে তা তুলে ধরা।
দেখা গেছে-প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৩৩ শতাংশের দেহে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। অপরদিকে উভয় ডোজ টিকা গ্রহণকারী জনগোষ্ঠীর ৯৯ দশমিক ১৩ শতাংশের মধ্যে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়েছে। অথচ যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেননি তাদের মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশের দেহে প্রাকৃতিকভাবে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। সুতরাং এই গবেষণালব্ধ ফল কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবেলায় দেশে চলমান টিকা প্রদান কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা ও সফলতাকে আলোকপাত করে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যারা টিকা নেনটি করেননি তাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে গড়ে ৫৩.৭১ ডিইউ/ মিলির অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এছাড়া যারা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের শরীরে যারা নেননি তাদের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি এন্টিবডি (১৫৯.০৮ ডিইউ/ মিলি) তৈরি হয়েছে। আবার যারা দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন তাদের প্রায় শরীরে পাঁচ গুণ এন্টিবডি টাইটার (২৫৫.৪৬ ডিইউ/ মিলি) পাওয়া গেছে। অপরদিকে প্রথম ডোজ গ্রহণের পর প্রথম মাসে গড়ে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি টাইটার দেহে বিদ্যমান থাকে (১৭৫.১ ডিইউ/ মিলি) তার প্রায় ২৫ শতাংশ হ্রাস পায় দ্বিতীয় মাসে এসে। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর অ্যান্টিবডির পরিমাণ গড় সময়ের সাথে হ্রাস পাওয়ার প্রবণতায় ভিন্নতা দেখা যায়। কোভিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করার দুই মাসের মধ্যে গড়ে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি টাইটার থাকে (৩২৪.৪২ ডিইউ/ মিলি) চতুর্থ মাসে এসে তার প্রায় ২১ শতাংশ টাইটার হ্রাস পায়। কিন্তু ষষ্ঠ মাসে এসে তা চতুর্থ মাসের মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হ্রাস পায়। সুতরাং এই গবেষণায় একটি বিষয় প্রতীয়মান হয় যে, কোভিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পরেও কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিবডি শরীরে উপস্থিত থাকে।
উল্লেখ্য, শরীরে নির্দিষ্ট কোন রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে কিনা, সেটি পরীক্ষা করার জন্য শরীরের রক্তের নমুনা নিয়ে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে কেউ করোনা ভাইরাস বা অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা সেটা বুঝা যায়। কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের পর মানব দেহে এন্টিবডি তৈরি হয়। যদিও একেক জনের দেহে একেক রকম হারে অ্যান্টিবডির পরিমাণ পরিবর্তিত হয়। এছাড়া কোভিড-১৯ টিকা নেয়ার মাধ্যমে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসঞ্চয়পত্রে কমেছে মুনাফা
পরবর্তী নিবন্ধপ্লট বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে : মেয়র