ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজন পরিচ্ছন্ন পরিবেশ

| রবিবার , ১২ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ

নানানকম দুঃসময়ের মধ্যে চলছে আমাদের জীবনযাত্রা। অতিক্রম করছি ক্রান্তিকাল। দুই বছর ধরে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতায় সকলের জীবনে ঘটেছে ছন্দপতন। জীবনযাত্রা হয়েছে বিপন্ন-বিপর্যস্ত। এই করোনা-দুর্যোগের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু। রাজধানীর পর চট্টগ্রামেও ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জনমনে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। গতকাল ১১ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে ‘এবার ডেঙ্গুর কবলে চট্টগ্রাম’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, ‘রাজধানী ঢাকার পর এবার ডেঙ্গুর কবলে পড়েছে চট্টগ্রামও। বিশেষ করে গত মাস দেড়েক ধরে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের হার উদ্বেগজনক। শেষ ৩৬ দিনে মহানগরসহ চট্টগ্রামে ২৭২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সংখ্যার দিক দিয়ে যা গত দশ মাসে শনাক্তের সমান। চলতি বছরের দশ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর পর্যন্ত) মোট ২৭৮ জন রোগী শনাক্ত হয়। কিন্তু গত নভেম্বর ও চলতি ডিসেম্বরের ৬ দিনে (মোট ৩৬ দিনে) ২৭২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত (৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫০ জনে। আর আক্রান্তদের মাঝে এ পর্যন্ত মোট ৮ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।’
বিয়ষটি নিয়ে চট্টগ্রামের আপামর জনসাধারণ যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনি চিন্তিত খোদ স্বাস্থ্য বিভাগও। প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, উদ্বেগের কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি আজাদীকে বলেন, হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এটি এলার্মিং বলে আমরাও মনে করছি। বিষয়টি অবগত করে আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছি। আর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকেও এ চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন। এদিকে, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও ডেঙ্গুর চিকিৎসায় সার্বিকভাবে প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, আক্রান্তদের চিকিৎসার প্রস্তুতি হিসেবে বেশ কয়েক মাস আগেই মেডিসিনের তিনটি ওয়ার্ডে আলাদা ডেঙ্গু কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানেই আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ২০ জন রোগী এখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমাদের চিকিৎসক-নার্সরা আগে থেকেই চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। রোগী বাড়লেও পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে বলে এর প্রতিকারে কোনো ওষুধ কার্যকর নয়। এই ডেঙ্গুতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার একেবারে অযৌক্তিক। জ্বর ও ব্যথা-বেদনার জন্য সচরাচর অ্যাসপিরিন প্রয়োগের বিধান থাকলেও ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন ব্যবহার নিষিদ্ধ। কারণ অ্যাসপিরিন ও আইবোপ্রুফেন জাতীয় ওষুধগুলো রক্তক্ষরণের প্রবণতা ও মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে পারে। আমাদের মনে রাখা উচিত, সব রোগে ওষুধের প্রয়োজন হয় না। বরং কোনো কোনো রোগের বেলায় ওষুধ প্রয়োগ করলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে এবং প্রচুর পানীয় পান করতে দেওয়া উচিত। মশা ম্যালেরিয়ার বাহক। আবার মশা ডেঙ্গু ভাইরাসেরও বাহক। শুধু এডিস মশা কেন, সব মশাই আমাদের শত্রু, সব মশাই আমাদের টার্গেট। ম্যালেরিয়ার মশা, ডেঙ্গুর মশা- সব নির্বংশ করতেই হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে এই ভাইরাস অন্য সুস্থ লোকের দেহে সংক্রমিত করে এডিস মশা। তাই সংক্রমণ বন্ধ বা প্রতিরোধ করার জন্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করা অতি জরুরি। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে না কামড়ালে এবং মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন না করলে তার কামড়ে ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা নেই। মশা কোথায় জন্মায়, কীভাবে এর বংশ বিস্তার ঘটে- এসব আমরা অনেকেই জানি। মশার প্রজনন জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে পানিসমৃদ্ধ ড্রাম, মাটির ভাঙা হাঁড়ি-পাতিল বা তার ভগ্নাবশেষ, বিভিন্ন ছোট-বড় পাত্র, বালতি, ফুলের টব, ফুলদানি, পরিত্যক্ত বোতল, টায়ার, পলিথিন ব্যাগ, ছোট-বড় গর্ত, নালা বা পুকুর ইত্যাদি। এ জন্য প্রয়োজনমতো মশার ওষুধ ছিটাতে হবে। পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যকেও বিরত রাখতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সব উদ্যোগ-আয়োজন শুরু হয় সমস্যা দেখা দিলে, তার আগে নয়। ডেঙ্গু নির্মূলে সমাজের সবার অংশগ্রহণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথাও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ সহজ হবে না। জনগণের অংশগ্রহণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা কীভাবে এবং কোথায় জন্ম নেয়- এসব বিষয়ে নগরবাসীকে বিভিন্নভাবে সচেতন করা দরকার। মানুষ যদি সচেতন হয়ে এসব বিষয়ে নজর দেয় তাহলে এডিস মশা নির্মূল করা পুরোপুরি সম্ভব না হলেও নিয়ন্ত্রণ করে সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধকেনিয়ার জাতীয় দিবস