দামের উর্ধ্বগতি : সংকটে সাধারণ মানুষ

লালন কান্তি দাশ | সোমবার , ১৪ মার্চ, ২০২২ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

এবারের ফাগুনে মানুষের মনে আগুন লেগেছে কিনা জানি না,তবে দ্রব্যমূল্যের বাজারে ঠিকই আগুন লেগেছে। সে আগুনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ঘরে ঘরে। পণ্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। বাড়িভাড়া, পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসা, তেল,
গ্যাস, ভোগ্যপণ্য সহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে দু’একটা দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি যৌক্তিক হলেও প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক ঘটনা।এতে বাজার পরিস্থিতির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি না থাকার বিষয়টি আরো স্পষ্ট। মানুষ আয়ের সাথে ব্যয়ের হিসাবে মিলাতে হিমশিম খাচ্ছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে বিপরীতে মান কমছে।টিসিবির পণ্য ক্রয়ের জন্য মানুষের লাইনের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।নতুন করে পানি, গ্যাস- বিদ্যুৎতের দাম বাড়ানোর আভাস মিলছে।সারাবিশ্বে রমজান মাসে জিনিসের দাম কমে আর এদেশে বাড়ে।এমনটি হলে নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম আরেকদফা বাড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই।এদেশের বাজার সংস্কৃতি হচ্ছে, কোন কিছুর দাম একবার বাড়লে তা আর কমে না।এক শ্রেণির অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি বা সিন্ডিকেট তৈরি করে ইচ্ছেমত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে। বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলের মূল্য কমলে ও এদেশের বাজারে তার কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়েনা। এমনিতেই করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন,অনেকের আয়ের পথ সংকুচিত হয়েছে।এমতাবস্থায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
এ দুঃসহ অবস্থা থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমদানী, পাইকারি ও খুচরা বাজারে তদারকি বাড়াতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংরক্ষণ, সরবরাহ ও বণ্টনের অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে। মজুতদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের পরিসর বাড়াতে হবে। মানুষের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে। মাথাপিছু আয় বা সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলে সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। মাথাপিছু আয় মূলত গড় হিসাব। কিছু মানুষের আয় ব্যাপক বৃদ্ধি পেলেও সাধারণ মানুষের উপর এর তেমন প্রভাব নেই।সাধারণ মানুষের আয় বাড়লেও মূল্যস্ফীতি তা খেয়ে ফেলে। মানুষ যাতে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসত্য কেবল বিশ্বাস
পরবর্তী নিবন্ধআসল সুখ