তাৎপর্যময় মহান বুদ্ধ পূর্ণিমা

লিপি বড়ুয়া | রবিবার , ১৫ মে, ২০২২ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

ত্রি স্মৃতি বিজড়িত বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় উৎসব। এই বুদ্ধ পূর্ণিমা তিথিতে মহাকারুনিক তথাগত সম্যক সমবুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ এবং মহাপরিনির্বাণ ঘটে। বৌদ্ধ ধর্ম প্রাচীনতম ধর্ম সমূহের অন্যতম। সিদ্ধার্থ গৌতম এর প্রবর্তক। খ্রীস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে তাঁর শিক্ষা ও উপদেশকে কেন্দ্র করে এই ধর্মের উদ্ভব ঘটে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় উৎসব উদযাপিত হয় যেমন বৈশাখী পূর্ণিমা, জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমা, আষাঢ়ী পূর্ণিমা, মধু পূর্ণিমা, প্রবারণা পূর্ণিমা, মাঘী পূর্ণিমা, ফাল্গুনী পূর্ণিমা তাঁর মধ্যে যে পূর্ণিমাটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে তা হলো বৈশাখী পূর্ণিমা অর্থাৎ মহান ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’।
৫৬৩ খ্রীস্টাব্দের এই দিনেই কুমার সিদ্ধার্থ কপিলাবস্তুর লুম্বিনী কাননে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের সাথে সাথেই তিনি হেঁটেছিলেন। প্রস্ফুটিত সপ্ত পদ্মে পা রেখে তর্জনী উুঁচিয়ে বলেছিলেন আমি আর্য্য, আমি শ্রেষ্ঠ!
তাঁর পিতার নাম শুদ্ধোধন এবং মাতার নাম মহামায়া। মাত্র ২৯ বছর বয়সে কুমার সিদ্ধার্থ দুঃখ মুক্তির উপায় অনুসন্ধানের জন্য রাজপ্রাসাদের সমস্ত সুখ ঐশ্বর্য্য ত্যাগ করেন। স্ত্রী, পুত্র, সাংসারিক মায়া মোহ কিছুই তাঁহাকে রুধিতে পারেনি। তিনি ছয় বৎসর কঠোর সাধনার পর ৩৫ বছর বয়সে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে অর্থাৎ বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন বুদ্ধগয়ার অশ্বথ বৃক্ষমূলে বোধিজ্ঞান বা বুদ্ধত্ব লাভ করেন। দশবিধ পারমী, দশবিধ উপপারমী, দশবিধ পরমার্থ পারমী সর্বমোট ত্রিশটি পারমী পূরণ করে তিনি বুদ্ধত্বজ্ঞান লাভ করেন। যেমনঃ দান, শীল, নৈষ্কর্ম, প্রজ্ঞা, বীর্য্য, ক্ষমা, সত্য, অধিষ্ঠান, মৈত্রী, ও উপেক্ষা এই দশটি পারমী পূরণ করে তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করে জগতের সকলের কাছে ভগবান সম্যক সম্বুদ্ধ হিসেবে আবির্ভূত হন। মানবের কল্যাণে দিকে দিকে ছড়িয়ে দেন তাঁর সেই অমিয় বাণী। ‘অহিংসা পরম ধর্ম’। ‘সর্বজীবে করো দয়া’। ৮০ বছর বয়সে ভগবান সম্যক সম্বুদ্ধ কুশীনগরস্থ মল্লগণের শালোদ্যানে যমকশাল তরুর মধ্যস্থলে উত্তর শীর্ষ হয়ে প্রত্যুষে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন মহান বৈশাখী পূর্ণিমা তিথি অর্থাৎ বুদ্ধ পূর্ণিমায়। তাই আমাদের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই ত্রিস্মৃতি বিজরিত মহান ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’ বিশেষ তাৎপর্যময় এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন সমস্ত বিহারে বিহারে পূজা, উপাসনা করা হয়। শীল, সমাধি, প্রজ্ঞার মাধ্যমে অতীব শ্রদ্ধার সাথে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটি বিশেষভাবে পালন করে থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবুদ্ধ পূর্ণিমার জয়গান
পরবর্তী নিবন্ধএমিলি ডিকিনসন: নির্জনতার কবি