দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র এবং সরকার ঘোষিত বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছেড়েছে।
গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দুইটার থেকে ভোর রাত পর্যন্ত মা মাছ নদীর বিভিন্ন স্থানে ডিম ছাড়ে।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে বারোটার দিকে নদীতে নগণ্য পরিমাণ ডিমের নুমনা পাওয়া যায়।
পরদিন বুধবার দুপুর বারোটার দিকে পুনরায় ২য় দফা নমুনা পাওয়া যায়। ডিম ছাড়ার পূর্ব আলামত এ নমুনা।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বুধবার দিবাগত রাতে যে পরিমাণ ডিম ছেড়েছে তা গত বছরের তুলনায় কম। এতে করে ডিম আহরণকারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নিদের্শনা অনুসারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, নৌ পুলিশের তৎপরতা, হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য এবং মিঠা পানির ডলফিন রক্ষায় নানামুখী কার্যক্রম এবং নদী দূষণের ব্যাপারে সবসময় অভিযান অব্যাহত ছিল।
নদী থেকে মাছ চুরির ঘটনা শনাক্ত করতে মদুনাঘাট থেকে আমতুয়া পর্যন্ত ৮টি পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
তাছাড়া নদী থেকে বালু উত্তোলন, ড্রেজার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা বন্ধের পরও আশানুরুপ ডিম না পাওয়ায় ডিম আহরণকারীসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর প্রকোপের কারণে হালদা নদীতে লবণাক্ত পানি মিশ্রিত হওয়ায় মা মাছ নদীতে কম ডিম ছেড়েছে বলে উল্লেখ করেন হালদা গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা।
তবে ২০২০ সালের ২২ মে নদী থেকে ২৮০টি নৌকার মাধ্যমে ৬শ ১৫ জন ডিম আহরণকারী ২৫ হাজার ৫শ ৩৬ কেজি ডিম আহরণ করেছিল।
সেই বছরও ঘূর্ণিঝড় আম্ফান-এর পর পর নদীতে ডিম ছাড়া হয়েছিল। এরপরও নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ডিম পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেছিলেন এবার নদীতে মাছের মজুদবৃদ্ধি ও প্রশাসন, এনজিও সংস্থা আইডিএফ, জনপ্রতিনিধিদের ব্যাপক তৎপরতার কারণে অধিক সংখ্যক ডিম পাওয়া যাবে।
সেজন্য এবার নদীতে প্রায় সাড়ে ৩শ নৌকা, প্রয়োজনীয় লোকবলসহ ডিম সংগ্রহের সরঞ্জাম নিয়ে ডিম আহরণকারীরা অবস্থান নিয়েছিলেন।
সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে জুন মাস নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়ে থাকে। এর মধ্যে তিনটি তিথি/জো চলে যায়। এবার পূর্ণিমার জো থাকায় মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনার কথা বলে আসছিল সংশ্লিষ্টরা।
সেই তথ্যনুযায়ী গত মঙ্গলবার মধ্যরাত ও বুধবার দুপুরে দুই দফা নমুনা ডিম পাওয়া যায়। বুধবার মধ্যরাত থেকে মা মাছ নদীতে ডিম ছাড়তে শুরু করে ভোররাত পর্যন্ত ডিম ছাড়ার সময় ডিম সংগ্রহকারীরা নদী থেকে ডিম আহরণ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে হালদার পাড়ে দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলা ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে কর্ণফুলী, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, চেংখালী, সোনাইখাল, কুমারখালী, বোয়ালিয়া, সর্ত্তাখালসহ বিভিন্ন নদী, খাল ও ছড়া থেকে মা মাছ হালদা নদীতে ছুটে আসে ডিম ছাড়তে।
পরিবেশ অনুকূল থাকলে চৈত্র, বৈশাখ মাসের অমাবস্যা, অষ্টমী ও পূর্ণিমা তিথির জোতে হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়ে কিন্তু এবার বাংলা বছরের চৈত্র বৈশাখ মাসে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি হয়নি।
যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে এ বৃষ্টি হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত খাল ও ছড়ায় ঢল সৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। এমনকি নদীর উপরিভাগ থেকেও বৃষ্টিতে ঢলের প্রকোপ দেখা দেয়নি। ঢলের প্রকোপ না থাকায় হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েনি।