ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ইন্তেকাল

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ১২ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর নেই। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহিরাজিউন)। সোমবার থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে রেখে গেছেন।

স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হুমায়ন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা হাছিনা বেগম চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। মাবাবার ১০ সন্তানের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সবার বড়। তার স্ত্রী শিরীন হক একজন বিশিষ্ট নারী নেত্রী।

নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত কিছুদিন ধরে হাসপাতালে ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর তার লিভারেও সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া তিনি অপুষ্টিসহ সেপটিসেমিয়ায় আক্রান্ত বলে চিকিৎসকরা জানান। গত ৩ এপ্রিল নগর হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল। গত রোববার তার শারীরিক অব্‌স্থার উন্নতি না হলে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। অবস্থার অবনতি না ঘটল তাকে সোমবার নেওয়া হয়েছিল লাইফ সাপোর্টে। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে মেডিকেল বোর্ড বসে তার রক্তে সংক্রমণ পাওয়ার কথাও জানায়। তবে দুপুরে তার কিডনি ডায়ালাইসিস শুরু করা হয়েছিল। এরপর রাতেই এল মৃত্যুর খবর।

ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণের পর তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬৭ সালে বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনসএ এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ নাকরে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপরে ডা. এম এ মবিনের সাথে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। তিনি সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন যা দিয়ে তারা রোগীদের সেবা করতেন এবং তার এই অভূতপূর্ব সেবাপদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার ল্যানসেট‘-এ প্রকাশিত হয়।

স্বাধীনতার পর মেলাঘরের সেই ফিল্ড হাসপাতালকে ঢাকার ইস্কাটনে নিয়ে আসেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী, পরে গ্রামকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুরূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘চল গ্রামে যাই’ এই স্লোগান নিয়ে হাসপাতালটি সাভারে স্থানান্তরিত হয়। তখন এর নামকরণ হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। স্বাধীনতার পর নারীর ক্ষমতায়নে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রায় অর্ধেক কর্মী নেওয়া হয়েছিল নারীদের মধ্য থেকে। ১৯৭৯ সাল থেকে জাতীয় শিক্ষা কমিটির ও নারী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৮২ সালে প্রণীত জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়নে অবদান রয়েছে তার। দুটি কিডনি নষ্ট হওয়ার পরও নানা সঙ্কটে সমাধান খুঁজতে ছুটে বেড়িয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

১৯৭৭ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এশিয়ার নোবেল পুরস্কার হিসাবে পরিচিত ‘র‌্যামন ম্যাগসাইসাই’ পুরস্কার তিনি পান ১৯৮৫ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি ইউনিভার্সিটি ২০০২ সালে তাকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো’ হিসেবে সম্মাননা দেয়। খুবই সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী; কোনো দলে যুক্ত না হলেও রাজনীতি সচেতন এই ব্যক্তি বলতেন– ‘আমি মানুষের রাজনীতি করি।’

তথ্যমন্ত্রীর শোক : ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, একাত্তরে ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়ন ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলে কম খরচে দরিদ্রদের চিকিৎসা সেবায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান স্মরণীয় থাকবে।

বিএনপি নেতৃবৃন্দের শোক : ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারা জীবন দেশ ও মানুষের কল্যানে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে সাবেক এমপি মজহারুল হক শাহ চৌধুরী চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেষ দিনের টিকেট কিনতে চাপ
পরবর্তী নিবন্ধডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ব্লিংকেনের উদ্বেগ