তৃতীয় নয়নে চট্টগ্রাম!

এমরান হোসাইন | শনিবার , ১ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ

শেষপাতা ঝরে গেল এবছর আমি আর আসবো না। আগামী ফাগুনে জানালায় দাঁড়িয়ে আমার প্রতিক্ষা করো। কবিতার বইয়ে পাতা গুঁজে জানালায় দেখি নতুন সূর্য। ভোরের মিষ্টি আলোয় পুরো ঘর আলোকিত। দুহাজার বাইশ এলো। একুশ ছিল বিষাদে ভরা। অনেক আপনজনকে হারিয়েছি। তাই ভাবছিলাম যত তাড়াতাড়ি বিদায় দিয়ে নতুনকে জায়গা করে দিই। বছরজুড়ে কি এক অদ্ভুত রহস্যঘেরা মহামারী পৃথিবীর গতি থামিয়ে দিল। এখন সময় ‘ওয়েক আপ কল’ এর! তবুও মানুষ নিরন্তর ছুটছে ভালবাসা-ভাললাগার পেছনে। একসময় ছিল বছরের শেষদিনের অপেক্ষায় প্রিয় মানুষদের জন্য নিজহাতে বানানো পাখা, ভালবাসায় সিক্ত বালিশের কাভারে লেখা সেই নাম। দোয়াত-কালি দিয়ে লেখা নানা রংয়ের কার্ড। তারপর দিন শেষে অফুরন্ত ভালবাসা নিয়ে বাড়ি ফেরা। ভালবাসার ফেরিওয়ালা চন্ডিদাশ মাছ ধরার ছলে পুকুরে বড়শি ফেলে ১২ বছর পর রজকিনীর দেখা মেলে। সেই অমর প্রেমের একযুগ পূর্তির অপেক্ষা আর নেই। এখন মাত্র তিনসেকেন্ডে একাধিক প্রেমের অফার দেয়া যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রোগ্রামসহ নানা সংযোগে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এখন আর সেদিনের ভাললাগা নেই, বছরের শেষদিনে ফাস্টফুড রেষ্টুরেন্টে আড্ডা, বাড়ির ছাদে বারবি-কিউ , নানা ব্রান্ডের মোবাইলে যে যার মত করে লাইক-ডিসলাইকে মেতে ওঠে। একদল উন্মত্ত যুবকের হিংস্র থাবায় প্রকৃতির কোলে ঠাঁই নেই নিরেট ভালবাসার। ভাললাগার অন্যতম সৈকত শহর কঙবাজারে নারী-শিশুদের যৌন হয়রানি থেকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসনকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করতে হচ্ছে। পুরুষ মাইকিং করছেন সংরক্ষিত এলাকায় পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধের। কয়েক ঘন্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত বদলে আবার সব ওপেন সিক্রেট। অদ্ভুত এক ভাল লাগার জায়গাকে বিচারের কাঠ গড়ায় দেখে চোখের জলে সিক্ত হাজারো পযটক। তবুও থেমে নেই নতুন বছরে বুকভরা আশা।
প্রযুক্তির লাগামহীন দৌরাত্ম্যে লণ্ডভণ্ড আজ সমাজসংস্কৃতি। দুনিয়াজুড়ে দেশীয় সীমানায় সৈন্য সমাবেশ করেও তেমন ফায়দা হবে না। চোখের পলকে সাই করে সৈন্যের ঘাড়ে এসে পড়বে দৈত্য-দানবের মত নতুন স্পাইডার ম্যান। কি এক যুগে আমরা আজ হাবুডুবু খাচ্ছি। আর্টফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিবৃত্তির ঘেরাটোপে রোবোটিক সভ্যতার উত্থানে অন্য এক পৃথিবীর স্বাদ নেবে পৃথিবীর মানুষ। এ দৌড়ে যারা যোগ্য তারাই একদম ফিট। ধেয়ে আসছে এক ছুটে চলার পৃথিবী। এ মেরাথনে লাল সবুজের বাংলাদেশ কেমন হবে। আজ হতে শতবর্ষ পরে আমার প্রিয় চট্টগ্রাম শহরকে স্মার্ট মনে হবে তো। ভাবতে মনটা নেচে ওঠে। ছেলেবেলার চট্টগ্রাম অনেক এগিয়ে এখন। চক্ষু চড়ক গাছ- অবাক করা উন্নয়ন। ইচ্ছে করছিলো- পুরো দেশের চিত্র না হউক অন্তত একটি শহরকে আদর্শ শহর হিসেবে গড়ে তুললে কতই না ভাল হতো। এক্ষেত্রে হাইপোথিসিস ধরলাম চট্টগ্রাম শহরকে। চট্টগ্রাম শহর মানে সুন্দর-মনোরম এক নগরী। চট্টগ্রামের মানুষ পৃথিবীর যেখানে থাকুক না কেন- এখনো নবাবী এ শহরকে নিয়ে গর্ব করে থাকেন। এতিহ্যের এ শহরকে নিয়ে পৃষ্ঠার-পর লিখে শেষ করা যাবেনা। তবে চট্টগ্রামকে নিয়ে নানা কাজের মধ্যে দৈনিক আজাদীর যুগান্তকারী প্রকাশনা ‘হাজার বছরের চট্টগ্রাম’ এক অনবদ্য সৃষ্টি। এর প্রতিটি পৃষ্ঠা যেন জীবন্ত চট্টগ্রাম। আদিকাল থেকে সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের শহর চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র বলে সমাদৃত হয়ে আসছে। ফলে সবার জন্য ব্রান্ডিং চিটাগাংয়ের তকমা লাগানো এ শহরটি বারবার স্মার্ট শহর হয়ে উঠার চেষ্টা করেছে। অথচ একটি আদর্শ নগরীর হাঁটাচলার ফুটপাত দেখলে পুরো নগরচিত্র হাতের মুঠোয় চলে আসে। হাজার বছরের নান্দনিক এ শহরের প্রতিটি সড়ক-ওলি-গলিতে রয়েছে ঐতিহ্যের ছাপ। প্রাকৃতিকভাবে বিশ্বমানের গড়ে ওঠা এ শহরে ন্যূনতম ফুটপাতের দেখা মিলবে না। যা একটি আদর্শ শহরের অন্যতম উপাদান। দখল-বেদখলের চাপে জনসাধারণের হাঁটাচলা দায়। সত্তরের দশকে একমাত্র আগ্রাবাদ চৌমুহনী এগারতলা বিল্ডিং নগরের একমাত্র বড় দালান। ছেলেবেলায় এ বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় উপরে উঠার স্বাদ ছিল। ধীরে ধীরে দৃশ্যপট পাল্টে যেতে শুরু হল। বর্তমানে শহরের সবচেয়ে বড় আগ্রাবাদে ২৫তলা মক্কা-মদিনা টাওয়ার। এছাড়া নগরজুড়ে রয়েছে ৫ শতাধিক আবাসিক বাণিজ্যিক দালান যেন এক-একটি গ্রাম। নাগরিক সুবিধার সবটুকুন পেতে আর কত পথ হাঁটতে হবে নগরবসীর। আর কত ঢাকামুখী আবেদন, সেমিনার-সেম্পুজিয়াম। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো ভৌগোলিক অবয়ব নিয়ে স্রেফ মানেচিত্রে শোভা পাওয়া চট্টগ্রাম নয়!

লেখক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধহে নতুন, তোমায় স্বাগতম!
পরবর্তী নিবন্ধহ্যাপি নিউ ইয়ার