তবুও শহর ছাড়ছে মানুষ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১০ মে, ২০২১ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

ঈদ মানে আনন্দ। স্বজনের সঙ্গে উদযাপনের মধ্য দিয়েই পূর্ণতা পায় এ আনন্দ। আপনজনের সঙ্গে নিজের খুশি ভাগাভাগি করে নিতে তাই প্রতি ঈদে নগর ছাড়েন কয়েক লাখ মানুষ। এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত সবাই। বলবৎ আছে দূরপাল্লার গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা। আছে চলার পথে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। এরপরও ঈদ আনন্দের হাওয়ায় ভাসা মানুষের ছুটে চলা থেমে নেই। যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন নাড়ির টানে।
ঈদের ছুটি শুরু হবে আগামী বুধবার থেকে। শনিবার পর্যন্ত টানা চারদিন বন্ধ থাকবে সরকারি অফিস-আদালত। আজ সোমবার পবিত্র শবে কদরের ছুটি। এর সঙ্গে মিলিয়ে অনেকে আগামীকাল মঙ্গলবারও ছুটি নিয়েছেন কর্মস্থল থেকে। ফলে তারা সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা ছয়দিন ছুটি ভোগ করবেন। দীর্ঘ এ ছুটি পেয়ে উতলা হয়ে উঠেছেন ইট-কংক্রিটের শহরে সচ্ছল জীবনের স্বপ্নে বন্দি থাকা লোকগুলো। তাই পথের বিপদ, সরকারি নিষেধাজ্ঞা কিংবা করোনার ভীতি কিছুতেই শঙ্কিত নন তারা। সবুজ গ্রামের উদার প্রকৃতি এবং বিশুদ্ধ বাতাসের হাতছানি উতলা হৃদয়কে যেন আরো বেশি উস্কে দিয়েছে লম্বা ছুটি। তাই আপনজনের সঙ্গে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে রীতিমতো পণ করেছেন তারা। ফলাফল, গ্রামেও করোনায় সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাকে আমলে নিচ্ছেন না ঘরমুখো লোকগুলো। সড়কপথে শহরের প্রবেশ ও বের হওয়ার প্রধান স্পটগুলোতে গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে গ্রামমুখী মানুষের জটলা। কর্ণফুলী শাহ আমানত ব্রিজ, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, অক্সিজেন মোড় এবং সিটি গেট সবখানে ভিড় লেগে ছিল। শাহ আমানত ব্রিজ থেকে বিভিন্ন পরিবহন সার্ভিসের দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। অবশ্য বেশিরভাগ পরিবহনে সরকারের নির্দেশনা মেনে এক সিট খালি রেখেই যাত্রী বসতে দেখা গেছে। লকডাউনের মধ্যেও জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলাচলের সুবিধা দিয়ে গত ৫ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছিল, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল পূর্বের মতো বন্ধ থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় সুযোগ থাকায় শহর থেকে উপজেলায় গণপরিবহন চলাচল করছে। নগরে বসবাসরত মীরসরাই, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, রাঙ্গুনিয়া, ফটিছড়িসহ দূরের উপজেলার লোকজনের বাড়ি ফিরতে সমস্যা হচ্ছে না।
এদিকে কিছু বাস সরাসরি কঙবাজার যাচ্ছে। এর বাইরে শাহ আমানত ব্রিজ গোল চত্বর থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো যাচ্ছে বাঁশখালী হয়ে কঙবাজার জেলার পেকুয়ার টৈটং পর্যন্ত। সেখান থেকে সিএনজিতে করে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছেন। ফেনী, কুমিল্লামুখী লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মীরসরাই পর্যন্ত যেসব গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে সেগুলো ফেনী পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। আবার ফেনী থেকে যাচ্ছেন কুমিল্লা। অনেক সময় মীরসরাই থেকে সিএনজি করে ফেনী যাচ্ছেন তারা।
গতকাল বিকেলে নতুন ব্রিজ এলাকায় একটি পরিবহন সার্ভিসের টিকেট কাউন্টারের সামনে কথা হয় আবদুল আজিজের সঙ্গে। জানালেন, একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়ি কঙবাজারের চকরিয়ায়। বাড়ি থেকে এসেছেন প্রায় আট মাস আগে। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি বাড়ি যাবেন। আজ স্ত্রী ও সন্তানকে বাসে তুলে দিতে এসেছেন। করোনার মধ্যে কেন বাড়ি যাওয়া? এমন প্রশ্নে বললেন, গত বছর দুই ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি। গতবার তো ঈদের আমেজ ছিলই না। এবার শেষ পর্যন্ত সরকার শপিংমল খুলে দিয়েছে। শহরের মধ্যে গণপরিবহন চলছে। দেখে মনে হচ্ছে, সবকিছু স্বাভাবিক। অন্যরা যাচ্ছেন। তাই আমিও যাচ্ছি।
এদিকে নতুন ব্রিজ থেকে মাইক্রোবাসও লোকাল ভাড়া নিয়ে যাচ্ছে। সিটি গেট ও নতুন ব্রিজ থেকে কিছু কিছু মিনি ট্রাকে করেও যাত্রীদের যেতে দেখা গেছে। এছাড়া কাপ্তাই রাস্তার মাথায় দেখে গেছে, কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা পর্যন্ত সিএনজি টেঙি ছেড়ে যাচ্ছে।
ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার লোকজন মাইক্রোবাস ও কার রিজার্ভ করে যাচ্ছেন গ্রামে। এক্ষেত্রে একই এলাকার লোকজন সম্মিলিতভাবে ভাড়া করছেন। এর বাইরে যাদের সাধ্য আছে তারা বিমানে করে ঢাকা হয়ে ছুটছেন প্রিয়জনের কাছে। অর্থাৎ যে যেভাবে পারছেন ঈদকে কেন্দ্র করে শহর ছাড়ছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে অস্ত্রসহ তিন যুবক গ্রেফতার