ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে কমে কিডনি রোগের ঝুঁকি

ইমপেরিয়াল হাসপাতালে বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বক্তারা

| শুক্রবার , ১২ মার্চ, ২০২১ at ৯:৩০ পূর্বাহ্ণ

কিডনি রোগ মানবজাতির পঞ্চম মৃত্যুর কারণ। এ রোগের প্রধান দুটি কারণ ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ। যথাযথ নিয়মে এই দুই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে কিডনি রোগের সংখ্যা অনেকাংশে কমে যায় বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামস্থ ৪০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক এবং বহুমুখী বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র ইমপেরিয়াল হাসপাতাল লি. (আইএইচএল) এ বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে চিকিৎসকগণ এমন মন্তব্য করেন। প্রতি বছর মার্চের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার দিবসটি পালিত হয়। ‘কিডনি রোগে সুস্থ থাকুন’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে ইমপেরিয়াল হাসপাতালে দিবসটি পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইমপেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন। কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার দত্তের সভাপতিত্বে ও একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর ডা. আরিফ উদ্দিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. তারেক আল নাসির, ডা. শওকত আজাদ, ডা. সত্যজিৎ রায়।
বক্তারা বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার রোগী দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বে কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশ্বের জনগোষ্ঠীর প্রতি ১০ জনে একজন কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি বছর ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় ও ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন মানুষ আকস্মিক কিডনি রোগে মারা যায়।
সেমিনারে বক্তারা কিডনি সুস্থ রাখতে এবং কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সুষম খাদ্যগ্রহণ, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও ধূমপান পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
চিকিৎসকগণ বলেন, এ রোগে আক্রান্তদের একসময় সম্পূর্ণ কিডনি বিকল হয়ে যায়। তখন ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজন ছাড়া বাঁচার উপায় থাকে না। এ দুটো চিকিৎসা পদ্ধতিই অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অথচ বিশ্বের অনেক দেশেই মানসম্মত কিডনি রোগ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। আমাদের দেশেও কিডনি রোগের চিকিৎসার সুযোগ সীমিত।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ উল্লেখ করেন, কিডনি রোগের উৎপত্তি ও এর ক্রমাগত কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়া প্রায় ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় রোধ করা যেতে পারে। কিডনি রোগ প্রতিরোধে তিনটি স্তরে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। প্রথম স্তরে প্রাথমিকভাবে কিডনি রোগের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর নজর দিতে হবে এবং কিডনি, মূত্রনালি, মূত্রথলি ও প্রস্রাবের রাস্তার কাঠামোগত ত্রুটির চিকিৎসা করতে হবে। কিডনি-ক্ষতিকারক কোনো ওষুধের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। দ্বিতীয় স্তর অর্থাৎ কিডনি রোগের প্রধান দুটি কারণ ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ১০ বছর পূর্বে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর হার ছিল ৫-৬ ভাগ; বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১-১২ ভাগ। উচ্চ রক্তচাপের হার ছিল ১০ ভাগ এবং এখন তা ২০-২৫ ভাগ। বর্ধিত হারে এই দুই রোগের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর কিডনি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তৃতীয় স্তর অর্থাৎ যারা ধীরগতির কিডনি রোগের চিকিৎসায় আছেন এবং শতকরা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কিডনি কাজ করছে না; তাদের ক্ষেত্রে কিডনি অকেজো রোগের জটিলতা, বিশেষ করে হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের জটিলতা থেকে প্রতিকারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসম্মাননা পেলেন দশ পেশাজীবী নারী
পরবর্তী নিবন্ধনারীদের পিছিয়ে রেখে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে না