তীব্র গরমে মানুষের মধ্যেই যে কেবল হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয়, তা নয়। একই অবস্থা তৈরি হয় সাপের ক্ষেত্রেও। দাবদাহে বিষাক্ত সাপও সক্রিয় হয়ে ওঠে। সাপ নিয়ে কাজ করে এমন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ বলছে, দেশে বর্তমানে যে দাবদাহ চলছে তাতে সাপের প্রাদুর্ভাব বাড়ার আশংকা রয়েছে। এ সময়ে মানুষকে সতর্ক থাকার কথাও বলছে সংগঠনটি। খবর বিবিসি বাংলার।
সংগঠনটির সহ–সভাপতি মো. জোবাইদুর রহমান বলেন, তারা বেশ কয়েকবছর যাবত সাপে কাটা নিয়ে সচেতনতা তৈরি এবং সাপ উদ্ধারে কাজ করছেন। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ এর তুলনায় এবার সাপে কাটার প্রবণতাও বেশি দেখা যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিবারের কাছ থেকে কল পান। এছাড়া সাপ উদ্ধারের জন্যও তাদের কাছে ফোন আসে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি বিদ্যার অধ্যাপক অধ্যাপক মনিরুল খান বলেন, সাপ ঠাণ্ডা রক্তের প্রাণি। গ্রীষ্মকালে সাপ বেশি সক্রিয় থাকে এবং শীতকালে কম সক্রিয় থাকে। আমাদের দেশের কথা চিন্তা করলে ডিসেম্বর–জানুয়ারি মাসের কয়েক সপ্তাহ বাদ দিলে, সাপ সাধারণত পুরো বছর সক্রিয় থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এমোরি ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক সাপের আচরণের সাথে গরমের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণায় তারা বলেছেন, তাপমাত্রা শূন্য দশমিক আট ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়লে সাপের কাটার হার ছয় শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বাইরের তাপমাত্রা সাপের শরীরের তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে। এর ফলে তাদের আচরণও পরিবর্তন হয়।
সাপ তীব্র ঠাণ্ডাও সহ্য পারে না। তখন তারা চলে যায় গর্তের ভেতরে। অন্যদিকে, তীব্র গরমও এড়িয়ে চলে সাপ। তাপমাত্রা যখন তীব্র হয় তখন সাপ খুব ভোরে, সন্ধ্যায় এবং রাতে চলাচল করে। তখন তারা খাবারের জন্য সক্রিয় হয়। গবেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমের সময় সাপ ছায়া, অন্ধকার, আর্দ্রতা ও খাবার খোঁজে। সাপ নিজেকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য আর্দ্র পরিবেশ খোঁজে। সেজন্য অনেক সময় তারা মানুষের ঘরের আশপাশে চলে আসতে পারে। যেসব বাসায় এ ধরণের পরিবেশ থাকে সেখানে সাপের আনাগোনা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটাই স্বাভাবিক। এ ধরণের পরিবেশ না থাকলে সেখানে সাপ আসার সম্ভাবনা খুবই কম। সাপ খোলামেলা জায়গায় এবং উন্মুক্ত অবস্থানে থাকতে খুবই অপছন্দ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সারাবিশ্বে অসংক্রামক রোগের মধ্যে সাপের কামড়ে মৃত্যু বিষয়টি এখনো বেশ উপেক্ষিত আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৪৫ থেকে ৫৫ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। এর মধ্যে ৮০ হাজার থেকে ১লাখ ৪০ হাজারের মতো মানুষ মারা যায় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ধারণা করছে।
২০২৩ সালে প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় চার লাখ তিন হাজার মানুষ সর্প দংশনের শিকার হয় এবং তাদের মধ্যে সাত হাজার ৫১১ জন প্রতি বছর মারা যায়।