তিন মাসে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার ৫৬ সাংবাদিক

আসকের প্রতিবেদন | শনিবার , ১ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ৫৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, মামলা, হুমকি ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছেন বলে তথ্য দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল প্রকাশিত তিন মাসের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত’ প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছে আসক। দশটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন সংবাদমাধ্যম এবং আসকের ‘নিজস্ব সূত্র’ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

 

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, জোরপূর্বক অপহরণ ও নিখোঁজ, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে বাধা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।

এই সময়ের আলোচিত কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা হামলামামলার শিকার হচ্ছেন। বিশেষত প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে বুধবার ভোর রাতে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং দিনভর

তাকে আটকের ঘটনা সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায়োগিক আচরণ যে অসঙ্গত ও বেআইনি তা প্রতীয়মান হয়েছে। এ ধরনের নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণের অভিযোগ সাতক্ষীরায় কর্মরত সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁকে আটকের সময়ও পুলিশের বিরুদ্ধে উঠেছিল। রঘুনাথকে আটকের পর পুলিশ দিনভর অস্বীকার করে, প্রায় নয় ঘণ্টা পর তাকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

বহুল আলোচিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সে বিষয়টি তুলে ধরে আসক বলছে, এ ধরনের মামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সঙ্কুচিত করবে এবং সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করবে।

স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাপক আলোচনাসমালোচনা হয়, যেখানে একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।

ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গত বুধবার ভোরে তার সাভারের বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। পুলিশ তাকে আটক বা গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার না করলেও প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সকালে তাকে আদালতে হাজির করে পরে কারাগারে পাঠানো হয়। এর মধ্যে এক যুবলীগ

নেতা এবং একজন আইনজীবী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করেন শামসের বিরুদ্ধে, যাতে ‘মিথ্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে রাষ্ট্রের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার’ অভিযোগ আনা হয়। এর একটি মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকেও আসামি করা হয়েছে।

আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, এর আগে আইনমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পদস্থ ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা নেওয়ার আগে বিশেষ সতর্কতা বজায় রাখার যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তার প্রতিফলন এসব ঘটনায় দেখা যাচ্ছে না। বরং উচ্চ পদস্থ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রথম আলোর

প্রতিবেদক এবং সম্পাদক সম্পর্কে নানা মন্তব্য এ ধরনের মামলা দায়ের করতে অতি উৎসাহীদের অনুপ্রাণিত করছে বলে মনে হচ্ছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘন : ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত’ প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছরের প্রথম তিন মাসে পাঁচটি ঘটনায় হিন্দু সমপ্রদায়ের তিনটি বাড়িঘরসহ একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ১৫টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সমপ্রদায়ের ওপর

হামলার ঘটনায় আহমদিয়া সমপ্রদায়ের একজন নিহত ও কমপক্ষে ৬২ জন আহত হয়েছেন। ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে’ কমপক্ষে ১০৩টি বাড়ির ২৫৯টি ঘরে হামলা চালিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। ৩৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন মাসে দেশের জাতীয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ৩ জন নিহত হয়েছেন। গত তিন মাসে ১০৫ জন নারী ও পুরুষ ‘যৌন হয়রানি কেন্দ্রিক সহিংসতার’ শিকার হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ে যৌন হয়রানির কারণে আটজন নারী আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটেদের হাতে ২ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১২৪ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১২ জন নারীকে। এই সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন

স্থানে ৩৫৩ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। সীমান্তে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে এই সময়ে ৫ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত এবং আরও ৬ জন আহত হয়েছেন। কারা হেফাজতে মারা গেছেন ২৬ জন, তাদের মধ্যে ১১ জন কয়েদি এবং ১৫ জন হাজতি।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের হাতে শিক্ষার্থীদের ‘নির্যাতন ও নিপীড়নের’ কয়েকটি ঘটনাও তুলে ধরেছে আসক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘সবাই মিলে বাংলাদেশ’ ও বিদ্যানন্দের ইফতার
পরবর্তী নিবন্ধনবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সাথে এমপি নদভীর সৌজন্য সাক্ষাৎ